×

জাতীয়

পরামর্শ উপেক্ষা করেই বসছে পশুর হাট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২০, ১০:৫০ এএম

পশুর হাটের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা করেছিলেন অনেক আগেই। এজন্য তখন থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পশুর হাট না বসানোর পরামর্শ দেন তারা। সর্বশেষ গত শুক্রবার কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির ১৪তম সভায়ও করোনার হটস্পট ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করেন কমিটির সদস্যরা। কিন্তু জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বসতে যাচ্ছে পশুর হাট। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) পশু বেচাকেনার জন্য ৪টি অস্থায়ী হাটের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করেছে। চট্টগ্রামেও কয়েকটি হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়েছে। গত শুক্রবার জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সভায় বলা হয়, করোনার সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ অবস্থায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধ জীবনযাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সুপারিশ করে কমিটি। ঈদুল আজহায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে পশুর হাট না বসানোরও সুপারিশ করা হয়। এক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ প্রতিরোধ নীতিমালা মেনে কুরবানি পশুর হাট বসানো যেতে পারে। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের কাজ পরামর্শ দেয়া। শুরু থেকেই আমরা যেসব পরামর্শ দিয়েছি তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসানো হবে। এটা কি আদৌ সম্ভব? পরামর্শক কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরামর্শই সরকার বাস্তবায়ন করছে না। এতে তাদের মনে এক ধরনের অসন্তোষও দেখা দিয়েছে। এ কারণে কমিটির সিনিয়র কয়েকজন সদস্য সম্প্রতি এক সভায় পদত্যাগেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার আমাদের সব পরামর্শ মানছে না এটা বলা যাবে না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরামর্শ যারা বাস্তবায়ন করবেন তারা কর্ণপাত করছে না। আমাদের পরামর্শ বা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে এক ধরনের শৈথিল্য দেখাচ্ছে। পশুর হাট নিয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই নিষেধ করে আসছি। গত শুক্রবারও কমিটির সভায় করোনার হটস্পট এলাকায় পশুর হাট না বসানোর প্রস্তাব করেছি। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন সদস্য বলেন, এসব কমিটি নামকাওয়াস্তে করা হয়েছে। অনেকটা লোক দেখানো। লকডাউন, টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো, হাসপাতালে আইসিইউ ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ উপেক্ষা করা হয়েছে। দেড় মাস আগে যে পরামর্শ দেয়া হয়েছে তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কুরবানির পশুর হাটের জন্য প্রস্তাবিত জনস্বাস্থ্যবিধিগুলো সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ হাট বসানোর জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। হাট বসানোর আগে মহামারি প্রতিরোধীসামগ্রী যেমন মাস্ক, সাবান, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী ইত্যাদি সংগ্রহ, পরিষ্কার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, নিরাপদ বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন করা, পশুর হাটের সঙ্গে জড়িত সব কর্মচারী ও হাট কমিটির সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করা, হাটের সঙ্গে জড়িত সব কর্মীকে স্বাস্থ্যবিধির প্রশিক্ষণ দেয়া, হাট কমিটির সব কর্মীর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা, যারা অসুস্থতা অনুভব করবে তাদের নির্ধারিত স্থানে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা এবং দ্রুততম সময়ে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, হাটে প্রবেশের জন্য গেট তৈরি করে প্রবেশপথে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণকারী যন্ত্র স্থাপন এবং শুধু স্বাভাবিক তাপমাত্রা (৯৮ দশমিক ৪ ফারেনহাইট) সম্পন্ন ব্যক্তিদেরই হাটে ঢুকতে দেয়া, মাস্ক ছাড়া কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা হাটের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না, একটি পশু থেকে আরেকটা পশুর দূরত্ব কমপক্ষে ৫ ফুট নিশ্চিত করা, গণশৌচাগারগুলোতে হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল সাবান, সাধারণ সাবান এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, অনলাইনে কুরবানির পশু কেনাবেচাকে উদ্বুদ্ধ করা, ক্রেতা/বিক্রেতাদের মূল্য দেয়া ও বের হওয়ার সময় সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা এবং সতর্কতার সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা, হাটে ক্রেতা/বিক্রেতাদের সংখ্যা ও তাদের চলাচল সীমিত করা, স্পর্শ ছাড়া মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা করা, প্রয়োজনে মূল্য পরিশোধ ও হাসিল আদায় কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানো, হাট কমিটির সবার ব্যক্তিগত সুরক্ষা জোরদার করা, মাইকিং, পোস্টার এবং বুলেটিন বোর্ডের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রচার করা, যদি হাটে সন্দেহভাজন কোভিড-১৯ রোগী থাকে তবে বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিকে অবহিত করা এবং প্রয়োজনে সিডিসির/স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App