×

পুরনো খবর

পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২০, ০৮:২৪ পিএম

পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থেই

এ কথা স্পষ্ট যে, পাটকল বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা বুঝে পাচ্ছেন। পাটকল বন্ধ হলেও শ্রমিকের স্বার্থ পুরোমাত্রায় বহাল থাকবে। কারণ পাটশিল্পকে বাঁচানোর জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করতে চান। সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের তার ওপর আস্থা রাখাটা অবশ্যই প্রয়োজন।

গত ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যের সময় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘বর্তমান পাট কারখানাগুলো সবচেয়ে পুরনো, পঞ্চাশ-ষাটের দশকে তৈরি। এ শিল্পগুলো দিয়ে লাভ করা সম্ভব নয়। পাটের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। সেজন্য আমরা চাচ্ছি এটাকে নতুনভাবে তৈরি করতে।’ করোনাকালে পাট রপ্তানি বাড়লেও দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা সরকারি পাটকলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ৪৮ বছরে সরকারি পাটশিল্প খাতে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের কল্যাণ চিন্তা করেছেন বলেই তাদের ট্রেনিং দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন করে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘পাটকল চালু হলে অভিজ্ঞরা নতুন করে চাকরি পাবেন।’ রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বেসরকারি অংশীদারিত্বে ছেড়ে দেয়ার চিন্তা সরকারি নীতির বড় ধরনের পরিবর্তন। শত শত কোটি টাকার লোকসানের কারণে এই সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে প্রায় ৯ হাজার শ্রমিক অবসরে গেছেন, তাদের পাওনা দেয়া হয়নি। সেই টাকা ভাঙিয়ে এখন কল চালানো হচ্ছে। আর সব শ্রমিকের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় পাওনা দিতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এছাড়া ব্যাংকের বকেয়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের জন্য প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে। পাওনা পরিশোধের পর বেসরকারি অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়েই পাটশিল্পকে বাঁচানো সম্ভব। এই কাজ ৬ মাসের মধ্যেই করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে যে পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদিত হয় তার ৯৫ শতাংশই বেসরকারি পাটকলে উৎপাদিত হয়। সরকারি খাতটি অত্যন্ত সংকুচিত হয়ে গেছে, যা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিল না। এগুলোকে আবার প্রতিযোগিতায় কীভাবে আনা যায় এবং কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিবেচনায় এখন সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আমরা জানি, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা- এই চারটি বিভাগে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে থাকা ২৬টি পাটকলের মধ্যে মনোয়ার জুট মিল ছাড়া সবই উৎপাদন চলছে। এসব কারখানায় ২৪ হাজার ৮৬৬ স্থায়ী শ্রমিকের বাইরে তালিকাভুক্ত ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক আছে প্রায় ২৬ হাজার। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এসব পাটকলের শ্রমিকের শতভাগ পাওনা মিটিয়ে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে শ্রমিকদের জুন মাসের বেতনভাতা পরিশোধ করতে ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। আর ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে শ্রমিকদের সম্মানজনক বিদায়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে পাটকলগুলো ফের চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পাটকলগুলোর পুরনো সব যন্ত্রপাতি বদলে ফেলে সেখানে নতুন, উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের পরিকল্পনা সত্যিই অভিনব। তথ্য মতে, দেশে বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা ২৮১টি যার মধ্যে ৫৬টি কল বন্ধ রয়েছে আর আমাদের এখানে কমবেশি ৬.১৮ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয়।

উল্লেখ্য, ২ জুলাই সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার পর ‘পাটশিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা রুখতে হবে’ বলে কিছু সুশীল ব্যক্তিত্ব এবং জনবিচ্ছিন্ন কয়েকটি রাজনৈতিক দল সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে আসছে। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এ ধরনের সিদ্ধান্ত সমীচীন হয়নি বলে কেউ কেউ মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ পাটকল বন্ধের সরকারি ঘোষণাকে ‘গণবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে এসব ব্যক্তির ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টাকে হাস্যকর মনে হচ্ছে। কারণ বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল অনেক আগে। আর তার যৌক্তিক কারণ স্পষ্ট করে প্রকাশও করা হয়েছে। এজন্য পাটশিল্প নিয়ে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই।

