×

অপরাধ

রিজেন্টের সাহেদকে চিনতেন না স্বাস্থ্যের ডিজি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২০, ০৭:৪২ পিএম

রিজেন্টের সাহেদকে চিনতেন না স্বাস্থ্যের ডিজি

রিজেন্ট হাপসপাতাল ও জেকেজি গ্রুপের কর্ণধাররা।

রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি গ্রুপের প্রতারণা বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনিবার (১১ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সহকারি পরিচালক (সমন্বয়) ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালে প্রতারণার বিষয়ে কিছু আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোঃ সাহেদ করিমের বিভিন্ন প্রতারণার খবর বেরিয়ে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার বিষয়ে আগে অবহিত ছিল না। এবছরের মার্চ মাসে আকস্মিকভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। কোনো বেসরকারি হাসপাতাল রোগী ভর্তি করাতে চাইছিল না। এমন ক্রান্তিকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঢাকা উত্তরা ও মিরপুরে অবস্থিত ওই নামে ক্লিনিকে হাসপাতাল হিসেবে ডেডিকেটেড করার আগ্রহ প্রকাশ করে। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হাসপাতাল সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়। তবে পরিদর্শনকালে চিকিৎসা উপযুক্ত দেখতে পেলেও লাইসেন্স নবায়ন ছিলনা। বেসরকারি পর্যায়ে রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে অপরাপর বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে উৎসাহ দিতে লাইসেন্স নবায়নের শর্ত দিয়ে হাসপাতালে সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়।

ওই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পরিচয় থাকা তো দূরের কথা আগে কখনো দেখেননি। তবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এরপর বেশ কয়েকবার তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসেছিলেন। এসময় মো. সাহেদ তার সাথে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি যোগাযোগ আছে এবং তার ক্লিনিকগুলোতে কোন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির করোনা আক্রান্ত আত্মীয় ভর্তি আছেন সেসব কথা বলার চেষ্টা করতেন। গোয়েন্দা ও অন্যান্য সূত্রে রিজেন্ট হাসপাতাল এ বিষয়ে কিছু অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এসেছিল।

এই প্রেক্ষিতে ৬ জুলাই আকস্মিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিতিতে র্যাব কতৃপক্ষ একটি যৌথ অভিযান চালানো হয়। হাসপাতালের সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমঝোতা স্মারক এর বিষয়ে অধিদপ্তরের অবস্থান পরিষ্কার। একটি মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতারিত হয়েছে এবং ৭ জুলাই আইনানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করেছে। স্বাভাবিকভাবেই সমঝোতা স্মারকের আর কোন মূল্য নেই। আমাদের প্রত্যাশা যারা এই প্রতারণার সাথে জড়িত তারা আইনের অধীনে যথাযথ শাস্তি পাবে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জোবেদা খাতুন হেলথকেয়ার (জেকেজি ) নিজে নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান প্রতারণার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়। বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সমন্বয়ক আরিফুল চৌধুরী ও ওভাল গ্রুপ লিমিটেড নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের স্বত্বাধিকারী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত স্বাস্থ্য সেবা সপ্তাহ ২০১৮-এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর দায়িত্ব পালন করে। চিকিৎসা পেশাজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের একাধিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এ দায়িত্ব পালন করে। সংকট শুরু হওয়ার পর আরিফুল চৌধুরী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আসেন এবং জানান তিনি জেকেজি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান প্রধান সমন্বয়ক দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে বাংলাদেশে কিছু করতে চায় এর মাধ্যমে পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পিসিআর ল্যাবগুলোকে সরবরাহ করা হবে । এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সরকারকে কোনো অর্থ দিতে হবেনা। ধারণাটি ভালো এবং করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন এই বিবেচনা থেকে গ্রুপের সাথে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় জেকেজি গ্রুপকে অনুমতি দেয়া যায় বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মনে হয়।

একটি ভাল কাজের সাথে সংযুক্ত থাকা মানসিকতা থেকে ঐতিহ্যবাহী তিতুমীর কলেজ কর্তৃপক্ষ জেকেজি গ্রুপের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ায়। পরবর্তীতে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জেকেজি গ্রুপকে প্রদত্ত বুথ পরিচালনার অনুমতি বাতিল করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণা করতে পারে এমন ধারণা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আদৌ ছিল না।

প্রসঙ্গত ইদানিং কোন কোন স্বার্থন্বেষী মহল এই বিষয়ে কল্পিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে।

এদিকে, নমুনা ফেলে দিয়ে হাজারো মনগড়া কোভিড-১৯ রিপোর্ট দেয়ার পর জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী এখন বলছেন, প্রতারণার বিষয়ে আগেই জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে।

তিনি চেয়ারম্যান নন দাবি করলেও পুলিশ বলছে, তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন গ্রেপ্তার হওয়া তার স্বামী আরিফুল। শিগগিরই সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও জানান তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App