×

সারাদেশ

কোরবানীর পশু নিয়ে দিশেহারা ফুলছড়ির খামারিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২০, ০৪:১৫ পিএম

কোরবানীর পশু নিয়ে দিশেহারা ফুলছড়ির খামারিরা
কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে লাভের আশায় ১৬টি গরু নিয়ে একটি খামার গড়ে তোলেন ফুলছড়ির দক্ষিণ উদাখালী গ্রামের খাজা মন্ডল। একেকটি ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় কেনা ৯টি ষাড়, প্রায় দেড় লক্ষ টাকা করে দুটি অষ্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান গরু আর ৫টি গাভীতে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ তার। কিন্তু করোনার সাথে বন্যার ছোবলে সব লণ্ডভণ্ড। করোনায় বাজারঘাটের নিশ্চয়তা নেই। বন্যার পানির জন্য মাঠ ঘাটে গরুর খাবার নেই। তার উপর দেখা দিচ্ছে ক্ষুরা রোগ। সবমিলিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে খামারীদের মনে। কালাসোনার আজগর আলী, রতনপুরের আরজান ও হাজীর হাটের শাহীনের মতো দুশ্চিন্তায় উপজেলার দেড় হাজারের মত প্রান্তিক গো- খামারি। আগের বছরও ঈদের আগে বেপারিরা এসব খামারে এসে দরদাম হাকতো, এবার তাদের আনাগোনা নেই। খামারি খাজা মন্ডল বলেন, প্রতিদিন ১৬টি গরু খাদ্যের জন্য তার খরচ ১৫ থেকে ১৬'শ টাকা। প্রতি বছর তিনি গরু মোটাতাজা করে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা আয় করেন। একদিকে গো-খাদ্যের চড়া দাম তার ওপর করোনায় মন্দাবাজার। আর এবার ৩/৪ লক্ষ টাকা লোকসান হবে বলে আশঙ্কা তার। তিনি বলেন প্রতিবছর এরকম সময়ে পাইকাররা গরুর দাম দর করতে প্রতিনিয়ত পাক ফিরতো, এবছর এখন পর্যন্ত কোন গরুর পাইকার আসেনি। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই কোরবানির ঈদ। ঈদকে উপলক্ষ করে একবুক আশা নিয়ে গরু পালন করে বিপাকে পড়া ফুলছড়ি উপজেলার প্রান্তিক গো-খামারিদের সামনে তেমন কোন আশা নিয়েও দাড়ায়নি কেউ। অন্যদিকে আগাম বন্যায় বাড়ি ও খামার তলিয়ে যাওয়ায় ফুলছড়ির চরাঞ্চলের ইউনিয়ন এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, ফুলছড়ি, উড়িয়া ও গজারিয়া ইউনিয়নের গো-খামারিরা তাদের পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধে-রাস্তায়, কিংবা উঁচু কোন স্থানে। উড়িয়া ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বন্যার কারণে এখানে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গরু নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। বন্যা কবলিত এসব এলাকার চারণভূমিগুলো থেকে গো-খাদ্য সংগ্রহ করতে না পারায় পশু খাদ্যের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। খাদ্যের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় গরুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে একদিকে সংশয় অন্যদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় গবাদি পশুর রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়ায় অনেক এলাকায় কম দামে পশু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বিশেষ করে চরাঞ্চলের খামারিরা বাধ্য হচ্ছেন লোকসানেই পশু বিক্রি করে দিতে। খামারীদের অভিযোগ, এমন পরিস্থিতিতে খামারীদের কোন ধরনের পরামর্শ বা ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা দিয়েও সহায়তার হাত নিয়ে এগিয়ে আসেনি প্রাণী সম্পদ বিভাগ। ফুলছড়ি উপজেলার একমাত্র পশুর হাট কালিরবাজার। প্রতিবছর ঈদের আগে মাইকিং করে ক্রেতা বিক্রেতাদের আহবান করা হলেও এবার এখন পর্যন্ত এ হাটটি চালু করা হয়নি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গরুর হাট চালু করাসহ ক্ষুদ্র প্রান্তিক এসব গো-খামারিদের রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মনে করেন ক্ষুদ্র, প্রান্তিক খামারিরা। ফুলছড়ি উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এ উপজেলায় ষাড় গরু মোটাতাজা করা হয়েছে ২ হাজার ৫১৪ টি, বলদ গরু ১৮৯ টি, গাভী গরু ১ হাজার ৯৫৯ টি, মহিষ ১৫৮ টি, ছাগল ২ হাজার ৩৪৯ টি এবং ভেড়া ১৩৫ টি। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার আবুল কালাম শামসুদ্দিন বলেন, খামারিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে যা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে। প্রনোদনা সহযোগিতা আসলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App