×

জাতীয়

বিশেষজ্ঞ সুপারিশ উপেক্ষা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২০, ০৯:১৪ এএম

কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ ও নগরবিদদের পরামর্শ উপেক্ষা করেই পশুরহাট বসানোর সিদ্ধান্তে অনড় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবে হাটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) পাঁচটি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) পাঁচটি মোট ১০টি হাটের ইজারা চ‚ড়ান্ত হয়েছে। এর বাইরে থাকছে গাবতলী ও সারুলিয়ায় দুটি স্থায়ী পশুর হাট। এর আগে ২৪টি অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত ছিল।

গত রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণমাধ্যমকে জানান, করোনার বিস্তাররোধে ঢাকার দুই সিটি মেয়রকে রাজধানীর জনবহুল স্থান বা রাস্তায় কোনো পশুর হাট না বসানোর অনুরোধ করা হয়েছে। তারা বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।

জানা গেছে, ইজারার জন্য চ‚ড়ান্ত ১০টি পশুরহাট হলো ডিএনসিসিতে কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন মাঠের খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনি বাজারমুখী রাস্তার খালি জায়গা, ১০০ ফুট ভাটারা ইউনিয়ন সাইদনগর এবং উত্তরখানের মৈনারটেক এলাকায়। আর ডিএসসিসির পাঁচটি হাট হলো কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আফতাবনগর ব্লক-ই, এফ, জির সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা এবং পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা। তবে ডিএনসিসি অনলাইনে ডিজিটাল হাট উদ্বোধন করলেও ডিএসসিসি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা পাঁচটি পশুর হাটের ইজারা চ‚ড়ান্ত করেছি। ১৯ জুলাই ইজারার দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। নতুন করে আর কোনো হাট ইজারার সম্ভাবনা নেই। জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি গত

রবিবারের সভায় আলোচনা হয়েছে। নগরবাসীর কথা ভেবে সব হাটে যথাযথভাবে যেন স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়, সেটা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়া হবে। এদিকে, গতকাল ডিএনসিসির হাট ইজারা কমিটির সভায় আগের তিনটিসহ আরো দুইটি অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। সংস্থাটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক জানান, এ বছর মোট ছয়টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি স্থায়ী (গাবতলী) আর পাঁচটি অস্থায়ী। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, ইতোপূর্বে সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সঙ্গে বৈঠকে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেই পশুরহাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি হাটে একটি গরু থেকে আরেকটি গরুর দূরত্বও থাকবে। এছাড়া হাটে জ¦র মাপার যন্ত্র থাকবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকবে। প্রত্যেককেই মাস্ক পরে হাটে আসতে হবে। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হাটের প্রস্তুতি আছে। জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি আমরা এখনো পাইনি। চিঠি পেলে তখন সিদ্ধান্ত নেব। এছাড়া অনলাইনে পশু কেনাবেচার ওপরও বেশি জোর দেয়ার কথা জানান তিনি। গত রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পশুরহাটে স্বাস্থ্যবিধির একটি গাইডলাইন তৈরি করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এর আগে গত শুক্রবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ বছর ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে কুরবানির পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। ভাইরাসের বিস্তার রোধে ঈদের ছুটিতে এই চার এলাকা থেকে অন্যান্য স্থানে যাতায়াত বন্ধ রাখারও পরামর্শ দেয়া হয়। কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মিরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধ জীবনযাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় কমিটি। এর আগে ১ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুরবানির পশুরহাট সংক্রমণের হার আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে কার্যকর গাইডলাইন তৈরি ও প্রয়োজনে পশুরহাটের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। যত্রতত্র হাটের অনুমতি দেয়া যাবে না।

এছাড়া নগরবিদরাও ঢাকায় পশুরহাট না বসানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। স্থপতি ইকবাল হাবিব ভোরের কাগজকে বলেন, এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় কেন পশুরহাট বসানো হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। যত চেষ্টা করাই হোক, কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। আইইডিসিআরের সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেনের মতে, এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় পশুরহাট বসানোর সিদ্ধান্ত একেবারেই জনস্বসাস্থ্যবিরোধী সিদ্ধান্ত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App