×

সারাদেশ

ভাঙনই বিষফোঁড়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২০, ০৮:২৮ পিএম

ভাঙনই বিষফোঁড়া

টেংরার ভাঙন

নওগাঁর মান্দা উপজেলার শিবনদের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের টেংরার ভাঙনস্থান দিয়ে হু-হু করে পানি প্রবেশ করছে। এতে করে ভাঙনস্থানটি এখন লক্ষাধিক মানুষের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানির প্রবল চাপে তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল। ভেসে গেছে বিল, জলাশয় ও পুকুরের মাছ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন চার উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। নদের বিপরীত তীরে মাত্র শতাধিক বিঘা জমির ফসল বাঁচাতে ও বছর ধরে মাছ শিকারের লোভে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ বারবার কেটে দিচ্ছে বাঁধটি। আর এতে প্রতিবছর অন্তত কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন দুর্গত ১২ ইউনিয়নের মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানান, আশির দশকে শিবনদের পূর্ব তীর দিয়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ বাঁধের মান্দা ও তানোর সীমান্তবর্তী এলাকায় টেংরা মৌজা অবস্থিত। এর আশপাশে অন্তত: তিন কিলোমিটার এলাকায় কোনো জনবসতি নেই। এলাকাটি একেবারেই নির্জন। ১৯৯৫ সালে ভয়াবহ বন্যার সময় দিনের বেলায় বাঁধটি কেটে দেয় নদের পশ্চিমতীরে অবস্থিত কামারগাঁ ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ওইদিন রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের শ্রীখন্ডা, দমদমা, মাঝিপাড়া ও দোস্তরামপুরসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন লাঠিসোটা ও দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফিল্মি স্টাইলে বাঁধটি কেটে দেয়। মুহুর্তে তলিয়ে যায় মান্দা, বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নসহ তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম।

কামারগাঁ ইউনিয়নের গাংহাটি, হাপানিয়াসহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা জানান, টেংরা এলাকাটি নির্জন, জনবসতি নেই। ওইসময় বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে এসব গ্রামের লোকজন পালাক্রমে রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিয়েছিলেন। রাতের বেলায় নদের পশ্চিমপারের লোকজন বাঁধটি কেটে দিতে এসে পাহারার কারণে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। ঘটনার দিন দুপুরে পাহারা না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাঁধটি কেটে দিয়ে পালিয়ে যায় ওপারের লোকজন।

তারা আরও জানান, ১৯৯৫ সালের পর বাঁধটি কয়েকবার বাঁধা হলেও রাতের অন্ধকারে ওপারের লোকজন কেটে দিয়ে নিজেদের ফসল রক্ষা করছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ভাঙনস্থান আবারও পুনঃনির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু একইভাবে রাতের আঁধারে কেটে দেয়া হয়। মাত্র শতাধিক বিঘা জমির ফসল ও কিছু বাড়িঘর রক্ষাসহ মাছ শিকারের লোভে স্বার্থান্বেষী কতিপয় ব্যক্তির নেতৃত্বে বাঁধটি বারবার কেটে দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এদিকে কয়েকদিনের একটানা বর্ষণে শিবনদের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই সপ্তাহ ধরে টেংরার ভাঙনস্থান দিয়ে হু-হু করে পানি প্রবেশ করছে। এতে নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া, কালিকাপুর, বিষ্ণুপুর ও নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোবিন্দপাড়া, নরদাস, সোনাডাঙ্গা, আউশপাড়া ও শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন, মোহনপুর উপজেলার রায়ঘাটি ও ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নসহ তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের গাংহাটি, হাপানিয়া, আব্দিপুর ও আমিরপুর গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে।

গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান জানান, বন্যার পানি ব্যাপকভাবে বাড়ছে। ইতোমধ্যে আমন ধানের বীজতলা, আউশ ধান, পাট ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে অনেক পানের বরজ। ভেসে গেছে কুমারপুর, ভরট্ট, পূর্ব দৌলতপুর, সোনাডাঙ্গা, ধর্মাদিলা, যশোবিলসহ অসংখ্য জলাশয় ও পুকুরের চাষকৃত মাছ।

কামারগাঁ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন জানান, ‘ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের সামান্য কিছু জমির ফসল বাঁচাতে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্বে বারবার বাঁধটি কেটে দেয়া হচ্ছে। এটি কারোর জন্যই কাম্য নয়। এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কহিনুর আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনে এ প্রসঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তথ্য জানতে হলে অফিসে আসতে হবে বলে লাইন কেটে দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App