×

মুক্তচিন্তা

কেমন আছে সমাজের চক্ষুশূলরা?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২০, ০৮:৩০ এএম

বাংলাদেশ বহুবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। যার দুর্ভোগ সীমাহীন। কেননা দুর্যোগ প্রতি ক্ষেত্রেই আমাদের গভীর দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয়। আর দারিদ্র্যের থেকে বড় দুর্ভোগ মানুষের জন্য আর কী হতে পারে? তবে ‘করোনা’ শব্দটি যেন সব দুর্ভোগের সীমাই অতিক্রম করেছে। গৃহবন্দি মানুষ, দীর্ঘ লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকার কারণে মন্দা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের ফলে সৃষ্ট দুর্ভোগের শেষ কোথায়? আমরা কেউ তা জানি না। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। শহর ছেড়ে অনেক মানুষ জীবিকার টানে আবার ফিরছেন গ্রামে। আশা একটাই, ফসল চাষ করে যদি জীবনযাত্রা চালিয়ে যাওয়া যায়! সেই আশায় ছেড়ে যাচ্ছেন এই সমাজ। কিন্তু এই সমাজের চক্ষুশূলদের কী অবস্থা? দীর্ঘ অবসরে কী অবস্থায় রয়েছে আমাদের প্রজন্মের চক্ষুশূলরা? খসে গিয়েছে কি? করোনার কারণে প্রায় ৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে আমাদের স্কুলগুলো। যে কারণে করোনার থেকেও অধিক মহামারি সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এই নি বিত্ত সমাজগুলোতে। যে মহামারি করোনা থেকেও ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। তবে সে দিকে আমাদের কারো খেয়াল নেই। করোনা নিয়ম মেনে চললে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু মানুষের চরিত্র? তা নিয়ন্ত্রণ করার ঠিক কতটুকু ক্ষমতা রাখি আমরা? মহামারির এই সময়ে মধ্যবিত্ত সমাজে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাই হয়ে উঠেছে সমাজের চক্ষুশূল। কী ভয়ঙ্কর আমাদের সমাজ। দারিদ্র্য দিয়ে যাদের চোখ বাঁধা। ছেলে বড় হয়েছে কাজে দিয়ে দাও, মেয়ের এত পড়াশোনা কিসের? এসব কথা মধ্যবিত্তদের জীবনে নতুন নয়। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পর্যায়ের সব মানুষ এই শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত। করোনা সময়ে এই পরিচিত রূপই হয়ে উঠেছে আরো ভয়ানক। যে ভয়াবহতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের। বাল্যবিয়ে আমাদের সমাজের জন্য নতুন বিষয় নয়। এই করোনার মধ্যই দিয়ে দেয়া হচ্ছে শিশু বয়সের মেয়েদের বিয়ে। আমাদের সমাজে কিশোর বয়সী মেয়েরাই বিশেষ করে বাল্যবিয়ের শিকার হয়। পরিবারের সদস্যদের যখন আয় কমে যায় তখন সংসারের খরচ কমানোর অন্যতম উপায় হয়, ঘরে মেয়ে থাকলে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া। এতে সংসারের খরচ কমে যায় বলে ধারণা করা হয়। যে চিত্র মধ্যবিত্তদের কাছে খুব পরিচিত। উচ্চবিত্তরা হয়তো এসব শুনে থাকবেন। বাংলাদেশে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রয়েছে চার মাস হলো। কত স্বপ্ন এই চার মাসে নীরবে হারিয়ে গেছে তার হিসাব কে রাখে? চার মাস মেয়েকে ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে? নিম্নবিত্তদের জীবনে তাও আবার হয় নাকি? অপরদিকে এপ্রিলের ১ তারিখের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে বহুদিন। করোনাকাল শেষ হলে ঠিক কতজন মেয়ে এই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারবে, তা নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে। আমাদের সমাজের চোখে কিশোরী মেয়েরাই যে সর্বকালেই চক্ষুশূল। আমাদের দেশের শিশুদের শ্রমিক হওয়ার পেছনে ব্যাপকভাবে দায়ী দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয় সেই শিশুরাও, যারা স্কুলে যায়। তাদের বেশিরভাগ অভিভাবকই তাদের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে ব্যর্থ হয়। ফলে তারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে স্কুলে পাঠানোর উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। আর এই করোনার সময় ছেলেমেয়েরাও ভাবছে, পড়াশোনা করে আর কী হবে? করোনা সংক্রমণ রোধ করার জন্য গত ১৮ মার্চ সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যে কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই তাদের নিজ গ্রামের বাড়ি চলে যান। প্রথম কিছুদিন একাডেমিক চাপের বাইরে, বাড়িতে আত্মীয়-পরিজনের কাছাকাছি থাকায় ভালো লাগলেও এখন তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন বিষয়। কবে ক্যাম্পাস খুলবে, লেখাপড়া শেষ হবে! অনার্সেই শিক্ষাজীবন থেকে এক বছর শেষ। এখনো রেজাল্ট হয়নি। পৃথিবীজুড়েই করোনার প্রভাবে মানুষের মানসিক সমস্যা সমগ্র বেড়ে গিয়েছে। তাই এই সমস্যার দায় দেশের নয়। তবে আমরা দরিদ্র, নিম্ন আয় কিংবা উন্নয়নশীল দেশের মানুষ। এই দায় যেন আমাদের দারিদ্র্যের। দারিদ্র্যই যেন আমাদের জন্য চরম অভিশাপস্বরূপ। তবে এই অভিশাপ শুধু নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের জন্য। উচ্চবিত্তদের জন্য নয়। কেননা উচ্চবিত্তদের মনের যে অভাব, সে অভাব সব অভিশাপেরই ঊর্ধ্বে। করোনা আতঙ্ক, লকডাউন, রোজগারহীনতা, বেকারত্ব, চাকরি হারানোর ভয় এবং সর্বোপরি গৃহবন্দি দশার মধ্যেও উচ্চবিত্তরা যে মানসিক দারিদ্র্যে ভুগছেন, তা কোনোভাবেই শেষ হওয়ার নয়। এরপর হত্যা, মারামারি, রাহাজানি করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেলে দোষ হবে দারিদ্র্যের। পেছনের খবর কেউ রাখবে না। চাপা পড়ে যাবে শত শত ফুল ঝরে যাওয়ার খবর।

শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতিকর্মী, ময়মনসিংহ।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App