×

জাতীয়

চারটি শূন্য আসনে নৌকার কাণ্ডারি কে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২০, ০৯:২৪ এএম

দেড় বছরে শূন্য হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদের ১৩টি আসন। ৯টির উপনির্বাচন হয়েছে। তফসিল ঘোষণা হয়নি ৪টির। এই চারটি আসনের উপনির্বাচনে নৌকার কাণ্ডারি হতে চলছে আগ্রহীদের দৌড়ঝাঁপ। হাইকমান্ডে ধরনার পাশাপাশি করোনার মধ্যেও ছুটছেন ভোটারদের কাছে। সিরাজগঞ্জ-১ আসনে মোহাম্মদ নাসিমের পুত্র তানভীর শাকিল জয়ের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানা গেছে। ওই আসনে দলের আর কোনো প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন না। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৮ আসনে পরবর্তী নৌকার প্রার্থী কে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। পারিবারিক বিরোধে কপাল পুড়তে পারে পাবনা-৪ আসনের প্রয়াত সাংসদ সামশুর রহমান ডিলুর পরিবারের। আর ঢাকা-৫ আসনে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। আ. লীগ বলছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও তফসিল হলেই ৪ উপনির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে শূন্য হয় সিরাজগঞ্জ-১ আসন। ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ওই আসনে বিজয়ী হন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১/১১ সরকারের মামলায় নির্বাচনে অযোগ্য হলে ছেলে তানভীর শাকিল জয় দলীয় মনোনয়নে বিজয়ী হন। উপনির্বাচনে জয়ই মনোনয়ন পাচ্ছেন তা অনেকটাই নিশ্চিত। সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম বলেন, জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও মোহাম্মদ নাসিমের যোগ্য উত্তরসূরী প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়ের বিকল্প নেই। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর কাছে গ্রহণযোগ্য, সাধারণ মানুষেরও পছন্দ। তারভীর শাকিল জয় ভোরের কাগজকে বলেন, বাবার মৃত্যুর পর এবং তার আগে থেকেই দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত আমাদের পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছেন, সান্ত¡না দিয়েছেন। আমার সঙ্গেও তার কয়েক দফা কথা হয়েছে। তিনি আমাদের অভিভাবক। আমাদের পরিবারের পাশে আছেন। তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এ ব্যাপারে নেত্রী এবং দলের সিদ্ধান্তই আমার ও আমাদের পরিবারের সিদ্ধান্ত। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ জুলাই মারা যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ঢাকা-১৮ আসনের সাংসদ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন। ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা ৩ বার এখান থেকে নির্বাচিত হন তিনি। এবার তার আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন যুবমহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান, খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এস এম তোফাজ্জল হোসেন। তবে এই আসনে বিজিএমইএ অথবা এফবিসিসিআইয়ের সাবেক কোনো নেতাকেও মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। সাবেক ভ‚মিমন্ত্রী সামশুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যুতে পাবনা-৪ (ইশ^রদী-আটঘড়িয়া) আসনটি শূন্য হয়। ওই আসন থেকে ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮-২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ৫ বার নির্বাচিত হন তিনি। আমৃত্যু পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ডিলুর পরিবারে আগে থেকেই জামাতা ও মেয়েসহ তার স্ত্রী ও ছেলেদের বিরোধ রয়েছে। গত নির্বাচনে ডিলুর সঙ্গে বিরোধে জামাই ইশ^রদী পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ও মেয়ে মাহজেবিন শিরিন পিয়া মনোনয়ন ফরম তুলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডিলুকেই মনোনয়ন দেয়া হয়। এবারো তারা মনোনয়ন চাইবেন। ডিলুর ছেলেরাও বাবার আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। কিন্তু পারিবারিক বিরোধে শেষ পর্যন্ত ডিলু পরিবার মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারে। এছাড়া বিকল্প অনেকেই মনোনয়ন পেতে তৎপর। আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য পাঞ্জাব আলী বিশ^াস, সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট রবিউল আলম বুদু, ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম লিটন, পৌর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান স্বপন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুজ্জামান বিশ^াস, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম রবি। তবে রবিউল আলম বুদু এবং পাঞ্জাব আলী বিশ^াসের সম্ভাবনা বেশি বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। ঢাকা-৫ আসনের সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যু হয় ৬ মে। এখান থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন তিনি। উপনির্বাচনে নৌকা পেতে তৎপর অনেক নেতাই। করোনাকালেও তারা ছুটছেন বিভিন্ন এলাকায়। ত্রাণ দিচ্ছেন, বৃক্ষরোপণ করছেন। টেলিফোনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথমে হাবিবুর রহমান মোল্লা ও যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে মনোনয়ন দেয়া হয়। পরে হাবিবুর রহমান মোল্লাকে চ‚ড়ান্তভাবে প্রার্থী করা হয়। কাজী মনিরুল ইসলাম মনু এবারো প্রার্থী। মনু বলেন, গত নির্বাচনে নেত্রীর নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। মোল্লা সাহেবের সঙ্গে কাজ করেছি। এবার আশাবাদী নেত্রী আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। আরেক শক্তিশালী প্রার্থী যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না। তিনি বলেন, ৯০-এর দশক থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়। বৃহত্তর ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক। আমি আশাবাদী দল ও নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। মনোনয়ন দৌড়ে আছেন প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল। তিনি ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সজল বলেন, বাবা এই এলাকার মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছ থেকে শিখেছি কীভাবে দল ও মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। আমার বিশ^াস দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। বাবার মতোই মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এছাড়া দল ও জোটের মনোনয়ন পেতে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য নেহরীন মোস্তফা দিশি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ ও ১৪ দলের শরিক জাসদ ঢাকা মহানগর (পূর্ব) সভাপতি শহিদুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন কমিশন সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও ঢাকার ২টি শূন্য আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেনি। তফসিল ঘোষণা হলেই আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে বলা হবে। এরপর দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থিতা চ‚ড়ান্ত করা হবে। অন্য উপনির্বাচনগুলোর মতো এই ৪টি নির্বাচনেও আমাদের পার্টির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App