×

সারাদেশ

ঘরে ঘরে বন্যা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২০, ০৮:০৬ পিএম

ঘরে ঘরে বন্যা

পানি লোকালয়ে ঢুকে এখন ঘরে ঘরে বন্যা। ছবি: তৈয়বুর রহমান।

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি সামান্য কমলেও  ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। দীর্ঘ তিন সপ্তাহ ধরে বাড়ি-ঘর বানের পানিতে তলিয়ে থাকায় নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলগুলোর প্রায় ৩ লক্ষাধিক বানভাসী মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ত্রাণ স্বল্পতার কারণে চরম খাদ্য সংকটের মুখে পড়েছে এসব বন্যা দুর্গত মানুষ।

টিউবওয়েল গুলো পানির নীচে  থাকায়  গোটা চরাঞ্চল জুড়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে । দুর্গত এলাকাগুলোতে গবাদিপশুর খাদ্য সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। দিন যতই যাচ্ছে পরিস্থিতির ততোই অবনতি হচ্ছে। আজ শনিবার দুপুরে  কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম ও পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান উলিপুর উপজেলার সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাহেবের আলগা ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় ৫৫০ জন বানভাসি মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এসময় উলিপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার আব্দুল কাদের ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজউদ্দৌলা তাদের সাথে ছিলেন।

এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে উলিপুরে দুই শিশু ও চিলমারীতে এক গ্রাম পুলিশের সলিল সমাধি হয়েছে।

শনিবার দুপুরে উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ও হাতিয়া ইউনিয়নে বানের পানিতে ডুবে ওই দুই শিশুর মৃত্যু হয়। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে উপজেলার ব্রহ্মপূত্র নদের দুর্গম চরাঞ্চল সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর বাগুয়া গ্রামের মোন্তাজুল ইসলামের শিশু পুত্র বায়েজিদ ইসলাম(৮) সবার অগোচরে বন্যার পানিতে পড়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন শিশুটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা হয়।

অপরদিকে, ওইদিন দুপুরে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চিড়াখাওয়ার পাড় এলাকায় বাবু মিয়ার বাড়িতে বেড়াতে এসে মুন্নি খাতুন নামের দেড় বছরের এক শিশু বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের চর গোড়াইপিয়ার গ্রামের বকুল মিয়ার কন্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য কমলেও চিলমারী উপজেলা সদরসহ থানাহাট, রানীগঞ্জ ও রমনা ইউনিয়নের ১৭ গ্রামের মানুষ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে আসা পানিতে নিদারুণ কষ্টের মুখে পড়েছে। এসব মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে রেললাইন ও মহাসড়কের পাশে পলিথিন ও ত্রিফল দিয়ে ঝুপড়ি তুলে আছে। সেখানে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে নিদারুণ কষ্টের মুখে পড়েছে তারা।

বানের পানিতে ডুবে এক গ্রাম পুলিশের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই গ্রাম পুলিশের নাম সুরজ্জামান মিয়া (৫৫)। তিনি চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের বালাবাড়ি কিসামতবানু  গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দুপুরে বাড়ির সামনের বিলে বানের পানিতে তলিয়ে থাকা পাটের জাগ খুঁজতে গিয়ে সে ডুবে মারা যায়। মৃত সুরুজ্জান মিয়া চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশ হিসেবে কর্মরত ছিল।

চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো: হাবিবুর রহমান জানান, গত ২০ জুন থেকে এ পর্যন্ত কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩ জনই শিশু।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, এ পর্যন্ত কুড়িগ্রামের বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১৭০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ টাকা, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সাথে সাথে রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙ্গন তীব্র হয়ে উঠছে বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App