×

জাতীয়

স্নায়ুযুদ্ধে মন্ত্রী-ডিজি স্বাস্থ্য!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২০, ০৯:৪১ এএম

স্নায়ুযুদ্ধে মন্ত্রী-ডিজি স্বাস্থ্য!

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ/ফাইল ছবি।

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই সমালোচিত হচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মন্ত্রী এক কথা বললে ওই একই দিনে মহাপরিচালক বলেছেন ভিন্ন কথা। ফলে প্রকাশ পেয়েছে মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের মধ্যে দূরত্ব ও সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও। কেউ কেউ এটাকে মন্ত্রী ও মহাপরিচালকের ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ হিসেবেও অবিহিত করেছেন। ১৮ জুন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘করোনা ভাইরাসকে সঙ্গে করে দীর্ঘদিন পথ চলতে হবে বিশ^বাসীকে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। আগামী দুই-তিন বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে থাকতে পারে করোনার প্রাদুর্ভাব।’ এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হলে ওই দিনই ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে বলে বক্তব্যের সংশোধনী দেন মহাপরিচালক। সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে ব্যাখ্যা চায় মন্ত্রণালয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সেই ব্যাখ্যা দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছে। ভালো কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতারিত হয়েছে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়। অধিদপ্তরের এই বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে মহাপরিচালকের কাছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আবারো কারণ দর্শানোর নোটিস (শোকজ) পাঠানো হয়েছে। গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (২ শাখা) উপসচিব শারমিন আক্তার জাহান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। তাতে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির আগে কী কী বিষয় বিবেচনা করা হয়েছিল, চুক্তির পর শর্তগুলো প্রতিপালনে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বলতে কী বোঝানো হয়েছে, এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে দিতে বলেছে মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। উক্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছে। প্রসঙ্গত, সরেজমিন পরিদর্শন, হাসপাতাল পরিচালনার অনুমতি, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জনবল ও ল্যাবরেটরি ফ্যাসিলিটিজ বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত বিবেচিত হলে করোনা পরীক্ষা চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চুক্তি সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মন্ত্রী ও মহাপরিচালকের মধ্যে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন দ্ব›দ্ব চলছে। মহাপরিচালকের ওপর খুবই নাখোশ মন্ত্রী। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সচিবের সঙ্গেও প্রচ্ছন্ন বৈরিতা ছিল তার। শুরুর দিকে মন্ত্রী সচিবকে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করার চেষ্টাও করেছেন। অবশেষে করোনাকালে আগের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে বদলি করে নতুন সচিব বসানো হয়। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, মহাপরিচালকেও সরানো হবে। ওই কর্মকতার ধারণা, মন্ত্রী ও মহাপরিচালকের মধ্যে শীতল স্নায়ুযুদ্ধের ফলেই মহামারিকালেও স্বাস্থ্য খাতে এত অসঙ্গতি, এত অসংলগ্ন বক্তব্য। এরই ফলস্বরূপ মহাপরিচালকের বক্তব্য এবং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিস। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে গতকাল সন্ধ্যায় মহাপরিচালকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App