প্রযুক্তির বিশ্বযুদ্ধ চলছে..
nakib
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২০, ০৩:৫৫ পিএম
প্রযুক্তি যুদ্ধ
বিশ্ব গত শতকে দুটি সামরিক বিশ্বযুদ্ধ দেখেছে। স্নায়ু যুদ্ধের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছে ৮০-৯০ এর দশকে। তারপর দেশে দেশে চলেছে অর্থনৈতিক অবরোধের নামে চাপে ফেলানোর চেষ্টা। সাইবার যুদ্ধেও প্রায়ই সরগরম হয়ে ওঠে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। তবে নতুন করে প্রযুক্তি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতের প্রযুক্তি পণ্য বাছাই করা নিয়ে একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে। হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের দিকে কিংবা চীনের দিকে ঝুকতে হবে এসব প্রতিষ্ঠানকে। ফলে বিশ্ব প্রযুক্তি সরবরাহ বাজার ব্যবস্থা সেরা পণ্য বেছে নেয়ার পরিবর্তে যে কোন একমুখি হতে বাধ্য হচ্ছে।
সর্বশেষ চীনের টিকটক অ্যাপ নিয়ে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে বিশ্বে। বিশ্বব্যাপি তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় টিকটক চীনের তৈরী একটি কোম্পানী। ভারতে সীমান্ত সংঘাতকে কেন্দ্র করে সম্প্রতী দেশটিতে এটা বন্ধ করার পর যুক্তরাষ্ট্রেও বন্ধ করার কথা বলা হচ্ছে।
বর্তমান বিশ্বের প্রধান দুই শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আর্টিফিসিয়াল ইন্টিরিজেন্স ও ৫ম প্রজন্মের ইন্টারনেট নিয়ে প্রতিযোগীতা করছে। দেশ দুটির মধ্যে অনেক ব্যবসায়িক চুক্তি থাকলেও এখন নিরাপত্তার স্বার্থে তাদেরকে আরো বেশি ভাবতে হচ্ছে। তাদের এ দ্বন্দ ছড়িয়ে পড়তে তাদের মিত্র দেশগুলোর মাঝেও। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যুক্তরাজ্য চীনের কোম্পানী হুয়াওয়েকে ৫-জি প্রযুক্তি স্থাপনের অনুমতি পুর্নবিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোম্পানীটির ওপর বারবার প্রতিবান্ধকতা ও নিষেধাজ্ঞা জারির পর যুক্তরাজ্য এমন সিদ্ধান্ত জানালো।
প্রযুক্তিকে নিজেদের করায়ত্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রতিযোগিতা করছে দুই প্রতিদ্বন্ধী যুক্তরাষ্ট্র-চীন। ১৯৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্র যখন আইবিএম এ মাইক্রোসফট তাদের উদ্ভাবনের মাধ্যমে সামনে আগাচ্ছিলো তখন চীন ব্যস্ত ছিল একক ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। বিশ্বের অন্যদেশ থেকে আলাদাভাবে সম্পূর্ণ নিজেদের একক ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়ে তুলে চীন। পরবর্তীতে রাশিয়াও চীনের সহযোগিতায় সে দিকে আগায়। ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ নিজেদের একটি প্রযুক্তিগত নির্ভরশীল একটি বিশ্ব তৈরী করছে চীন। ভারত সীমান্ত সংঘাতের ফলে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দিলেও নির্ভরতার জন্য চীন পণ্য পরিত্যাগ করতে পারছে না। এ ধারাবাহিকতায় বিশ্বে প্রযুক্তি পণ্যে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বাড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক আহ্বানে প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি নির্ভরশীলতা সৃষ্টির কথা বলেছেন।
অন্যদিকে চীনের এ নব উত্থানে বসে নেই যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানকে নিয়ে আলাদা বলয় তৈরীর চেষ্টায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের প্রতিষ্ঠানের ওপর একর পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাদেরকে নাজেহাল করছে বিশ্বের এ পরাশক্তি দেশটি। ইউরোপকে চীনের প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতে টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার পরই স্থানীয় অ্যাপের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চাপে ফেলে কাজ আদায়ের চেষ্টায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
টিকটক নিষেধাজ্ঞার সকল বাধা ওপেক্ষা করতে প্রয়োজনে চীনের বাইরে নতুন করে আলাদা অফিস করার চিন্ত করছে। নিরাপত্তার চেয়ে দুই পরাশক্তির প্রযুক্তি যুদ্ধই এখানে বড় করে সামনে আসছে। ফলে নতুন করে শুরু হওয়া এ যুদ্ধ আগামি দিনের প্রযুক্তি খাতকে কোন দিকে নিয়ে যায় সেটাই দেখার বিষয়।