×

রাজধানী

রিজেন্ট-জেকেজির নেপথ্যদের চিহ্নিত করে সাজার দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২০, ০৯:০১ পিএম

রিজেন্ট ও জেকেজির হাতে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা ও চিকিৎসাকে ঘিরে যে ন্যক্কারজনক জালিয়াতির ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে তাকে স্বাস্থ্যখাতে লাগামছাড়া দুর্নীতির খুবই ছোট  উদাহরণ বলে মনে করে ট্রান্সপারেিেন্স ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তাই এই দুই ঘটনার দৃশ্যমান অভিযুক্তদের আটক বা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাকেই যথেষ্ট ভেবে নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে, মূল সমস্যার কোন সমাধান হবেনা। বরং যেসব প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানদের যোগসাজশে মানুষের জীবন মৃত্যু নিয়ে এমন ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে, সেসব নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করে গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর সাজা নিশ্চিত করতে হবে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বুধবার (১৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

রিজেন্ট ও জেকেজি কান্ডের মূল হোতাদের আটকের ঘটনাকে এসব দুর্নীতির তদন্তের প্রথম পদক্ষেপ আখ্যায়িত করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে একের পর এক দুর্নীতি, জালিয়াতি, প্রতারণা ও সাগরচুরির অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে। তার মধ্যে মাত্র দু’টি ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেলাম যে, প্রত্যক্ষ কর্ণধারদের আটক করা হয়েছে এবং তাকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিরাট অর্জন হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। আমরা অবশ্যই এই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এখনই একে বিরাট সাফল্য বলে মানতে পারছিনা। যে প্রক্রিয়ায় আলোচ্য দু’টি প্রতিষ্ঠান এই জালিয়াতি করার সুযোগ পেয়েছে তাতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাবানদের একাংশের যোগসাজশের বিষয়টি একরকম নিশ্চিত করেই বলা যায়। অভিযুক্তদের শুধু ‘প্রতারক’ হিসেবে প্রচার করে পেছনে থাকা প্রভাবশালী, যারা তাদের এই সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে কিনা সে প্রশ্ন একেবারে অবান্তর বলা যাচ্ছে না।

এই দুই আলোচিত ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং মন্ত্রণালয়ের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ এবং একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টায় এই শংকা আরো প্রবল হচ্ছে- এমন মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মহামারির এই ভয়াবহ সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এমন লাগামছাড়া, ছন্নছাড়া অবস্থা রীতিমতো অপরাধমূলক, কারণ এতো শুধু দুর্নীতির মহোৎসব নয়, মানুষের জীবন-মৃত্যু এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

স্বাস্থ্যখাতের এই যথেচ্ছ দুর্নীতির দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে এবং টিআইবি মনে করে এখানে কাউকে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এরই মধ্যে এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারি, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অ্যাপ তৈরীর প্রস্তাবনার মতো জালিয়াতির ঘটনা প্রায় ধামাচাপা পড়ে গেছে আর অভিযুক্তরাও বহাল তবিয়তে আছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হলো, তদন্ত হলো। কিন্তু কি ব্যবস্থা নেয়া হলো? পদোন্নতি দিয়ে আরো দায়িত্বশীল পদে বদলি করাটা কি শাস্তি? নাকি শুধু কালো তালিকাভুক্ত করাটাই যথেষ্ট? এদের জন্য যে বহু চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন তার জবাব কে দেবে? মানুষ স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সে জন্য কে জবাবদিহি করবে? বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বহির্বিশে^র দরজা যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অনুদানের টাকা, ঋণের টাকা, জনগণের করের টাকা এভাবে যথেচ্ছ লুটপাটের সুযোগ কাদের দেয়া হচ্ছে, কারা সুযোগ নিচ্ছে ও দিচ্ছে এবং কিসের বিনিময়ে সেটা জানার অধিকার দেশের জনগণের আছে।

তাই শুধু দুই তিনজন অভিযুক্তকে আটকেই এই ঘটনার সমাপ্তি না টেনে বরং তাদের ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার পেছনের প্রভাবশালী কুশীলব, সুরক্ষাদাতা, সমর্থনদাতা এবং সুবিধাভোগীদেরও অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে কঠোর বিচারের মুখোমুখি করা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করে দেশবাসী। এটা না হলে দুর্নীতির মূলোৎপাটন কখনোই সম্ভব হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App