×

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যমন্ত্রী-সচিব বনিবনা নেই, কাজে ঢিলেমি

Icon

nakib

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২০, ০৯:২৭ এএম

স্বাস্থ্যমন্ত্রী-সচিব বনিবনা নেই, কাজে ঢিলেমি

স্বাস্থ্যমন্ত্রী-সচিব

ভাইরাসের ভয়ে দুদিন ফাইল পড়ে থাকে মন্ত্রীর টেবিলে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের মধ্যে ‘বনিবনা’ না হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের কাজে ঢিলেমি দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মন্ত্রী মো. জাহিদ মালেকের ‘ইচ্ছাকৃত’ ধীরগতির কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এরফলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে যোগ দিয়ে প্রতি পদে পদে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন সচিব মো. আব্দুল মান্নান। এই নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নানা রকম নেতিবাচক কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব দ্রুত কোনো নথির সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে ইচ্ছে করেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী তা বিলম্বিত করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে যে কোনো নথি গেলে সেটা দুদিন টেবিলের ওপর পড়ে থাকে। তিনি সুরক্ষার দোহাই দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নথিতে (ফাইলে) সই দেন না। মন্ত্রীর যুক্তি, ফাইলে যদি কোনো ভাইরাস থাকে, তা মুক্ত হতে কমপক্ষে দুদিন সময় লাগবে- তাই ফাইলটি পড়ে থাকে। তৃতীয় দিন মন্ত্রী এই ফাইলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘দুইদিন দুই বছরের সমান’। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়াই এখানে মূল চ্যালেঞ্জ। এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আনার যে চেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে করা হচ্ছে- সেই গতিতে ‘স্পিড ব্রেকার’ বসিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী নিজেই। জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান গতকাল শুক্রবার ভোরের কাগজকে বলেন, মন্ত্রীর সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সম্পর্কও খারাপ নয়। মূল কথা হচ্ছে- কাজের ক্ষেত্রে একেকজনের একেক স্টাইল থাকে। কোনো কাজের ক্ষেত্রে আমি হয়ত স্পিডে গেলাম, কিন্তু মন্ত্রী হয়ত চললেন ধীরগতিতে। আমি হয়ত চাইলাম দ্রুত সিদ্ধান্ত, তিনি দিলেন দেরিতে। আর এসব বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে আমার অতিরিক্ত কোনো শব্দ বা বাক্য বিনিময় হয়নি। তবে এসব ‘কিছু না’ বলেও জানান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এখন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তিনটি। প্রথমত, করোনা মোকাবিলায় জন্য গতিশীলভাবে কাজ করা এবং সারাদেশের খোঁজখবর রাখা; দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি বন্ধ করা এবং তৃতীয়ত, সবগুলো মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করা। এসব কাজ সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য একের পর এক সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সরাসরি তদারকি করছে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম। এরপরও যখন কাজে গতি আনা যায়নি তখন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল হককে বদলি করে দায়িত্ব দেয়া হয় ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানকে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে দায়িত্ব নেয়ার পর কাজের গতি ফেরানোর চেষ্টা করেন নতুন সচিব। গতি ফেরানোর কাজে নেতৃত্ব দিতে গিয়েই মন্ত্রীর সঙ্গে নতুন সচিবের বনিবনা না হওয়ায় খবর সামনে চলে এসেছে। জানা গেছে, সম্প্রতি ভোলার সিভিল সার্জনকে ঝালকাঠিতে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু এই বদলি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মনঃপুত হয়নি। এরপরই ওই নথিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাকে যেন অবহিত করা হয়। এরপর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব নিজে থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে যান এবং বিষয়টি ব্যাখা করে বলেন, সিভিল সার্জন হিসেবে মন্ত্রী যে ফিটলিস্ট করেছিলেন সেখান থেকেই এই বদলি করা হয়েছে। এই ধরনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মন্ত্রীকে শুধু অবহিত করলেই চলে, মন্ত্রীর অনুমোদনের দরকার নেই। এছাড়া রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী কিছু কিছু সিদ্ধান্ত সচিবই দিতে পারেন, সেখানে মন্ত্রীর কোনো ভূমিকার দরকার নেই। সিভিল সার্জন তৈরি করার কাজ শুরু হয় একটি ফিটলিস্টের মাধ্যমে এবং এই ফিটলিস্ট তৈরি করার কাজ মন্ত্রী করেন। ফিটলিস্টের পর যখন একজন সিভিল সার্জনকে অন্য জায়গায় বদলি করতে হয়; তখন আর মন্ত্রীর অনুমতি দরকার হয় না। কিন্তু বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর একজন পিয়নের বদলির জন্য হলেও ফাইল মন্ত্রীর কাছে যেত এবং মন্ত্রীর টেবিলে দুদিন পরে থাকার পর মন্ত্রী সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেন। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড ছাড়াও সিএমএসডি নিয়ে মন্ত্রীর ক্ষোভ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে সিএমএসডিতে নতুন পরিচালক দেয়া হয়ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সরাসরি সিএমএসডির কার্যক্রম তদারকি করছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে- সিএমএসডির তিনজন কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা বর্তমান পরিচালককে অসহযোগিতা করছেন এবং বিভিন্ন কাজে বাধা দিচ্ছেন। এই তিনজন সিএমএসডি পরিচালকের বিরুদ্ধে নানা কুৎসাও রটাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুসন্ধানে এসব বিষয় ধরা পড়ে। এরপরই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এই তিন কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ জারি করেন। বদলি হওয়া তিন কর্মকর্তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। তারা মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার কাছাকাছি অবস্থান করেন। নতুন পরিচালক সিএমএসডিতে আগের দুর্নীতিগুলো মোচন করে একটি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তৈরির প্রতিষ্ঠা করছেন। এ অবস্থায় মন্ত্রীর এমন ঢিলেমি নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। তবে সচিব দায়িত্ব নিয়েই অধঃস্তনদের বলেছেন, যে ফাইলগুলো নীতিনির্ধারণী নয়, রুটিন মাফিক- সেই ফাইলগুলোর সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই দিয়ে দেবেন। যে ফাইলে মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত দরকার সেই ফাইলগুলো মন্ত্রীর দপ্তরে যাবে। এতে মন্ত্রী অসন্তুষ্ট হয়েছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ছে নানা জায়গায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App