দুই. মনে রাখতে হবে, ১৯৯৬ সালের আগে বিএনপি সরকারের আমলে বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল ‘আদমজী জুট মিল’ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তখন থেকেই দেশের সরকারি পাটকলের লোকসান ক্রমান্বয়ে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের সব সরকারি পাটকল বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়াটা স্বাভাবিক একটি ঘটনা। কেবল যে বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন অনুসারে এটা করা হয়েছে এমনটি নয়। বরং গবেষকদের বিশ্লেষণ ও অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে সরকার শ্রমিকদের মঙ্গল চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে। আসলে পাটশিল্প বাঁচানোর বর্তমান বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে।

বিএনপি আমলে আদমজী জুটমিলের ৬০ হাজার এবং অন্যান্য পাটকলের লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর এবং পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর দুবারেই অনেক পাটকল চালু করে শ্রমিকদের পাটকলের মালিকানায় অংশীদার করা হয়েছিল। যেমন- ২০০৯-১৮ সময়ে মোট ৫টি বন্ধ মিল চালু করা হয়। মিলগুলো হচ্ছে- পিপলস জুট মিলস লিমিটেড (বর্তমানে খালিশপুর জুট মিলস), কওমি জুট মিলস লিমিটেড (বর্তমানে জাতীয় জুট মিলস), দৌলতপুর জুট মিলস লিমিটেড, কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড ও ফোরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি। এসব মিলে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নে খুলনা, চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় ৩টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়। এর আওতায় কম্পিউটারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ১৬ হাজার ৯০০ জনকে। এছাড়া সরকারের সহায়তায় বিএমআরইকরণ, স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল স্থাপন, বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনসহ মোট ৬টি এবং পিপিপি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ২টি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাছাড়াও বিজেএমসির নিজস্ব অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়ন হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুসারে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরনো পাটকলগুলোর জায়গায় ‘উন্নত’ ব্যক্তিমালিকানাধীন জুট মিল স্থাপন করা হবে। ঐতিহ্যবাহী ‘পাটশিল্প’কে রক্ষার জন্য শেখ হাসিনার প্রচেষ্টা রয়েছে অনেক আগে থেকেই। কারণ পাটশিল্প জাতীয়করণের ইতিহাসটি বঙ্গবন্ধুর হাত দিয়েই সম্পন্ন হয়েছিল। আর পাটের জেনোম আবিষ্কার হওয়ার পর আমাদের বিজ্ঞানীদের প্রশংসা শেখ হাসিনাই করেছিলেন জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে। এখন মিল বন্ধ করে শ্রমিকের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার দায় সরকারের। মিলের জায়গাগুলো বেদখল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া দেশে পরিবহন, আবাসন, নগরায়ন, পর্যটন, ইকোনমিক জোন, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, শিক্ষা ও শিল্প খাতে মোট ৫৬টি প্রকল্প পিপিপিতে চলমান। এগুলোর অগ্রগতি সন্তোষজনক। ফলে পাটকলগুলো পিপিপিতে চালানোর মাধ্যমে পাটশিল্পকে রক্ষা করা যাবে। অন্যদিকে পাটকল বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকদের কোনো ক্ষতি হবে না। শ্রম আইন অনুসারে পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’-এর মাধ্যমে শ্রমিকরা যেন হয়রানির শিকার না হয়ে তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে পান সেজন্য বেশকিছু দিকনির্দেশনা রাখা হয়েছে। করোনাকালে বিকল্প কর্মসংস্থান না পেলেও বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর ১৩ হাজারেরও বেশি অস্থায়ী শ্রমিকরা সরকারের প্রণোদনা ভাতা পেতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে অতীতে ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি আর দুর্নীতির কারণে পাটকলগুলো লোকসানের সম্মুখীন হয়েছিল। তারপরে পাটশিল্পের যন্ত্রপাতির আধুনিকায়নের অভাব ছিল। শ্রমিক নেতৃত্বে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছিল ব্যাপকভাবে। রাজনৈতিক দলের লোকজন ভেতর ও বাইরে থেকে ওসব পাটকলে প্রভাব বিস্তার করত। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতো।

