×

জাতীয়

সংজ্ঞা বদলেই বাড়ছে সুস্থতার হার!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২০, ০৯:৪৮ এএম

দেশে করোনার সংক্রমণের শুরু থেকে ২ মে পর্যন্ত খুব ধীরগতিতেই আক্রান্তদের সুস্থতার হার বাড়ছিল। কিন্তু কয়েক দফা সুস্থতার সংজ্ঞা পাল্টানোয় মধ্য দিয়ে এই হার এখন পৌঁছে গেছে ৫০ দশমিক ৯৩ শতাংশ প্রায় ৫১ শতাংশে। নমুনা পরীক্ষা কমিয়ে কম রোগী শনাক্ত এবং সুস্থতার সংজ্ঞা কয়েক দফা বদলে বেশি রোগী সুস্থ ঘোষণার বিষয়টি বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সংজ্ঞা অনুযায়ী, সুস্থ হওয়ার পরও কারো কারো দ্বিতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষা করে রিপোর্টে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এতে সুস্থতার সংজ্ঞা নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ২ মে পর্যন্ত সুস্থ হন মাত্র ১৭৭ জন। ২ জুলাই ৪ হাজার ৩৩৪ জনের সুস্থ হওয়ার কথা জানানো হয়। গতকাল জানানো হয়, ৫ হাজার ৫৮০ জন সুস্থ হওয়ার খবর, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৫ জনের মধ্যে ৯৩ হাজার ৬১৪ জনকেই সুস্থ বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অভিযোগ আছে, আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বাড়ছিল তাতে হাসপাতালে বেড সংকট তৈরি হয়েছিল। এ অবস্থায় সুস্থতার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে ভাইরাসের সংক্রমণ থাকার পরও হাজারো মানুষের দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা ছাড়াই সুস্থ ঘোষণা করে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তবে নিয়মিত বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশের ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির দেয়া গাইডলাইন অনুসরণ করে করোনা-বিষয়ক কারিগরি কমিটি সুস্থতার মানদণ্ড তথা সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিয়েছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ২১ দিন পর অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাতে পারেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে, ১৪-২১ দিন পর পজিটিভ হলেও ওই রোগীর ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষমতা থাকে না। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, একজনের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যা বলছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না থাকায় এ নিয়ে এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। কেননা, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃদু উপসর্গের অনেক রোগীর সুস্থ হতে ৩৭ দিনও সময় লেগেছে। আর এই ভাইরাসটি যেহেতু একেবারে নতুন তাই বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাকেও বিভিন্ন সময় তার আগের অবস্থান থেকে বেশ কয়েকবার সরে আসতে হয়েছে। জানা যায়, দেশে করোনার সংক্রমণের পর থেকে রোগীর সুস্থতার সংজ্ঞা তিনবার পরিবর্তন করা হয়। সুস্থতার প্রথম সংজ্ঞা নির্ধারিত হয় মার্চ মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। তখন বলা হয়, কারো দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হলে ১৪-২১ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় পরীক্ষা করা হবে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় নেগেটিভ এলে পরবর্তী ২৪-৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরেক দফা পরীক্ষা করানো হবে। তৃতীয়বারের পরীক্ষাতেও রিপোর্ট নেগেটিভ হলে রোগীকে সুস্থ বলা যাবে। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও রোগীকে আরো ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলা ছিল ওই সংজ্ঞায়। সুস্থতার সংজ্ঞা দ্বিতীয়বার বদল হয় ৫ মে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই সংজ্ঞায় বলা হয়, করোনা রোগীকে ছাড়পত্র দেয়ার আগে ৫টি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ছাড়াই জ্বর কমে গেলে কাশি বা শ্বাসসকষ্টজনিত সমস্যার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলে এবং ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর ২টি আরটি পিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ হলে রোগীকে সুস্থ বলা হবে। মিলবে হসপাতাল থেকে ছাড়পত্র। তবে কোনো কারণে পরীক্ষা করা সম্ভব না হলে পরপর ৩ দিন প্রথম ২টি শর্তপূরণ সাপেক্ষে রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন। এক্ষেত্রেও রোগীকে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে। ২৮ জুন তৃতীয়বারের মতো সুস্থতার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়। সেখানে বলা হয়, পরপর ৩ দিন রোগী করোনা উপসর্গবিহীন থাকলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাবেন। পরপর ১০ দিন উপসর্গবিহীন থাকলে রোগীর করোনামুক্ত ধরে বিবেচিত হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেকে সুস্থ হয়ে বাসায় চলে এলেও তার মধ্যে শরীরে ব্যথা, ক্লান্তিবোধ, গলাব্যথা এবং মাথাব্যথার মতো করোনার বিভিন্ন লক্ষণগুলো থেকে যাচ্ছে। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, সুস্থতার নামে সরকার ধানাই-পানাই শুরু করেছে। পরীক্ষা না করে শুধু উপসর্গ না থাকায় রোগীদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। পরবর্তী সময় কারো কারো করোনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজেটিভ আসছে। অনেকেই বাসায় এসে সঠিকভাবে কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে থাকছে না। তাদের দেহে যদি ভাইরাস থাকে তবে তারা সংক্রমণ ছড়াবে। হাসপাতাল থেকে রোগীকে ছাড়ার আগে অবশ্যই রোগীর নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই রোগীকে ছাড়তে হবে। প্রয়োজনে নমুনা পরীক্ষা পর্যন্ত জিনিসগুলো আনতে হবে। এভাবে রোগীদের ছেড়ে দেয়াটা ঠিক নয়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন মনে করেন দেশে সুস্থতার হার আরো অনেক বেশি। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতেই সুস্থতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমি মনে করি, এই হার আরো বেশি হবে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা ২১ দিন পর অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর কোনো আশঙ্কা থাকে না। তবে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে গেলেও অনান্য অসংক্রামক রোগে যারা ভুগছেন তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি। এজন্য তাদের অনেকের দীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। যারা ৩ দিন করোনা উপসর্গবিহীন থাকার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাচ্ছেন তাদের বাসায় এসে অবশ্যই কোয়ারেন্টাইন সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App