×

জাতীয়

কোভিড বর্জ্য বাড়াচ্ছে সংক্রমণের ঝুঁকি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২০, ১১:৩৬ এএম

কোভিড বর্জ্য বাড়াচ্ছে সংক্রমণের ঝুঁকি
করোনার মহামারিতে সাধারণ মেডিকেল বর্জ্যরে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কোভিড বর্জ্য। বিগত ৪ মাসের করোনাকালে সারাদেশে কী পরিমাণ কোভিড বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে তার সঠিক কোনো হিসাব নেই। তবে জনস্বাস্থ্যবিদ ও পরিবেশবিদরা দাবি করছেন এই সময়ে কোভিড বর্জ্যরে কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিকেল বর্জ্যরে পরিমাণ বেড়েছে এক তৃতীয়াংশ। সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় না আনলে এই বর্জ্য করোনা ভাইরাস ছড়ানোর উৎস হয়ে উঠবে। মেডিকেল বর্জ্যরে সঙ্গে কোভিড বর্জ্য মিলে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপুল ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে গবেষণায় এ তথ্য এখন প্রমাণিত। ‘করোনাকালে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্যই জানানো হয়। গতকাল শনিবার সকালে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বক্তব্য রাখেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. পঙ্কজ কান্তি সূত্রধর, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কোভিড বর্জ্য মূলত ‘সংক্রামক বর্জ্য’। মেডিকেল বর্জ্য ও কোভিড বর্জ্য এ দুয়ের সমন্বয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের স্বাস্থ্য দুটোই বিপদগ্রস্ত। কোভিড বর্জ্য দুই ধরনের। প্রথমত কোভিড/সন্দেহভাজন কোভিড রোগীর ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী, হাঁচি-কাশি, কফ পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত কাপড়, টিস্যু পেপার, তোয়ালে/গামছা প্রভৃতি। দ্বিতীয়ত কোভিড রোগীর চিকিৎসায় সরাসরি কিছু বর্জ্য তৈরি হয় যেমন নেজাল ক্যানুলা, অক্সিজেন ক্যানুলা, ব্রিদিং ইনস্ট্রুমেন্ট, অক্সিজেন মাস্ক প্রভৃতি। রাস্তার দুপাশে প্রতিদিন ফেলে রাখা শত শত মাস্ক-গ্লাভস দেখা যায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আবর্জনার গাদায় ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী ফেলা হয়। বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা কোভিড বর্জ্য কীভাবে কোথায় ফেলতে হয় তা অধিকাংশ মানুষ জানে না। তারা বেশির ভাগই রাস্তার পাশে এসব ফেলে আসে। যেসব মহল্লায় স্থানীয় উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় সেখানে অন্য সব বর্জ্যরে মতো কোভিড বর্জ্যকে ছেঁড়াফাটা ব্যাগে সংগ্রাহকের হাতে কোনোমতে তুলে দেয়া হয়। যেসব ল্যাবরেটরিতে নমুনা সংগ্রহ ও করোনা পরীক্ষা করা হয় তাদের অনেকেই সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ধার ধারছে না। বিশেষ করে যেসব স্থানে করোনাপূর্ব কাল থেকেই মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছিল না, সেসব জায়গার অবস্থা ভয়াবহ। এটা বিবেচনা করেই জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রম গত ১৯ জুন একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ফ্যাক্টশিট প্রকাশ করেছে। সেখানে বিশ্বের দেশ সমূহের জন্য একটি প্রয়োগযোগ্য গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ২৩ এপ্রিল কোভিড-১৯ এর কারণে উদ্ভ‚ত অবস্থায় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, জনপরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। দুটো সংস্থাই তার নির্দেশিকায় মানুষের স্বাস্থ্য, সংক্রমণরোধ ও পরিবেশের দূষণরোধকে মূল ভিত্তি হিসাবে নির্ধারণ করেছে। এই অবস্থা নিরসনে পবা বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। সেগুলো হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে একটি ‘জাতীয় মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ গাইডলাইন তৈরি করা। এই গাইডলাইন মেনে চলতে প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা এবং জনসাধারণকেও উদ্বুদ্ধ ও বাধ্য করা। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য অফিস ও পরিবেশ অফিস অবশ্যই যুক্ত থাকবে। উপজেলা/জেলা পর্যায়ে ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি’ মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তত্ত্বাবধানে থাকবে। মেডিকেল বর্জ্য নদীনালা, খালবিল, পুকুর, ডোবা, ড্রেন, রাস্তার পাশে, খোলা জায়গা প্রভৃতি স্থানে ফেলা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। এটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। উপজেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত মেডিকেল বর্জ্যরে জন্য ‘ডাম্পিং স্থান’ এবং ‘ইনসেনিটার বা বিজ্ঞানসম্মত চুল্লি’ স্থাপন করা জরুরি। মেডিকেল বর্জ্য বিশেষ করে এই করোনাকালে সংক্রামক কোভিড বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে গণমাধ্যম, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মাঠ পর্যায়ের সব সরকারি ও এনজিও কর্মীদের এই কাজে যুক্ত করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App