অপসংস্কৃতির ভয়াবহ দিক হলো স্বদেশীয় সামাজিক আচরণের নীতিকে অবহেলা করে অশ্লীলতার বিস্তার। ‘অশ্লীল’ শব্দের মধ্যে কেমন এক অমোঘ আকর্ষণ রয়েছে। ‘অশ্লীল’ বলে প্রচার পাওয়া বইয়ের বিক্রি বেশি, চলচ্চিত্রের দর্শক বেশি, গানের শ্রোতা বেশি।
শুধু ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য সিনেমা থেকে শুরু করে গান সবখানেই অশ্লীলতার জাদুর ছোঁয়া। পর্নোগ্রাফি বন্ধে সরকারের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী ছিল। কিন্তু ওয়েব সিরিজ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীলতার প্রসার বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ওয়েব সিরিজগুলোতে কোনো সেন্সরের সুযোগ না থাকায় অবাধে খ্যাতিমান তারকারা অশ্লীলতার চর্চায় প্রতিনিয়ত সীমা লঙ্ঘন করছে। বাস্তব জীবনে অশ্লীলতার প্রভাবে তরুণ সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে এবং অসামাজিক ও যৌনাচারী অসভ্য মানসিকতার বিস্তার ঘটছে। শিশুদের বিকাশ হচ্ছে বিকৃত।
বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে প্রধানত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও প্রচার মাধ্যমসমূহ। বিশেষ করে ভিনদেশী চ্যানেলে আমাদের সমাজব্যবস্থার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে বিজাতীয় অপসংস্কৃতির সংস্পর্শে আসার সহজ সুযোগ মিলছে তরুণ প্রজন্মের। যুবক-যুবতীরা সিনেমার উদ্ভট, অবাস্তব জীবনকেই অনেক সময় বাস্তব জীবন ভেবে ভুল করছে। দেশীয় বিনোদনের অপ্রতুলতার কারণে প্রতিবেশী দেশের সংস্কৃতি জেঁকে বসেছে এ দেশে। এসব অসুস্থ ধারার অপসংস্কৃতির ছোঁয়ায় যুবসমাজ বিভ্রান্তির সম্মুখীন। তথ্যপ্রযুক্তি যেমন জাতির অগ্রসরের ভূমিকা রাখতে পারে তেমনি তা জাতিসত্তার আদর্শিক নীতিকে উপড়ে ফেলতে পারে। প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশের ফলে বিশ্বায়নের এই যুগে হুমকির মুখে পড়েছে সমাজব্যবস্থা ও পরিবার।
দেশে কিশোর অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এর মূলে রয়েছে অপসংস্কৃতির ছোঁয়া। যে সময় তারা পড়াশোনা করে জাতির কারিগর হিসেবে নিজেদের গড়বে তখন তাদের হাতে কলমের পরিবর্তে স্থান করে নিচ্ছে মারণাস্ত্র। দেশে অপসংস্কৃতির প্রভাবে ব্যাপকহারে বিস্তার ঘটছে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, পরকীয়া, পারিবারিক কলহ, হত্যা, এসিড নিক্ষেপ, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। পাশাপাশি, বিজাতীয় অপসংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে লালিত বাঙালির স্বকীয় সংস্কৃতিকে মুছে ফেলছে।
সমাজে বিকৃত সংস্কৃতির বিস্তার এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে উদার ও যুক্তিবাদী সমাজব্যবস্থার গঠনে প্রয়োজন ছিল কিন্তু এখন সময় এসেছে অপসংস্কৃতির অতি আধুনিক বা প্রগতিশীলতার লাগাম টানার। এর আগ্রাসনে বন্ধের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে সুস্থ ও নিজস্ব সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার ও জনপ্রিয় করা। আজ যারা বিকৃত সংস্কৃতির বেড়াজালে আটকে গিয়ে অলস তন্দ্রাঘোরে আচ্ছন্ন, তারাই সঠিক নির্দেশনা পেলে উজ্জীবিত হবে দুর্বার প্রাণশক্তিতে। বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রকাশই আভিজাত্যের পরিচায়ক এই ধারণা ঘোচাতে হবে। শুধু প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করেই অপসংস্কৃতি প্রচার বন্ধ করা সম্ভব নয় এর জন্য চাই বাঙালির নিজস্ব জাতীয়তাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।