জোরেশোরে চলছে ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২০, ১১:২৪ এএম
ফাইল ছবি
চলতি শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে, না ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত বাড়নো হবে এমন বিতর্কের মধ্যেই আগামী শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য পুরোদমে কাজ শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এরই মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়ার কাজ শেষের পথে।
বোর্ড বলছে, করোনার প্রকোপের মধ্যেও আগামী নভেম্বরের মধ্যে ২০২১ সালের পাঠ্যবই ছাপিয়ে দেশজুড়ে বিলি করতে চায়। অন্যদিকে ২০২০ সালের পাঠ্যবই ছাপাতে ‘দুষ্কর্ম’ করায় ৪টি ছাপাখানাকে কালো তালিকাভুক্ত এবং ৩টি ছাপাখানাকে দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এনসিটিবি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষ গণনা করা হয়। কিন্তু চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষ বাড়ানোর কথা বলেছেন শিক্ষা বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী ২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপানো হবে। এর মধ্যে মাধ্যমিকে প্রায় ২৪ কোটি ৪১ লাখ বই ছাপানো হবে। আর এখন পর্যন্ত প্রাথমিকের নতুন চাহিদা আসেনি। তবুও প্রাথমিকে পুরাতন চাহিদা ধরে প্রায় ১০ কোটি ৫৪ লাখ বই ছাপানো হবে। সব মিলিয়ে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপানো হবে। এজন্য ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ১১০০ কোটি টাকা। বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বই ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরুতে কিছুটা দেরি হলেও গত জুন থেকে দরপত্র আহ্বান শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী আগস্ট থেকে এসব পাঠ্যপুস্তক ছাপা শুরুর লক্ষ্য নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে এনসিটিবি।
জানতে চাইলে বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে মার্চ পর্যন্ত নেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবুও আমরা হয়তো আগামী আগস্ট থেকে বই ছাপানো শুরু করব। যদি আমরা আগস্টে পুরোদমে উৎপাদনে অর্থাৎ বই ছাপানোর কাজে চলে যেতে পারি, তাহলে নভেম্বরের মধ্যেই পাঠ্যবই উপজেলায় পাঠিয়ে দিতে পারব। পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দরপত্র আহ্বানের কাজ শেষ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দরপত্র খোলাও হয়েছে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ক্রয় কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদনের পর ছাপাখানার সঙ্গে চুক্তি হবে। এরপরই ছাপানোর কাজ শেষ হবে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠ্যবই ছাপানো শেষ হয়ে যেত। কিন্তু করোনার কারণে তা ২ মাস পিছিয়ে এখন নভেম্বরে শেষ হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০১০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বছরের প্রথম দিন পাঠ্যপুস্তক উৎসব করে বিনামূল্যের বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। চলতি বছর করোনার কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষাবর্ষ কীভাবে শেষ হবে সেটি নিয়েও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবুও এনসিটিবি জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপানোর কাজে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য গত জুনে দরপত্রের বেশির ভাগ কাজ অনলাইনে শেষ করেছেন।
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, কাগজ কেনার দরপত্র এ নিয়ে ৪ দফা পিছিয়েছে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এনসিটিবি এরই মধ্যে কর্ণফুলী পেপার (কেপিএম) থেকে ১ হাজার টন কাগজ কিনেছে। বাকি কাগজ কেনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ক্রয় কমিটিতে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এর ফলে যথাসময়ে পাঠ্যপুস্তক উৎপাদন করে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের বিষয়ে আশা প্রকাশ করছে এনসিটিবি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবার কাজ দেয়ার আগে নিশ্চিত হতে হবে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার সক্ষমতা আছে কিনা। সেই সঙ্গে কাজ পাওয়ার পর তা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা, সেটি নজরদারিতে রাখবে এনসিটিবির আলাদা পর্যবেক্ষক দল।
এদিকে মুদ্রণ মালিক সমিতি জানায়, তাদের আগের কাজের বিল এখনো সব দেয়া হয়নি। সেটি না পেলে নতুন বই ছাপার কাজ করতে অসুবিধা হবে তাদের। তবে আগের বিল পরিশোধ করার কাজ চলছে বলেও জানিয়েছে এনসিটিবি।
সূত্র জানায়, শুরু থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ গত ১০ বছরে মোট ৩৩১ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৬১৬ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আর ২০২১ সালে ছাপানো হবে প্রায় ৩৫ কোটি বই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রতি বছর সরকারের বিশাল এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে, যা সারাবিশ্বে নজরকাড়া সুনাম বয়ে এনেছে।
ছাপাখানা কালো তালিকাভুক্ত : ২০২০ সালের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশ পেয়েছিল ছাপাখানাগুলো। কিন্তু ঠিকঠাকমতো পাঠ্যবই ছাপিয়ে না দেয়ায় এনসিটিবি ৭টি ছাপাখানার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের আশ্রমপাড়া এলাকার মোল্লা ইন্টারন্যাল প্রিন্টিং প্রেস এন্ড প্যাকেজিংকে এক বছরের জন্য, রাজধানীর ঢাকার সূত্রাপুরের ৩৪ আরএম দাস রোডের সেতু অফসেট প্রেসকে স্থায়ীভাবে, সূত্রাপুরের ৪১/৪২ রূপচান লেনের নিউ নাহার প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্সকে স্থায়ীভাবে ও একই এলাকার পিসি ব্যানার্জি লেনের মা-বাবা প্রিন্টার্সকে স্থায়ীভাবে কালো তালিকাভুক্ত করেছে এনসিটিবি। একই সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সূত্রাপুরের ৮৭ আর এম দাস রোডের মেসার্স রাইয়্যান প্রিন্টার্স, ৩৪ আরএম দাস রোডের অয়ন প্রিন্টিং এবং মাতুয়াইলের ফাইভ স্টার প্রিন্টিং প্রেস পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এনসিটিবি।