×

সারাদেশ

টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র ফেরত চায় সিলেট গ্যাসফিল্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২০, ১১:১৬ এএম

নিজেদের ‘মালিকানায়’ থাকা টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র ফেরত চায় সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফএল)। শুরু করতে চায় খনন কাজও। চলমান গ্যাস সংকট কাটাতে এই গ্যাসক্ষেত্র অনেকখানি কার্যকর ভ‚মিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে সিলেট গ্যাসফিল্ডস লি. কর্মচারী ইউনিয়ন সিবিএর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে ডিও দিয়েছেন স্থানীয় এমপি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এসজিএফএল কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, তারা সহসাই বিষয়টি খনিজ মন্ত্রণালয়ের বোর্ড সভায় আনুষ্ঠানিক উত্থাপন করে অনুমতি চাইবেন। টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রের (ছাতক গ্যাসফিল্ড) মূল মালিক সিলেট গ্যাসফিল্ড লি.। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান সরকারের সময় এই গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়। তৎকালীন পিপিএলের অধীনে ক‚প খনন করে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। স্বাধীনতার পর বিপিএল হয়ে এসজিএফএলের হাতেই ন্যস্ত হয় টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডের দায়িত্ব। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দৈনিক ৪-৫ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস এই কূপ থেকে উত্তোলিত হয়। পরবর্তীতে পানি ও বালুর পরিমাণ বেশি আসায় ১৯৮৬ সালে এই কূপটির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়। ক‚পের উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এসজিএফএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৩ সালে সরকারের তরফ থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকো ও দেশি প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে ক‚প খনন ও গ্যাস উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়। এরপর নাইকো ওই ক‚পে গ্যাস উত্তোলনের জন্য খনন কাজ শুরু করলে তাদের অদক্ষতায় ২০০৫ সালের জানুয়ারি ও জুন মাসে পরপর দুদফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে টেংরাটিলাসহ আশপাশের ১৫-২০ গ্রাম। টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল সেটির রায়ও ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষেই এসেছে রায়। কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার ফয়সালা হওয়ার পর নিজেদের সম্পত্তি রক্ষা ও ‘অপারেশন রাইটস’ দাবি করে সক্রিয় হয়েছে সিলেট গ্যাসফিল্ড লি.। বিষয়টি নিয়ে গত ১৭ জুন সিলেট গ্যাসফিল্ডস লি. কর্মচারী লীগের তরফ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করা হয়েছে। সিলেট গ্যাসফিল্ড লি. কর্মচারী লীগের সভাপতি মো. হারুন জানিয়েছেন, সরকারের অনুমতি পেলে টেংরাটিলায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্যাস উৎপাদন সম্ভব হবে। প্রথম পর্যায়ে একটি কূপ খননের পাশাপাশি ৩টি সিসমিক জরিপ পরিচালনা ও পরবর্তীতে দুটি ক‚পের খননসহ যাবতীয় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যাবে। এ জন্য তারা উদ্যোগী হয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির সঙ্গে একমত সিলেট গ্যাসফিল্ড লি. কর্তৃপক্ষ। টেংরাটিলা তাদের সম্পত্তি। খনন, গ্যাস উত্তোলন যা করার সবই করবে সিলেট গ্যাসফিল্ড কর্তৃপক্ষ। এখানে অন্য কারো অধিকার নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরাও। সিলেট গ্যাসফিল্ড লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুর উল্লাহ জানিয়েছেন, সিলেট গ্যাসফিল্ড লি. তার সম্পত্তি ফেরত চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি তিনি মন্ত্রণালয়ের আগামী বোর্ডসভায় উত্থাপন করবেন। এদিকে টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডের ‘অপারেশনাল রাইটস’ সিলেট গ্যাসফিল্ডকে দেয়া উচিত বলে মনে করেন স্থানীয় এমপি ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। এ ব্যাপারে তিনি গত ২৮ জুন খনিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে একটি ডিও পাঠিয়েছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, সিলেট গ্যাসফিল্ডের সিবিএ ও কর্মচারী লীগ নামে দুটি সংগঠন পৃথক আবেদনে তার কাছে এ দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানান মন্ত্রী। টেংরাটিলার স্থানীয় বাসিন্দা ও টেংরাটিলা দাবি আদায় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল আমীন জানান, টেংরাটিলার সম্পত্তি সিলেট গ্যাসফিল্ডের। কাগজপত্রে দালিলিক মালিক তারা। নাইকো ও বাপেক্স উড়ে এসে জুড়ে বসে দুদফা অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে পুরো এলাকা বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। এখনো টেংরাটিলার মানুষ সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। সুতরাং এসজিএফএলের মাধ্যমে টেংরাটিলায় খনন ও গ্যাস উত্তোলন শুরু হলে এলাকার মানুষ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App