×

জাতীয়

ঝুলে আছে মানবপাচারের ছয় হাজার মামলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২০, ১০:৫৮ এএম

ঝুলে আছে মানবপাচারের ছয় হাজার মামলা

ট্রলারে মানব পাচার (ফাইল ছবি)

দুর্বল তদন্ত ও আদালতে সাক্ষী হাজির করতে না পারায় মানবপাচারের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলা নিষ্পত্তিতে সময় লেগে যাচ্ছে বছরের পর বছর। আইনে জামিন অযোগ্য হলেও উচ্চ আদালত থেকে অধিকাংশ আসামিই জামিন পেয়ে যাচ্ছে। ফলে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত আট বছরে ৬ হাজার ১৩৪টি মামলা দায়ের হলেও নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৩৩টি। দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৫ হাজার ৯০১টি মামলা। আদালতে সময়মতো আসামি ও সাক্ষী হাজির করতে না পারায় শুনানি করা যাচ্ছে না এসব মামলা। ফলে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম ঝুলে আছে বছরের পর বছর। আদালত সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার ২০০২ সালের একটি মামলায় এবং তেজগাঁও থানায় ২০০৫ সালের একটি মামলায় কমপক্ষে অর্ধশতবার হাজিরার তারিখ পড়লেও পুলিশ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। এতে ভুক্তভোগীরা হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। মানবপাচার-সংক্রান্ত মামলাগুলো গতানুগতিকভাবেই তদন্ত করা এবং মামলার বাদী ও সাক্ষী দুর্বল থাকায় পাচারের শিকার মানুষ সুবিচার পায় না। ফলে প্রভাবশালী আসামিরা খালাস পেয়ে যায় এবং ফের মানবপাচারে যুক্ত হয়। ২০১২ সালের ‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে’ সংঘবদ্ধভাবে মানবপাচারের জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান আছে। তথ্য মতে, আইনটি হওয়ার পর গত আট বছরে দেশে ৬ হাজার ১৩৪টি মামলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন আদালতে ২৩৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বিচারাধীন রয়েছে ৫ হাজার ৯০১টি মামলা। এরমধ্যে ৩৩টি মামলায় ৫৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যে গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদা শহরের মরুভ‚মিতে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মারাত্মক আহত হন আরো ১১ জন। এ ঘটনায় নিহত পরিবার এবং বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ জুন হাজী কামাল হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাদের দাবি, হাজী কামাল মানবপাচারের মূল হোতা। রাজধানীর বনানী. তেজগাঁও ও পল্টন থানায় করা পৃথক মামলায় অভিযান চালিয়ে আরো ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুধু এ ঘটনায় নয়, বিদেশে ভাগ্য বদলাতে গিয়ে পাচারকারীদের হাতে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন অগণিত মানুষ। পাচারকারীদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। এসব ঘটনায় বিচার চেয়ে নিহতের পরিবার বিভিন্ন সময় মামলা করলেও সুবিচার পাচ্ছেন না। অবিলম্বে পাচারকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইনে বিচারের জন্য আলাদা করে বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান থাকলেও ৮ বছর পর চলতি বছর ৯ মার্চ সাত বিভাগে সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের আদেশ হয়েছে। একই সঙ্গে বিচারকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে, করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে আদালত বন্ধ থাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকরা এখনো আলাদা ট্রাইব্যুনালে কাজ শুরু করতে পারেননি। জানা গেছে, নারী ও শিশু আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলো মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তার আগ পর্যন্ত এসব মামলার বিচার কার্যক্রম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালেই চলবে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেন, মানবপাচার আইন অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে অভিযোগ গঠন আর ছয় মাসেই বিচার কার্যক্রম শেষ করার কথা। কিন্তু মামলায় সাক্ষী নিয়মিত পাওয়া যায় না। পুলিশ সাক্ষীদের ঠিকমতো হাজির করতে পারে না। ফলে মামলা বিচার শেষ করতে দেরি হচ্ছে। এসব মামলা আদালতে খুব গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনা করা উচিত। অল্প সময়ে এসব মামলার চার্জশিট দেয়া উচিত। দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা উচিত। তিনি বলেন, মানবপাচার মামলা বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠনের আদেশ হয়েছে কিন্তু এখনো সেটা কার্যকর হয়নি। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, মানবপাচার মামলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেন কোনো অপরাধী আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার পেয়ে না যায়। এ ব্যাপারে আদালত, প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থাকে সতর্ক থাকতে হবে। এটি করা গেলে নিশ্চয়ই মানবপাচার কমে আসবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App