×

সাহিত্য

লেখা না থাকলে আমি বাঁচতে পারতাম না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২০, ০২:১৯ এএম

লেখা না থাকলে আমি বাঁচতে পারতাম না

সুবোধ সরকার

লেখা না থাকলে আমি বাঁচতে পারতাম না

সুবোধ সরকার

লেখা না থাকলে আমি বাঁচতে পারতাম না

সুবোধ সরকার

বিশেষ সাক্ষাৎকার সুবোধ সরকার কবি
সুবোধ সরকার। দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি। গভীর অন্তর্দৃষ্টি, মানবিকতা, যা কখনও শ্লেষাত্মক, কখনও সরাসরি ও সংবেদনশীল। কিন্তু এত তীক্ষ্ণ, তীব্র তার ভাষা! প্রখর রাজনৈতিক চেতনায় জারিত সুবোধের কবিতা। থানা, পুলিশ, মন্ত্রী, কেবিনেট নিয়েও তিনি শাণিত বক্তব্য রেখেছেন কবিতায়। কিন্তু সহজ-সরল ভাষায় মোক্ষম কথাটি বলেন অকপটে। তার সেই অকপট ভঙ্গিটাই বেশ উপভোগ করার মতো। যিনি টানাগদ্যে যেমন লিখছেন, তেমনি ছন্দ-অন্ত্যমিলেও। তার কবিতা যেন সবকিছু ছাপিয়ে কাহিনি কিংবা রূপকগল্পের ভেতর দিয়ে জ্বেলে দেয় সুন্দরের আশ্চর্য বিভা। কেবল অলঙ্কার প্রয়োগে নয়, সুবোধ সরাসরিও বলেন। চরমসত্য এমনই সাবলীল ভাষায় বলতে পারেন একমাত্র কবি সুবোধ সরকারই। এই কবি ২০১৩ সালে সাহিত্যে স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ২৮টি। শিক্ষকতার পাশাপাশি সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের কাগজ ‘ভাষানগর’। দুই বাংলার জনপ্রিয় এই কবির করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিচ্ছু ভালো লাগছে না। খেতে ভালো লাগছে না। ঘুমোতে ভালো লাগছে না। ঘুম থেকে উঠে ভালো লাগছে না। এই বুঝি তিনি এসে গেলেন। ঘরে ঢুকে পড়লেন। কত আর হাত ধোব। হাত ধুতে ধুতে একদিন পাগল হয়ে যাব না তো? [caption id="attachment_231762" align="aligncenter" width="700"] সুবোধ সরকার[/caption] খ্যাতিমান এই কবি আরো বলেন, এই একটা জায়গায় আমি বেঁচে আছি। লেখা না থাকলে আমি বাঁচতে পারতাম না। যেদিন লিখতে পারি সেদিন ভালো থাকি। মনে হয় আমার পিঠে দুটো ডানা আছে। আমি উড়ে চলে যেতে পারি। পাহাড়ে যেতে পারি। মানস সরোবরে যেতে পারি। সমুদ্রের তীর গিয়ে নামতে পারি। গতকাল সকালে একটা কবিতা লিখেছি। লেখাটা শেষ করে যেই উঠে দাঁড়ালাম মনে হলো পৃথিবী থেকে করোনা চলে গেছে। এই ‘ফ্যান্টাসম্যাগোরিয়াতে’ পাঁচ মিনিট থাকলেও মন থেকে অবসাদ মুছে যায়। লেখা থেকে এরকম একটা দারুচিনির গন্ধ পাই আমি। সেটা বেশিক্ষণ থাকে না। নাই বা থাকলো। যতক্ষণ থাকে ততটাই ষোলআনা। কী বই পড়ছেন? কোন বই পড়ছেন? জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, মহাভারত পড়ছি আবার। সঙ্গে গার্সিয়া মার্কেজ। আ ডেডলি কমবিনেশন। করোনার অভিঘাতে চেনা পৃথিবীর কতোটা বদল ঘটেছে? জানতে চাইলে বরেণ্যে এই কবি বলেন, বদল?
