বিদেশে বাংলাদেশীদের বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২০, ০১:৫৭ পিএম
করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে বর্তমান সরকার ক্রমাগত ব্যর্থতা প্রদর্শন করে আসছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, অনেকগুলো দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বাংলাদেশীদের ইতালিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এটা একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি।
শুক্রবার (১০জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ইতালিতে বাংলাদেশীদের বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশীদের বহনকারী বিমানকে বলা হচ্ছে “করোনা বোমা”।
রিজভী বলেন, শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী যারা গত বুধবার ইতালির রোমের বিমানবন্দরে গিয়ে পৌঁছেছিলেন, সেখানে তাদের অনেকের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় প্রায় সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইতালির মুলধারার গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ভুয়া সার্টিফিকেট কেনা বেচা নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার শুরু থেকেই যে ধরণের ঢিলেঢালা মনোভাব প্রদর্শন করছিলো তার সমূহ বিপদ আঁচ করতে পেরে আমরা সরকারকে আগেই সতর্ক করে বলেছিলাম, করোনা টেস্ট এবং ট্রিটমেন্ট এর ব্যাপারে সরকারের সিরিয়াস হওয়া দরকার। গত ২২ মে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান করোনা টেষ্টের গুরুত্ব সম্পর্কে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে স্পষ্ট করেই বলেছিলেন-‘করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখিয়ে নিজেদের কাগুজে সাফল্য দেখানোর চেয়ে বেশি জরুরী করোনা ভাইরাস টেস্ট নিয়ে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। কারণ, গ্লোবাল ভিলেজের এই সময়ে করোনা ভাইরাস টেস্টের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে ভবিষ্যতে নাগরিকদেরকে অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশে যেমন ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের নাগরিকদের বিদেশের শ্রম বাজারে থাকা না থাকার বিষয়টিও বেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
রিজভী বলেন, আজকের বাস্তবতায় দেখতে পাচ্ছি, বিএনপির এই আশংকাটি এখন দুঃখজনকভাবেই সত্য হতে চলেছে। ইতালী, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, কাতার, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নাগরিকদেরকে তাদের দেশে ঢুকতে আরোপ করছে নানা বিধিনিষেধ। ইতালিতে পৌঁছার পর ১৫২ জন বাংলাদেশীকে দেশটিতে ঢুকতে না দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত দেয়া প্রমান করে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার দেশের জনগণের স্বার্থের প্রতি কতটা উদাসীন। সরকারের দৃষ্টি শুধুই যেন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের প্রতি, প্রবাসীদের স্বার্থের প্রতি নয়।
তিনি বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি, করোনা ভাইরাস ‘ট্রেস-টেস্ট এবং ট্রিটমেন্ট’ নিয়ে সরকার কি করছে, কি ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে এগুলো জনগণকে জানাতে হবে। এমনকি করোনা মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রয়োজনে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করার জন্যও সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছিল। সরকার সেই দাবি কানে নেয়নি। বরং এখন খবর বেরুচ্ছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় করোনা মোকাবেলায় ‘জেকেজি হেলথ কেয়ার এবং রিজেন্ট হাসপাতাল নামে’র কিছু ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ‘করোনা টেস্ট ও ট্রিটমেন্টের’ অনুমোদন দিয়েছে। তাদের একমাত্র যোগ্যতা ছিল, এইসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধার’রা ক্ষমতাসীন দলের নেতা কিংবা ঘনিষ্ঠ। অনুমোদন পেয়ে এইসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজরা টাকার বিনিময়ে হাজার হাজার মানুষকে রক্ত পরীক্ষা না করেই ‘করোনামুক্ত সার্টিফিকেট’ ইস্যু করতো। এদের সার্টিফিকেট নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে আটক কিংবা ফেরত আসতে শুরু করায় এখন সরকারের টনক নড়েছে।