×

সাহিত্য

সমন্বিত চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২০, ১২:৪৬ পিএম

সমন্বিত চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবো

হাস্যোজ্জ্বল আবুল হায়াত

সমন্বিত চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবো

বাসায় আবুল হায়াত। ফাইল ছবি।

সমন্বিত চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবো

আবুল হায়াত।

বিশেষ সাক্ষাৎকার আবুল হায়াত অভিনয়শিল্পী ও লেখক

আবুল হায়াত। একজন পরিপূর্ণ শিল্পী। ছেষট্টি বছর আগে মহল্লার মঞ্চে অভিনয়ে এসে নাটকেই ঢেলে দিয়েছিলেন মনপ্রাণ। সেই থেকে আবুল হায়াতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেল অভিনয়। ব্যক্তি পরিচয় ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন বাংলার নাট্যমঞ্চের সুপরিচিত এক অভিনেতা। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার চর্চা ও তার আরও অনেক পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের টিভিনাটক ও চলচ্চিত্রে দাপিয়ে বেড়ানো অভিনেতা আবুল হায়াত। একাধারে অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা। পাশাপাশি সাহিত্যচর্চায় প্রমাণ করেছেন সৃজনশীলতা। কথাসাহিত্যের নানা শাখায় তার বিচরণ। স্বাচ্ছন্দ্য পান গল্প আর উপন্যাসে। নাটক রচনায়ও তার উপস্থিতি নিয়মিত। অনুবাদ আর প্রবন্ধেও আছে তার দক্ষতা। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই প্রকাশিত হয় তার লেখা কলাম।

বিশিষ্ট এই নাট্য ব্যক্তিত্বের করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সময়ে করার তো আর কিছু নেই। প্রধানত পড়াশোনা, টেলিভিশন দেখা, ফেসবুকিং করা, নানা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করি। এ ছাড়া লেখালেখি করছি। এরই মধ্যে দুটো উপন্যাস লিখেছি। প্রথমটার নাম হচ্ছে ‘স্বপ্নের বৃষ্টি’, দ্বিতীয়টার নাম হচ্ছে ‘দ্বিতীয় বাসর’। এছাড়া রেডিওর জন্য একটা নাটক লিখছি। বাসায় বসে বই পড়ছি, এ ছাড়া এ ঘর থেকে ও ঘরে এ বারান্দা থেকে ও বারান্দায় হাঁটাহাটি করি। অনেক সময় প্রিয় সিনেমাগুলো দেখছি। কিন্তু এগুলো করতে করতে ক্লান্তি চলে আসে। একমাত্র লেখালেখির ক্ষেত্রেই কখনও ক্লান্ত হই না। বরং যত সময় যায়, ততই লেখার মধ্যে ডুবে যাই। নাতি-নাতনীদের সঙ্গে ফোনে কথা বার্তাও বলি।

[caption id="attachment_230795" align="aligncenter" width="700"] বাসায় একান্ত মুহূর্তে আবুল হায়াত[/caption]

করোনার এই সময়টাতে চেনা পৃথিবীর কতোটা বদল ঘটেছে জানতে চাইলে সুঅভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, বদলে গেছে আমূল। কোনো আপনজনের কাছে যেতে পারছি না। নিকটাত্মীয় কারো অসুস্থতার খবর পেয়ে এমনকি মৃত্যু সংবাদ পেয়েও গিয়ে সমবেদনা জানাতে পারছি না। লক ডাউনের সময়ও পারিনি এখনও পারছি না। কারণ এখনও সেল্ফ লকডাউনের মধ্যে আছি। কারণ পরিবেশ তো অনুকূলে আসেনি আমাদের। বরং আরও দুর্যোগ এবং ভয়াবহতা বেড়েছে। সুতরাং যতই লকডাউন উঠিয়ে ফেলি আর যাই করি, পরিবেশ মোটেও আমাদের অনুকূলে নয়। যারা বয়স্ক মানুষ ব্যাপারটা তাদের জন্য বিপজ্জনক আরো বেশি।

একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিৎ যেহেতু সরকার লকডাউন করবেন না, তাহলে সেক্ষেত্রে আমাদের নিজেদেরই সাবধান হতে হবে। সাবধান হওয়া ছাড়া তো কোনো উপায় নেই। আমার নিজের জীবনটা তো আমাকেই রক্ষা করতে হবে। সরকার তো এসে জনে জনে রক্ষা করতে পারবে না। সরকার নির্দেশনা দিচ্ছে, উপদেশ দিচ্ছে, বলছে মানুষকে সাবধান হতে। মানুষ যদি সাবধান না হয় সেটা তার দোষ। এ নিয়ে সরকারকে দোষ দিতে পারি না। যেহেতু সরকার বলে দিয়েছে, আপনি এই করেন, ওটা করবেন না, আপনি এইভাবে চলেন। এখন মানুষ তা মানবে কি না তার নিজের ওপরই নির্ভর করছে- নিজেকে তিনি কীভাবে প্রটেকশান দেবেন।

আমাদের এখানে কাউকে কাউকে বলতে শুনছি এবং দেখছি, গায়ের জোরে তারা বলছে, কিচ্ছু হবে না। আমি কেন মুখোশ পরব? আমি কেন গ্লাভস পরব? কেন আমি দূরে দূরে থাকবো? আমি বাজারে যাব, মাছ কিনব, ভিড়ের মধ্যে ঢুকে গরু কিনব, জবাই করব। এরকমই তাদের গায়ের জোর। কিন্তু গায়ের জোরে তো ভাইরাস ঠেকাতে পারবেন না। ভাইরাস থেকে প্রোটেকশান নেয়ার জন্য যে নিয়ম সেটা মানতে হবে। যতোটা সম্ভব জীবন-জীবিকা চালাতে হবে সেটাও ঠিক। সেটা করতে গিয়ে যতটুকু সম্ভব নিজেকে সংযত এবং নিরাপদে রাখতে হবে। কিন্তু দেখছি জনগণ অতিসাহসী হয়ে উঠেছে। তারা কিছুই মানতে চাচ্ছে না। এটা খুবই বিপজ্জনক। সামনে আরেক ঈদ আসছে। এই ঈদে কী যে ম্যাসাকার হবে ভেবেই শংকিত। এক ঈদে তো দেখলাম কী হয়েছিল, এই ঈদে কী যে হবে তা একমাত্র আল্লাহতালাই বলতে পারবেন।

[caption id="attachment_230793" align="aligncenter" width="700"] আবুল হায়াত[/caption]

করোনার এই অভিঘাত থেকে বাংলাদেশ কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করেন? জানতে চাইলে এই নাট্য নির্দেশক বলেন, পারবে কি না নয়। পারতে তো হবে। এটা হলো কথা। পারতে হলে সবারই সমন্বিত চেষ্টা লাগবে। সরকার তো সরকারের তরফ থেকে করবে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। করোনার কারণে আমাদের যে সময়টা নষ্ট হয়েছে, যে কাজগুলো আমরা করতে পারিনি, যে কাজগুলো করা দরকার সেগুলোর ব্যাপারে সবাইকে সিরিয়াস হতে হবে। না পারার কোনো কারণ নেই। সময় লাগবে নিশ্চয়ই। গোটাই পৃথিবীই তো স্থবির হয়ে গেছে। ঘুরে দাঁড়াতে সবাই চেষ্টা করবে। আমাদেরও চেষ্টা করতে হবে। সবাই যদি সমন্বিতভাবে এবং সৎভাবে চেষ্টা করি অবশ্যই পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App