×

সারাদেশ

হাওরে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২০, ০৩:০৬ পিএম

হাওরে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

পানির জন্য অপেক্ষা। ছবি: প্রতিনিধি

হাওরে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন হাওরবাসী। ছবি: প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বিপাকে পড়েছেন হাওরের মানুষরা। একদিকে বাড়িঘরে বন্যার পানি অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানির সংকট। টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। হাওর এলাকায় পানি ও নলকূপগুলো বন্যায় ডুবে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি উপজেলায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে তা সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করে। প্রতি বছর হাওরে এই সময় পানি থাকার কথা থাকলেও এবার পানির পরিমাণ বেশি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যা হওয়ায় হাওর এলাকার মানুষের জীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের এলাকাগুলো থেকে পানি দ্রুত নামলেও হাওরের পানি নামছে ধীর গতিতে। যার কারণে হাওর এলাকার মানুষের মাঝে খাবার সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। এছাড়াও তাহিরপুর উপজেলার মল্লিকপুর, রামজীবনপুর, মারালা গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখনও পানিবন্দি। তাদের মতো বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাঘমারা, দূর্গাপুর, সোনাপুর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্যাংকের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বিশুদ্ধ পানি সরবারহ করার ব্যবস্থা করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

[caption id="attachment_232288" align="aligncenter" width="700"] মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন হাওরবাসী। ছবি: প্রতিনিধি[/caption]

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবান নগর গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজা বেগম বলেন, বন্যার পানি আইয়া ঘরও পানি, রান্না করার চুলা নেই এখন, পানিও যে খাইতাম তা ময়লা। আমরা খুব সমস্যাত পড়ছি বন্যায়।

একই গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর সুভ্রত দাশ বলেন, আমরা ভাই দিন আনি দিন খাই, সমস্যা সব আমরার কপালেই থাকে। আমার ঘরবাড়িতে কোমর পানি। পানি কমে কিন্তু খুব আস্তে আস্তে। এখন ঘরও ভাত নাই, চিড়ামুড়ি খাইরাম। আমরাও পিপাসা লাগে তাই পানি নিতে আইলাম। হাওরের পানি খাওয়া যায় না গন্ধ।

তাহিরপুর উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা দ্বীন ইসলাম বলেন, পানি আগের থকি কিছুটা কমছে, কিন্তু আমরার ঘরও খাওয়ার ভালা পানি নাই। আশ্রয় কেন্দ্র থকি আমরারে পানি বিশুদ্ধকরণের দুইটা ট্যাবলেট দিসে এইগুলো দিয়া বেশি অইলে দুইদিন পার করছি। আর ঘরও এই অবস্থা নাই যে পানি ফুটাইয়া খাইতাম।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, বন্যা মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত আমরা সুনামগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় চার লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রদান করেছি। এছাড়া ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্রে নলকূপ বসিয়েছি। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর যেন টিউবওয়েল পরিষ্কার করা যায় সেজন্য আমরা প্রতিটি উপজেলায় ৬০০ কেজি ব্লিচিং পাউডার দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বন্যা মোকাবেলায় আমরা ৩০০টি পাকা ল্যাট্রিন তৈরি করেছি। আমরা বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে সুনামগঞ্জ শহরে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App