×

সারাদেশ

উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যার অবনতি, পূর্বাঞ্চলে উন্নতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২০, ১০:১৫ এএম

উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যার অবনতি, পূর্বাঞ্চলে উন্নতি

পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারি বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে রেললাইনে পানি ওঠায় ইসলামপুর টু দেওয়ানগঞ্জ ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় ভোরের কাগজ

যমুনা নদীর পানি অবিরাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি। রেললাইন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে দেওয়ানগঞ্জে। ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবং ভারি বর্ষণের কারণে গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সারিয়াকান্দির কাছে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলে-ফেঁপে ওঠায় আরো নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এ অবস্থায় কুড়িগ্রামে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন আত্রাইয়ে পানি বেড়ে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে নাটোরে। অপরদিকে সুরমা-কুশিয়ারা বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বৃষ্টিপাত না না হওয়ায় এবং পানি কমায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। বন্যাকবলিত এসব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে লাখ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তবে ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট
জামালপুর : যমুনা নদীর পানি অবিরাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েক জায়গায় সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলার ৫২ ইউনিয়নের ৫ লক্ষাধিক বানভাসিকে। বানভাসিদের দুর্ভোগ কমাতে জেলা প্রশাসন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও চাহিদার তুলনায় ত্রাণের পরিমাণ অপ্রতুল বলে দাবি করছেন জনপ্রতিনিধিরা। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বুধবার দুপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যমুনা পানি ২য় দফা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫২টি ইউনিয়নের ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহােেচ্ছন। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের দিনমজুর ও শ্রমিকরা। কাজ না থাকায় খাদ্য সংকটে রয়েছেন তারা। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, বর্তমান সময়ে যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ জেলা প্রশাসনের কাছে মজুত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী ত্রাণের যোগ্য সবাইকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান তিনি। এদিকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জামালপুর- দেওয়ানগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে বিপাকে পড়েছেন ট্রেনের যাত্রীরা। দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার আবদুল বাতেন জানান, বন্যার পানিতে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে বন্যার পানি কমার পর আবার ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছেন তিনি। এছাড়া দেওয়ানগঞ্জের তারাটিয়া-সানন্দবাড়ী পাকা সড়কটি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে যানবাহন চলাচল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। অপরদিকে বন্যার পানির তোড়ে জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার মহিষবাতান- মাহমুদপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় সেখানকার ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। গাইবান্ধা : উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবং ভারি বর্ষণের কারণে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বুধবার বিকাল ৩টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ৯৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানির চাপে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষারপাড়া-সৈয়দপুর সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ফাটল দিয়ে পানি বের হওয়ায় বাঁধটি চরম হুমকির মুখে পড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা দিয়ে বাঁধের ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধির ফলে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ফলে ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ওঠায় পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। শুকনো খাবার ও জ্বালানির অভাবে খাদ্য সংকটে পড়েছেন বন্যার্ত মানুষ। এছাড়া গবাদিপশুরও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলে-ফেঁপে ওঠায় আরো নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এ অবস্থায় কুড়িগ্রামে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নদী ছাড়াও হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর এলাকায় বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে একের পর এক ডুবছে গ্রাম, বাজার, ঘাট। জেলার রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চত্বর ও ভবনে বন্যার পানি ঢুকেছে। চর রাজীবপুর বাজারে এখন পানি থইথই করছে। এদিকে ধরলার পানি কমতে শুরু করলেও তা এখনো বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া মানুষজনের মাঝে খাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া তিস্তায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, বুধবার বিকাল ৩টায় কুড়িগ্রামে সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কয়েক সেন্টিমিটার কমলেও এখনো সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি ক‚ল উপচে প্রবেশ করায় ছাতক পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকাসহ জেলার সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে। এই উপজেলাগুলোর কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি মানুষজন নিজেদের গৃহপালিত গরু-ছাগল নিয়েও বিপদে পড়েছেন। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে জেলার দোয়ারাবাজার, দিরাই, শাল্লা ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী বাজার ও গ্রামগুলোয় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এছাড়া সড়ক ডুবে যাওয়ায় জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, জগন্নাথপুর ও বিশ্বম্ভরপুরের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সিলেট : সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত না থাকায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে রয়েছে। তবে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এখনো তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা-কুশিয়ারা। নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা এখনো পানির নিচে থাকলেও পানি নামতে শুরু করেছে বেশ কিছু এলাকার। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্যমতে, গতকাল বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে সুরমার পানি। কানাইঘাট পয়েন্টে পানি কমলেও এখনো রয়েছে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপরে। তবে সুরমায় পানি কমলেও পানি বেড়েছে কুশিয়ারায়। বুধবার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অপরদিকে আমলসিদ পয়েন্টেও ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পানি বেড়ে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপরে ছিল কুশিয়ারা। তবে শ্যাওলা ও শেরপুর পয়েন্টে পানি নামতে শুরু করেছে। শ্যাওলায় ১৮ সেন্টিমিটার আর শেরপুরে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুশিয়ারা। পানি কমেছে গোয়াইনঘাটের সারি নদীতেও। এছাড়া লোভা ও ধলাই নদীর পানিও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। এতে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় নতুন করে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হলেও কিছুটা উন্নতির দিকে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের বন্যা পরিস্থিতি। নাটোর : নাটোরে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সিংড়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে নাটোরের সিংড়া-তেমুক নওগাঁ সড়ক। এতে করে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে ঢুকে পড়ছে বাড়িঘরে। বালির বস্তা দিয়ে সড়কটির বাকি অংশটুকু বাঁচানোর চেষ্টা করছে স্থানীয় এলজিইডি অফিস। এলাকাবাসীরা জানান, ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে তীরের ও নিম্নাঞ্চলে লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ছোট ছেলেমেয়ে ও গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন এলাকার মানুষ। গত দুই মাস আগে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সিংড়া-তেমুক নওগাঁ সড়কটি। কিন্তু ভোরের দিকে বন্যার পানির তোড়ে সড়কটির ভাগনগরকান্দি এলাকার দুটি স্থানে অন্তত ১০ মিটার করে ভেঙে যায়। এতে করে তীব্র গতিতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। সারিয়াকান্দি (বগুড়া) : সারিয়াকান্দির কাছে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বন্যাকবলিত লোকজন উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৮ ঘণ্টায় ১৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল দুপুরে বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল পানি। উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী ও বোহাইল ইউনিয়ন সম্পূর্ণ এবং হাট শেরপুর, চন্দনবাইশা, কামালপুর ও সদর ইউনিয়নের আংশিক বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App