×

জাতীয়

করোনায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে দেশের নারী ও কিশোরী

Icon

nakib

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২০, ১০:০১ এএম

প্রতিবছর সারাবিশ্বে ১১ জুলাই পালিত হয় বিশ্বজনসংখ্যা দিবস। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার (১১ জুলাই) বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২০ পালিত হচ্ছে। তবে এমন একটা পরিস্থিতিতে এ দিনটি পালিত হচ্ছে, যখন সারা বিশ্ব করোনা মহামারীতে আক্রান্ত। এমন পরিস্থিতিতে ‘কোভিড-১৯ কে প্রতিরোধ করি - নারী ও কিশোরীর সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করি’ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে বাংলাদেশেও জনসংখ্যা দিবস পালিত হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশ অগ্রগতি হলেও করোনাকালীন সময়ে এবং পরবর্তীতে আমাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনসহ নারী ও কিশোরীদের সুস্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বড় চ্যলেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সর্ম্পকে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে করেনাকালে বাল্য বিয়ে, অল্প বয়সে গর্ভধারণ, গর্ভপাতসহ বিভিন্ন প্রকার ঘটনা ঘটছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নারী ও কিশোরীর প্রজনন স্বাস্থ্য। এদিকে, গর্ভকালীন সেবা, নিরাপদ প্রসব ও পরবর্তী সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা। কারণ এখনও দেশের ১২ ভাগ নারী-কিশোরী তাদের স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে। অ্যাডভান্স ফ্যামিলি প্ল্যানিং (এএফপি) মিডিয়া অ্যাডভোকেসির টিম লিডার পুলক রাহা জানান, করোনার মহামারীতে গ্রাম ও শহর সব জায়গার মানুষ বলতে গেলে ঘরবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তবে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলছে গোপনে বাল্যবিয়ের আয়োজন। করোনাকালিন আর্থিক সংকটের কারনে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তাদের কিশোরী কন্যাদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। করেনাকালে বাল্য বিবাহের হার বাড়ছে: কোভিড-১৯ কালিন সময়ে আমাদের দেশের কিশোরীদের অবস্থা বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যায়, বিডিএইচএস ২০১৭-১৮ রিপোর্ট অনুসারে বর্তমানে আমাদের বাল্য বিবাহের হার ৫৯ শতাংশ। যদিও কোন সুনির্দিষ্ট জরিপ না থাকলেও ওয়ার্ল্ড ভিশন ইনটারন্যাশনাল আশংকা করছে আগামী দুই বছরে সারা বিশ্বে ৪০ লাখ শিশু বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে পড়বে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বাল্যবিয়ের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গত তিনমাসে বিভিন্ন প্রত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের একটি বালিকা বিদ্যালয়ের ১৩ জন কিশোরীর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে এ করোনা মহামারীর মধ্যে। সারা বাংলাদেশে এখন একইভাবে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে হাজার হাজার কিশোরী। আর বাল্যবিবাহের ফল হিসাবে কিশোরী গর্ভধারনের হারও বেড়ে যাবে। কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি নাসিমা আক্তার জলি বলেন, বাল্যবিয়ে রোধে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি অসহায় পরিবারের অবস্থা ফেরানোও জরুরি। এসব পরিবারকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির টাকা বাড়ানো এবং তা যথাসময়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বাল্যবিয়ে রোধে আইন প্রয়োগের দিকেও নজর দিতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ছেড়ে দেয়ার প্রবনতা বাড়ছে : ২০১৮ এর বিডিএইচএস এর তথ্যমতে কিশোরীমায়ের গর্ভধারনের হার ২৮ শতাংশ যা ২০১৪ তে ছিল ৩১ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি বেশ ভালই ছিল। কিন্তু বর্তমান সৃষ্ট করোনা মহামারির কারনে এ অর্জন ধরে রাখা কতটা সম্ভব হবে তা বলা কঠিন। ফলে আমাদের জনসংখ্যার উপর একটি চাপ সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলি নিয়মিত সেবা না দেয়ার কারনে কিশোরীরা তাদের প্রয়োজনীয় প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে। মাতৃস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলেছে করোনা : চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট এর প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে করোনার কারনে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে আগামী দিনগলোতে শিশু ও মাতৃমৃত্যু বাড়ার আশংকা রয়েছে। কারন পরিবার পরিকল্পনা সেবার প্রায় ১০ শতাংশ কমে যাবার সম্ভবনা রয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমবে এবং অনিরাপদ গর্ভপাত বাড়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। করোনা বিষয়ক পাবলিক হেলথ এ্যাডভাইজারি কমিটির মিটিং সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ এর মার্চে প্রসবপূর্ব সেবা পাওয়া নারীর সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ৫২৬ জন। আর গত মার্চ মাসে এ সংখ্যা ৩৬ হাজার ৪১৫ জন। এপ্রিলে এ অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়। তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিলে প্রসবপূর্ব সেবা নেয় ৪২ হাজার ৫৭১ জন। আর চলতি বছরের এপ্রিলে সেবা পেয়েছে মাত্র ১৮ হাজার ৬২ জন। আবার প্রতিষ্ঠানিক প্রসব কমে যাওয়ায় মাতৃর্মত্যুর হার বেড়ে যাবার সম্ভবনা রয়েছে। অধিকাংশ বাড়িতে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর সেবা পাচ্ছে না এবং একই সাথে প্রসব পরবর্তি পরিবারপরিকল্পনা সেবা দারুনভাবে ব্যহত হচ্ছে। অপর্যাপ্ত বাজেট: সম্প্রতি ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষনা হয়েছে। সেখানে পরিবার পরিকল্পনা ও সেবা খাতে ২৯ হাজার২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দ্ আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন মেরিস্টোপ বাংলাদেশের এ্যডভান্স ফ্যামিলি প্লানিং কার্যক্রমের সমন্বয়কারী মনজুন নাহার। এ বিষয়ে বলেন, করোনাকালিন এবং করোনা পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করতে হলে বাজেট কতটা সহায়ক হবে তা এখনই ভেবে দেখা দরকার। পাশাপাশি বাজেটের সাঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পরিবারপরিকল্পন খাতে বাজেট বাড়ানো দরকার। স্থানীয় সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিত করতে পারলেই কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি। মনজুন নাহার বলেন, পরিবার পরিকল্পনার পলিসিতে এ বিষয়ে কৌশলগত পরিবর্তন করতে না পারলে টিএফআর ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ০০ তে আনার পরিকল্পনা,পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৬২ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ৭৫ শতাংশ উন্নিত করার পরিকল্পনা, অপূরনীয় চাহিদা ১২ শতাংশ থেকে নামিয়ে আনা এবং বাল্যবিবাহের হার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। তার মতে, করোনা মহামারীকালীন সময়ে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার যে চাপ তৈরি হবে তা সামলানো অনেক কঠিন হয়ে পড়বে, যা দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক ভারাসাম্যকে বিঘ্নিত করবে। আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস : ‘কোভিড-১৯ কে প্রতিরোধ করি - নারী ও কিশোরীর সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করি’ শ্লোগানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২০। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আইইএম ইউনিট এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ পরিবার পরিকল্পনা কর্মী ও শ্রেষ্ঠ সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হবে। একইসঙ্গে মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ও মিডিয়া ফেলোশিপ ২০২০ দেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App