পৃথিবীর ওপিঠে এসে পড়েছি আমরা। এই পৃথিবীকে আমরা আগে দেখিনি। লকডাউনের আগে পৃথিবীকে যেখানে রেখে এসেছি সেখানে ফিরে গিয়ে আর আমরা তাকে পাব না। সারাক্ষণ আমাদের নস্টালজিয়া হবে। আহা আমরা আগে কি সুন্দর কফি হাউসে বসে আড্ডা দিতাম। আহা কি সুন্দর জামাইষষ্ঠী হত। কি ভালো ছিল ঈদের আনন্দ, পুজোর হইচই। এসব নিয়ে আমরা স্মৃতিকথা লিখবো। ছোটরা জানতে চাইবে ব্রিগেডে কত লোক হতো। আমরা বলবো দশ লক্ষ লোক হতো জনসভায়। ছোটরা বলবে, গুল মারছে, এদের এখন একটাই স্বভাব গুল মারা। আমরা নিউনরম্যালকে নিতে পারব না আবার নস্টালজিয়ায় ভেসে যেতেও পারব না। আমরা একটা চিরন্তন দ্বিধায়, একটা ইটারনাল ডিলেমায় আটকে থাকব।
করোনার এই সময়টাকে কেউ কেউ বলছেন যুদ্ধ চলছে দেশে, আপনার কী মনে হয়? এই শিক্ষক বলেন, যুদ্ধের সময় আপনি পালাতে পারেন। এখন আপনি পালাতে পারবেন না। পালিয়ে যাবেন কোথায়? জলপথ বন্ধ। স্থলপথ বন্ধ। আকাশপথ বন্ধ। কোনো দেশ আপনাকে নেবে না। কোনো দেশ আপনাকে যেতেও দেবে না। আপনি যেখানে আছেন, যে পাড়ায় আছেন, যে আবাসনে আছেন, সেখানেই থাকতে হবে। আপনি এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় গিয়ে ঘুরঘুর করলে পুলিশ আপনাকে সন্দেহ করবে। [caption id="attachment_231763" align="aligncenter" width="700"] সুবোধ সরকার[/caption] পৃথিবী কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয়? তা পারবে। প্রকৃতির প্রতি যথেচ্ছাচারের কারণেই প্রকৃতি এতো মানববিধ্বংসী হয়ে উঠেছে? আপনার কী মনে হয়? কবি সুবোধ সরকার বলেন, এটা নিয়ে কিছু বলা বিপজ্জনক। এত পাপ করেছি আমরা তার শাস্তি পাচ্ছি এই একটি কথা চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে। আমি এভাবে ভাবিনি এখনো। কিন্তু একটা অদৃশ্য ভাইরাস আমাদের একটা কথা শিখিয়ে দিয়ে গেল যে আমরা আমাদের ভালোবাসিনি। আমরা আমাদের অপমান করেছি। আমরা একজন আর একজনের কত কাছে ছিলাম। হাতের কাছে সব ছিল তাও আবার সেই নৈকট্য সম্মান করিনি। এখন আর কিছু করার নেই- হা হুতাশ করা ছাড়া। কেন আমি আমার বুড়ো বাবামার পাশে একটু বসে থাকতে পারিনি। কেন আমি আমার প্রেমিকাকে আর একটু ভালোবাসতে পারি নি। কেন এত লোভ আমাদের? কেন এত চাই আমাদের? এরকম কয়েকটি দার্শনিক জিজ্ঞাসা আমাকে বিপন্ন করে তুলছে প্রতিদিন। এই বিপন্নতা থেকে উত্তরণের পথ কিংবা পরামর্শ কি? তিনি বলেন, আমি যদি আর একটা সুযোগ পাই, আমাকে যদি বেঁচে থাকার একটা সুযোগ দেওয়া হয়, আমি তাহলে বলব আমাকে আর যেন স্বার্থপর হয়ে বাঁচতে না হয়। এত আমি আমি ভালো না। আমি বলব আমি যেন মাটিতে পা রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি। ৩২ তলায় থেকে কী হবে? অত ওপরে উঠেও আমরা কি সত্যি উঁচুতে উঠতে পারি?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App