×

সারাদেশ

মাদ্রাসায় গোপন নিয়োগে বিমানে হাজির কর্মকর্তা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২০, ০৬:৪৫ পিএম

মাদ্রাসায় গোপন নিয়োগে বিমানে হাজির কর্মকর্তা!

নিয়োগ বোর্ডের ডিজির প্রতিনিধি উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম

ব্রহ্মপুত্রনদ বিচ্ছিন্ন উলিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি মাদ্রাসায় দুইজন কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা ২২ লাখ টাকায় রফা হয়েছে। গোপনে নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে এই নিয়োগ পরিচালিত হয় বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর সেই গোপন নিয়োগ বৈধ করতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি বিমানে উড়ে এসে সেখানে হাজির হন। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করে কর্মকর্তা আবারো বিমানে ফিরে যান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রৌমারীর প্রত্যন্ত অঞ্চল দাঁতভাঙা ফুলজান বছিরিয়া দাখিল মাদরাসায় একজন নিরাপত্তাকর্মী ও একজন আয়া পদে নিয়োগের জন্য প্রতিষ্ঠানটির সুপার ও ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাও. রফিকুল ইসলাম গোপনে দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন। বিষয়টি গোপন রেখে স্থানীয় চাকরি প্রত্যাশী ২/৩টি পরিবারের সঙ্গে সুপার দরকষাকষি শুরু করে। এর মধ্যে নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগের জন্য যথাক্রমে রুহুল আমিন ও আর্জিনা খাতুনের পরিবারের সঙ্গে ২২ লাখ টাকায় চূড়ান্ত রফা করেন। চাকরির জন্য নিম্নমধ্যবিত্ত দুটি পরিবারের টাকার যোগান দিতে এলাকার বিভিন্নজনের কাছে ধার-দেনা করতে গেলে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এরপর ‘বুদ্ধিমান’ ওই সুপার মাদ্রাসা এলাকার লোকজনের চোখে ধুলো দিয়ে অত্যন্ত গোপনে তার নিয়োগ প্রক্রিয়া গুছিয়ে আনেন। আয়া পদে ১০ প্রার্থী আবেদন করলেও তার পছন্দের প্রার্থীর নিয়োগ চূড়ান্ত করতে তিনজন প্রক্সি প্রার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র দেন। অন্যদিকে, নিরাপত্তাকর্মী পদে সুপারের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে রুহুল আমিনসহ মাত্র দুইজন প্রক্সি প্রার্থীকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র দেন। মাদরাসা সুপারের স্বাক্ষরিত বাংলায় লেখা ওই প্রবেশ পত্রটির ৯টি স্থানে বানান ভুল ছিল। জনশ্রুতি রয়েছে, ভেন্যু হিসেবে নির্বাচিত উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ি মাঝবিল বালিকা দাখিল মাদরাসাটি সুপারের জামাতার বাড়ির কাছে হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়াটি নির্বিঘ্ন করতে ওই এলাকা বেছে নেন সুপার। তবে গোপন নিয়োগের বিষয়টি ফাঁস হলে তোলপাড় শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন শেষে সুপার গত ৩ জুন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি চেয়ে আবেদন করেন। ওই পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুলাই মহাপরিচালক ২০১৮ সালের জনবল নিয়োগ কাঠামো অনুযায়ী নব-সৃষ্ট নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ বোর্ডে তার প্রতিনিধি হিসেবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন শাখার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনীত করেন। মাদরাসা সুপার মাও. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি অবহিত হয়ে ডিজি’র প্রতিনিধি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগসাজশ করে গোপনে নিয়োগ বোর্ডের বিষয়টি চূড়ান্ত করেন। এরপর পরিকল্পিতভাবে গত ১১ জুলাই ওই কর্মকতার্কে বিমানে করে উলিপুরে নিয়ে আসেন। মাত্র ঘণ্টা খানেকের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ডিজি’র প্রতিনিধি আবারও বিমানে করে ঢাকা ফিরে যান। এ গোপন নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবিএম নকিবুল হাসান নেপথ্যে ভূমিকা রাখেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে মাদরাসা সুপার মাও. রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানি মাদরাসায় ওঠার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা ধরনীবাড়ি মাঝবিল বালিকা দাখিল মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে টাকা লেনদেনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। এদিকে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নকিবুল হাসান বলেন, মাদরাসায় পানি থাকায় নিয়োগ নিয়োগ বোর্ড অন্যত্র নেয়া হয়েছে। ডিজির প্রতিনিধি আসার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, উনি ওইদিনই প্লেনে এসে প্লেনে গেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, আপনার মতো আমারও প্রশ্ন ছিল এত জায়গা থাকতে ওই এলাকায় কেন। নিয়োগ বোর্ডের ডিজির প্রতিনিধি উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বিমোনে করে আসার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় উলিপুরের একটি মাদরাসায় নিয়োগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিউদ্দিন আহমেদ জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই, যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে হয়তো এমনটা করেছে। তবে আপানাদের কোনো আপত্তি থাকলে অভিযোগ করেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App