×

মুক্তচিন্তা

করোনাকালে বন্যা, জনজীবনে প্রভাব ও মোকাবিলা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২০, ০৮:৪৪ পিএম

করোনাকালে বন্যা, জনজীবনে প্রভাব ও মোকাবিলা!

ফাইল ছবি

বর্তমানে আমাদের দেশ এক অন্তিম সময় মোকাবিলা করছে। করোনায় বিপর্যস্ত গোটা দেশ, এর মাঝেই আঘাত হানলো সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। দেশবাসী এ রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হলো আগাম বন্যা, ক্ষত না শুকাতেই ফের হামলা ২য় দফার বন্যার- এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বন্যার শিকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিপদসীমার ওপর দিয়ে অস্বাভাবিক হারে অতিক্রম হচ্ছে ১৯টি নদ-নদীর পানির প্রবল স্রোত। একদিকে ভারি বৃষ্টিপাত অন্যদিকে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। উপক‚লবর্তীসহ বন্যার শিকার সব মানুষ দুঃখ, দুর্দশায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পানি বৃদ্ধি দেখে বড় বন্যার আশঙ্কায় শঙ্কিত উপকূলবর্তী মানুষগুলো। দেশে বন্যা নতুন নয়, প্রতি বছরই কমবেশি বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে হয় এ বদ্বীপবাসীকে। প্লাবিত হয় দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ। তবে এবারের বন্যাকে বিশেষজ্ঞরা অন্যভাবে দেখছেন, সঙ্গে বেশ উদ্বিগ্নও হচ্ছেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা সমুদ্র সমতল থেকে মাত্র ১০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। সমুদ্র সমতল থেকে আর মাত্র ১ মিটার পানি বৃদ্ধি পেলেই দেশের প্রায় ১০ শতাংশ এলাকা নিমজ্জিত হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এবারের বৈশ্বিক আবহাওয়ার প্রচ্ছন্ন প্রভাবে ব্যাপকভাবে জলবায়ুর পরিবর্তনসহ নানা কারণে হিমালয়ের বরফগলা ও উজানে ঘন ঘন বৃষ্টিপাতের ফলে ১৯৯৮-এর মতো দীর্ঘ মাসব্যাপী বন্যার পূর্বাভাস দিচ্ছে তারা এবং চলতি সপ্তাহের মধ্যেই দেশের প্রায় ২৩টি জেলা তলিয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন তারা। মহামারিতে এমন দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগ সংকটকে আরো ঘনীভ‚ত করবে বলেও জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু দেশে একদিকে করোনার প্রকোপ অন্যদিকে বন্যার নতুন প্রাদুর্ভাব। সর্বাবস্থা মাথায় রেখে সরকারকে মানসম্মত প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর অগ্রণী ভ‚মিকা জরুরি। বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রথমেই বানভাসি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে হবে। প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত ও আশঙ্কিত প্রতিটি জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করতে হবে। অতিদ্রুত বানভাসি মানুষদের কাছে বিভিন্ন শুকনা খাবার, যেমন- চিঁড়া, মুড়ি, গুড় ইত্যাদি, স্যালাইন, সুপেয় পানি পৌঁছাতে হবে। স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু করোনা ভাইরাসের সময়, এক্ষেত্রে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, মাস্ক ও রুমালের ব্যবস্থা করতে হবে। ভেঙে যাওয়া বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণে দ্রুত তৎপর হতে হবে। ত্রাণের ব্যাপারে প্রান্তিক এ মানুষদের গতানুগতিক আশ্বাস না দিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে, প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে (ডায়রিয়া, উদরাময়) আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সংরক্ষণ করতে হবে। তাছাড়া করোনা-পরবর্তী সময়ে রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত সংস্কারে পূর্বপরিকল্পনা এখনই গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া গরুর এলএসডি সমস্যা সমাধানে এবং কৃষক ভাইদের সামনে আমন ধান মৌসুমও সরকারের মাথায় রেখে সূ²ভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সে মোতাবেক কাজ করে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। এছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাবে লোকজন লকডাউনে বন্দি থাকায় কোনো আয়-রোজগারও সেভাবে করতে পারেনি। ঘরে যা খাবার ছিল বন্যায় তা হয়তো ভেসে নিয়ে গেছে, যা ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় সরকারের পাশাপাশি জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সম্মিলিত উদ্যোগে মানবিকতার দৃষ্টান্ত থেকে বানভাসি এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সাহায্যে এগিয়ে আসুন। আপনার সহায়তায় হতে পারে একটি বানভাসি মানুষের নতুন করে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App