×

মুক্তচিন্তা

রক্তাক্ত জনপদে বন্দি শান্তির পায়রা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২০, ০৫:১৩ পিএম

রক্তাক্ত জনপদে বন্দি শান্তির পায়রা
দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময়ের অস্থিরতা ও মারমুখী সংঘর্ষের ইতি টেনে পার্বত্য চট্টগ্রামে সার্বিক শান্তি, সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও সশস্ত্র গেরিলা নেতা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি। সশস্ত্র সদস্যদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা নিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথ সুগম করা হয়। কিন্তু বহুল আলোচিত শান্তি চুক্তির প্রায় দুই যুগের কাছাকাছি সময় পেরিয়েও পাহাড়ে অশান্তির তীব্র আগুনের নিয়মিত আস্ফালনে বিঘ্নিত প্রত্যাশিত শান্তি। দুই যুগ আগে শান্তির যে বীজ বপন করা হয়েছিল যথাযথ যত্ন ও পদক্ষেপের অভাবে এতদিনেও তা পরিপূর্ণ বৃক্ষে পরিণত হতে পারেনি। একের পর এক গোলাগুলি, অগ্নিকাণ্ড, চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুম, খুন এবং ধর্ষণের মতো সব নারকীয় বর্বরতার নিয়মিত দৃশ্যায়নে তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষের মনে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের পাশাপাশি অজানা আতঙ্ক স্থায়ী বাসা গড়েছে। দীর্ঘদিনের ভূমিবিরোধ, চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে থাকা আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর (জেএসএস ও ইউপিডিএফ) মূল ও সংস্কারপন্থিদের মাঠ দখলের প্রতিযোগিতা, দায় স্বীকারহীন চাঁদাবাজি এবং অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারে সংগঠনগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান ইত্যাদি কারণে পার্বত্য জনপদের শান্তি ও সম্প্রীতি বারবার বাধাগ্রস্ত। সর্বশেষ বান্দরবানের বাঘমারায় জেএসএসের সংস্কারপন্থি দলের ৬ নেতাকর্মীকে ঘরে ঢুকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যার পর বিভেদের আগুন আবার উসকে উঠেছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এ পর্যন্ত দলগুলোর কোন্দল ও নানা কারণে প্রাণ গিয়েছে ৬০০রও বেশি মানুষের। এদের মধ্যে নির্বিবাদী সাধারণ মানুষও যেমন আছেন, তেমনি রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীও। অপহরণ, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনাও কম নয়। বর্তমান সরকার যখনই সুযোগ পেয়েছে চুক্তির বিষয়সমূহ পূরণে সচেষ্ট হলেও ক্ষমতার পালাবদলের কারণে সম্পাদিত চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব সম্প্রদায়ের নাগরিকদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষার অধিকার সমুন্নত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতির রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি আর পরিস্থিতি ঘোলাটে করে অশুভ শক্তির স্বার্থসিদ্ধির চর্চায় জিম্মি হচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রাপ্য অধিকার ও সার্বিক শান্তি। শিক্ষা, যোগাযোগ, পর্যটন, সংস্কৃতিসহ আর্থ-সামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের প্রকৃত সুফল সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হলে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধসহ লুকিয়ে থাকা দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় এনে বিদ্যমান সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা জরুরি। তবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ পার্বত্য জনপদের আকাশে পাখা মেলবে শান্তির পায়রা। শিক্ষক ও লেখক, বান্দরবান। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App