×

সারাদেশ

বন্যার পানি কমার পরই ভাঙন শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২০, ০১:৪৯ পিএম

বন্যার পানি কমার পরই ভাঙন শুরু

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল এলাকায় টানা ১৫ দিনের যমুনা নদীর ভাঙনে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০০ পরিবার। -ভোরের কাগজ

দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বাড়ছে ভাঙন। নদ-নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে হাজারো পরিবার। নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বিভিন্ন বাঁধ, উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ বসতবাড়ি হারিয়ে অন্য জেলায় পাড়ি জমিয়েছেন। এছাড়া ভাঙন হুমকিতে থাকা ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর গাইবান্ধা : ব্রহ্মপত্র নদসহ তিস্তা, যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানি কমতে থাকায় গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের ২৫৫টি চরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। অন্যদিকে নদ-নদীর ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাচ্ছে শত শত পরিবার। ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা, যমুনা বাঙ্গালী নদীর ভাঙনে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার জানান, গত এক সপ্তাহে তিস্তা নদীর ভাঙনে কাপাসিয়া ইউনিয়নের কালাই সোতারচরের ১০০ পরিবার, উজান বুড়াই গ্রামের ১৫০ পরিবার, পশ্চিম লালচামার এলাকার ৫০টি পরিবার নদীভাঙনে বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এছাড়া হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নে ব্যাপক তিস্তার ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বিভিন্ন বাঁধ, উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ বসতবাড়ি হারিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও দিনাজপুর এলাকায় পাড়ি জমিয়েছে। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন দেখা দেয়ায় সদর উপজেলার কামারজানি ও গিদারী ইউনিয়ন, ফুলছড়ি উপজেলার এড়েন্ডাবাড়ী এবং সাঘাটা উপজেলার ভারতখালী ও যমুনার ভাঙনে সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে হুমকিতে রয়েছে আশপাশের পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি। স্থানীয়রা ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কাঁটাখালী (বাঙ্গালী) নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বালুয়া ও বোচাদহ এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জানান, নদীভাঙন রোধে অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ চলছে। জামালপুর : জেলার মাদারগঞ্জে বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর পরই যমুনা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০০ পরিবারসহ শতাধিক বাসিন্দা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর পরই ভাঙন দেখা দিয়েছে মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল ইউনিয়নে। গত ১৫ দিনের টানা ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০০ পরিবারের ঘরবাড়ি। এছাড়া ফসলি জমিসহ আরো ১৫০ বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়ে। বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ভাঙনকবলিতরা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা কুলসুম বেগম জানান, নিঃস্ব থাকায় সরকারের দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে পরিবার নিয়ে থাকতেন তারা। এখন সেই ঘরটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাই খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া পাকরুল এলাকার কৃষক আজাহার আলী জানান, একদিকে বন্যার কবলে পড়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আবার বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যমুনার ভাঙনের মুখে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন তিনি। এখন এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। সরকার সহযোগিতা না করলে তাদের রাস্তাঘাটে থাকতে হবে বলে জানান তিনি। চরপাকেরদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৌফিকুল ইসলাম জানান, এবারের বন্যা আর নদীভাঙনে তার ইউনিয়নে ভিটেমাটি হারিয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ পরিবার। প্রায় ৩০০ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাইদ জানান, ভাঙন প্রতিরোধে জেলার ইসলামপুর উপজেলার মাইজবাড়ী থেকে মাদারগঞ্জের কাঠমা পর্যন্ত একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পাকরুলে ভাঙন দেখা দেয়ায় সেই প্রকল্পে পাকরুল এলাকা সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও এখনো জেলার কয়েকটি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের হাজারো পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ কমাতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। রাজবাড়ী : গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ সেন্টিমিটার কমে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর ও পাংশার সেনগ্রাম গেজ স্টেশন পয়েন্টেও পদ্মার পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে দৌলতদিয়া পয়েন্টে এ পানির পরিমাপ নির্ণয় করেছে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. ইউসুফ আলী খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে নদীর পানি কমতে থাকায় নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমির পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু নদী তীরবর্তীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন আতঙ্ক। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম জানান, এবার জেলার তিনটি পয়েন্টের মধ্যে দৌলতদিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে উঠেছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে পানি কমতে কমতে আজ বিপদসীমার নিচে চলে এসেছে। পানি কমলে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App