তিন. জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই দিনের কথা থেকে আমরা পরিষ্কার যে, সরকার জানে, পাটের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। পাট আমাদের অর্থকরী কৃষিপণ্য। পরিবেশগত কারণে সবাই সিনথেটিকস থেকে মুক্তি চায়, সেখানে পাট হচ্ছে বিকল্প। ফলে বিশ্বব্যাপী এ খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য পুরনো কারখানাগুলোকে সময়োপযোগী করতে হবে। ইউরোপের ২৮টি দেশ পলিথিন ও সিনথেটিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। সারা বিশ্বে বছরে ৫০০ বিলিয়ন (অর্থাৎ ৫ হাজার কোটি) পিস শপিং ব্যাগ প্রয়োজন হয়। ২০২০ সালের পর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই দেড় হাজার কোটি টাকার পাটজাত পণ্যের বাজার তৈরি হবে। যদি এর ৫ শতাংশ বাজারও বাংলাদেশ ধরতে পারে, তা হলে নতুন পাটকলগুলোর মোট উৎপাদন দিয়ে সেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের ‘জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার’ ২৩৫ ধরনের পাটজাত পণ্যের প্রদর্শনী করেছে। পাটের তৈরি ডিসপোজেবল (পচনশীল) পলিথিন উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আমাদের গ্রামে-গঞ্জে অনেক আগে থেকেই কাঠের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে পাটকাঠির ব্যবহার চলছে। হ্যান্ডিক্রাফট, কার্পেট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, রাস্তা, ভবন নির্মাণসহ বহু ক্ষেত্রে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার রয়েছে। পাটের তৈরি কার্পেট, পর্দা, তুলার বিকল্প ভিসকস, পাট পলিথিন এসবের প্রয়োজন ও চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। দেশে চার কোটি টন দানাজাতীয় খাদ্যশস্য পরিবহনে ৫০ কেজির ব্যাগ হিসাব করলে কম করে হলেও ৮০ কোটি বস্তা লাগে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নির্মাণসামগ্রী, পশুখাদ্য পরিবহনসহ গৃহস্থালি কাজ মিলিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৩০০ কোটি পাটের বস্তা প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে ২০১০ সালের ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৯ ধরনের পণ্যের মোড়ক পাটের ব্যাগে করার কথা বলা হয়েছে। ওই আইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেই পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী পাটকলগুলোর প্রশাসনকে ডিজিটাল করে তোলা হবে। কারখানা পরিচালনায় পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সংযোজন করা হবে। দুর্নীতি দূর করার জন্য পুরনো যন্ত্রপাতি বাতিল করে নতুন বা আধুনিকায়ন করা হবে। উৎপাদনে পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ করার চিন্তা আছে। মানসম্মত কাঁচা পাট ব্যবহার করার সিদ্ধান্তও আছে। অন্যদিকে ট্রেড ইউনিয়নের নামে সিবিএর দৌরাত্ম্য বন্ধ করা হবে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের পাটের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে ২০ হাজার পাটচাষিকে আধুনিক প্রযুক্তিতে উফশী পাট ও পাটবীজ উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাট ও পাটবীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় পাট চাষের জন্য প্রতি উপজেলায় ৩ হাজার চাষিকে বিনামূল্যে উন্নত পাটবীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রতি উপজেলায় দেড় হাজার পাটচাষিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাটের উৎপাদন, পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত এবং দেশে-বিদেশে পাটের বাজার সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রেও সরকার পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।

চার. এ কথা স্পষ্ট যে, পাটকল বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা বুঝে পাচ্ছেন। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেছেন, গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে একজন শ্রমিক ১২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা পাবেন। আর সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকাও। এক্ষেত্রে শ্রমিকরা ঠকবেন না। করোনা মহামারির মধ্যে কয়েক মাস ধরে পাটকলের শ্রমিকদের মোবাইলের মাধ্যমে বেতন দেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের পাওনা টাকার অর্ধেকটা সঞ্চয়পত্র করে দেয়া হবে। এতে তারা এখন মাসে যে বেতন পাচ্ছেন, তার থেকে বেশি পাবেন। সঞ্চয়পত্রের ১১ শতাংশ সুদে প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি ৩ মাসে সর্বনিম্ন ১৯ হাজার ৩২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৪ হাজার ৫২০ টাকা পর্যন্ত পাবেন। এছাড়া অনেক আগে অবসরে যাওয়া ৮ হাজার ৯৫৬ জন পাটকল শ্রমিকের অবসর ভাতা পরিশোধ করতেও সরকারের ১০২০ কোটি টাকা খরচ হবে। পাটকল শ্রমিকদের পাওনা টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে এবং কোনো পাটকল অথবা অন্য কোনো মধ্যস্বত্বভোগী এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবে না। অবসর ভোগীদের টাকা আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই নিজ নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। অর্থাৎ পাটকল বন্ধ হলেও শ্রমিকের স্বার্থ পুরোমাত্রায় বহাল থাকবে। কারণ পাটশিল্পকে বাঁচানোর জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করতে চান। সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের তার ওপর আস্থা রাখাটা অবশ্যই প্রয়োজন।

ড. মিল্টন বিশ্বাস : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App