×

জাতীয়

ভোটার বিহীন নির্বাচনের আরেক দৃষ্টান্ত হতে চলেছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২০, ০১:০২ পিএম

ভোটার বিহীন নির্বাচনের আরেক দৃষ্টান্ত হতে চলেছে

নির্বাচন

কাল মঙ্গলবার ১৪ জুলাই যশোর-৬ এবং বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচন। কাল সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত এ দুটি উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে মালামাল পাঠান হচ্ছে। এ দুটি উপনির্বাচনে ব্যালট পেপার ব্যবহার করবে ইসি। সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য ম্যাজিট্রেটসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অনিয়ম ঠেকাতে ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন। বন্ধ রয়েছে মোটর সাইকেল চলাচল। রাত থেকেই বন্ধ থাকবে সড়ক নৌসহ সহ সব ধরনের যান চালিত যানবাহন।

কিন্তু নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনার মধ্যে এ উপনির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া করোনার মধ্যে প্রচার প্রচারণাও তেমন করতে পারেন নি প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে দেশের রাজনৈতিক বিরোধী দল বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নেবার ঘোষনা দিয়েছে। এদিকে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দলটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষকী উপলক্ষে ১৪ জুলাই ভোট পিছানোর জন্য ইসিতে দু’দুবার আবেদন জানিয়েছে। সঙ্গত কারণে তারাও এ নির্বাচন নিয়ে তেমন ভাবে প্রচার প্রচারণা চালায়নি বলে দলটি সূত্রে জানা গেছে। ক্ষমততাসীন আওয়ামী লীগ দুটি আসনে প্রচার চালিয়েছেন। তবে করোনার মধ্যে ভোটারদের আগ্রহ তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। সেকারণে ফেয়ার ভোট হলে এ দুটি উপনির্বাচন কম ভোট কাস্ট হওয়ার রেকর্ড গড়তে চলেছে বলে মনে করছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হুসাইন ভোরের কাগজকে বলেছেন, করোনার কারণে এখন তেমন কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। সেকারণে যশোর ও বগুড়া-এ দুটি উপনির্বাচনে খুবই কম ভোট কাস্ট হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়তো ৪-৫ শতাংশ ভোট পড়তে পারে। এর আগে আমরা ঢাকা-১০ এর ভোট দেখেছি, সেখানে ৫-৬ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ইসি হয়তো ভোট করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে তারা রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিতে পারতো। সেটি সময় সাপেক্ষ ছিল। হয়তো সেখানে ইসির যুক্তি ছিল করোনা, কিন্তু করোনা কতদিন থাকবে তা কেউ বলতে পারে না। সুতরাং সুপ্রিম কোর্টে যুক্তিযুক্ত ব্যাখা তারা না দিতে পারলে কোর্ট বেঞ্চ বসিয়ে ভোট পিছানোর অন্য কোন উপায় আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতো। তবে সুপ্রিম কোর্টও সংবিধানের বাইরে যেতে পারে না। এ ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে এ ধরনের দৈব দুর্বিপাকের ক্ষেত্রে (১৮০ দিনের অধিক) আরো সময় বৃদ্ধির আইন পাশ করিয়ে নিতে পারলে সে ক্ষেত্রে ইসি নির্বাচনের জন্য এ ধরনের দৈব দুর্বিপাকের ক্ষেত্রে আরো সময় পেতে পারতো। তবে আমাদের দেশে প্রায়শ মাইনরিটি ভোটে সব সময় প্রতিনিধি নির্বাচন হয়, তাই এ দুটি উপনির্বাচনে ৪-৫ শতাংশ যাই ভোট পড়–ক তাতেই এমপি নির্বচিত হতে বাঁধা নেই।

আবার আরেক সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহম্মদ শাহ নেওয়াজ বলেছেন, মূলত সংবিধান অনুযায়ী আসন শুন্য হবার ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর সিইসি দৈব দুর্বিপাকের কারণে আরো ৯০ দিন অর্থাৎ ১৮০ দিন সর্বোচ্চ সময় পাবেন ভোট করতে। তাই সাংবিধান রক্ষার্থে ইসির এ দুটি উপনির্বাচন করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। তবে অনেকে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টে যাবার বিষয়ে, সেখানে কোর্ট আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারতো। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘণ করা কোর্টের পক্ষেও সম্ভব নয়। আবার দীর্ঘ দিন কোন আসন শুন্য ফেলে রাখার বিধান নেই, যে কারণে কমিশন ভোট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, এতে কত শতাংশ ভোট কাস্ট হলো সেটি বিষয় নয়। নির্বাচনে যে বেশী ভোট পাবেন তিনিই বিজয়ী হবেন। তবে করোনা মহামারির মধ্যে ভোট যে যতেষ্ট কম পড়বে তা বলাই বাহুল্য।

আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ইসির হাতে অন্য কোন উপায় না থাকায় এ দুটি আসনে ভোট করতে তারা বাধ্য হয়েছেন। রাষ্ট্রপতির পরামর্শক্রমে ভোট করা হচ্ছে। ২ শতাংশও ভোট পড়লেও তাতে প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে বাধা নেই। ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, ১৫ জুলাই বগুড়া-১ আসনের এবং ১৮ জুলাই যশোর-৬ আসনের ১৮০ দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে তার আগেই ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা না হলে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে যে কেউ ইসির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। সে ক্ষত্রে ইসির কারাবাসও হতে পারে। সুতরাং কোন উপায় না থাকায় যত কম ভোট পড়–ক ইসি ভোট করতে বাধ্য হয়েছে।

প্রসঙ্গ, করোনার মধ্যে গত ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচন করে ইসি, কিন্তু সেখানে ভোটারদের সাড়া না থাকায় মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট কাস্ট হবার ইতিহাস গড়ে ঢাকা-১০ এর এ নির্বাচন। তাছাড়া ভোটার, ভোটকর্মী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের করোনা সংক্রমনের আশঙ্খায় ইসি গত ২৯ মার্চ চসিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ যশোর-৬ ও বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত ঘোষনা করে ইসি। দীর্ঘদিন পরে গত ৪ জুলাই এক জরুরী বৈঠকে ১৪ জুলাই ভোট গ্রহনের ঘোষণা দেয় কমিশন। এ নির্বাচনে পূর্বের প্রার্থীরাই এ ভোটে অংশ নিচ্ছেন। নতুন করে অংশ গ্রহনের বা প্রত্যাহারের কোন সুযোগ ছিল না। তবে এ দুটি আসনের উপনির্বাচন কত কম শতাংশ ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন তা দেখার অপেক্ষায় সকলে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App