×

জাতীয়

বড় বন্যার আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২০, ০৯:২৯ এএম

দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও উজানে ভারি বৃষ্টির কারণে চলতি সপ্তাহ শেষে আরো বড় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব ঢাকা মহানগরীতেও পড়তে পারে। আর বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে আগাম প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য বন্যার দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি আছে বলে জানানো হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলমান বন্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এখন অধিকাংশ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচে বইছে। এভাবে আরো দুই দিন নামবে। কিন্তু আগামী এক বা দুই দিনের মধ্যে ভারতের আসাম ও মেঘালয়সহ উজানে ভারি বৃষ্টিপাত হবে। যার পানি আবারো চাপ বাড়াবে দেশের প্রধান নদীগুলোতে। এর প্রভাবে আগামী শুক্রবার থেকে দীর্ঘমেয়াদি ও বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যা ৩০ দিনের বেশি সময় অবস্থান করতে পারে।

পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, ঢাকার আশপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি ইতোমধ্যে বেড়েছে। দোহার ও মুন্সীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যার প্রভাব পড়েছে। আসন্ন বন্যায় ঢাকার নিম্নাঞ্চল ও নারায়ণগঞ্জ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। তিনি জানান, ঢাকা মহানগরীর পূর্বদিকে শহর রক্ষা বাঁধ না থাকায় পানির চাপ বেশি হলে ডেমরা, বনশ্রীসহ কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ড্রেনের তুলনায় নদীর পানির উচ্চতা বাড়লে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।

পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, ১০১টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে গতকাল বুধবার ২৮টি পয়েন্টেই পানি বেড়েছে। এরমধ্যে বিপদসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে ছয়টি পয়েছে। ৭১টি স্টেশনে পানি কমেছে, দুটি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ, নাটোর, টাঙ্গাইল, নওগাঁ ও রাজবাড়ীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের প্রদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীতে পানি দ্রুত বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অফিস এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, আগামী ১০ জুলাই শুক্রবার থেকে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হতে পারে। তাতে করে ওই দিন থেকেই বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি হতে পারে। কারণ মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হলে বাংলাদেশ ও ভারতে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। এরফলে দেশের নদ-নদীর পানি আবার বাড়তে পারে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, কয়েক দিন ধরেই মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয়। আগামী ১০ জুলাই থেকে তা সক্রিয় হতে পারে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টি হবে। এতে নদ-নদীর পানি পুনরায় বাড়তে পারে। বিশেষত রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঢাকা, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। নাটোর ও নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকবে। এছাড়া গঙ্গা, পদ্মা ও মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল থেকে কমছে।

পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনূন নিশাত বলেন, এ সময়ে ভারি বৃষ্টিপাত এবং নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে উজানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবিরাম ভারি বর্ষণ হলে গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, মেঘনা অববাহিকায় একযোগে পানি বাড়বে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি হয়। এবারো সে রকম বন্যা হতে হচ্ছে। এজন্য সার্বিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো যথাযথ মেরামত করতে হবে। যে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে তা মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবশ্যই আগাম প্রস্তুতি থাকতে হবে।

করোনা ভাইরাসের মধ্যে বন্যা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার আমাদের তা রয়েছে। দেশের খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ লাখ টন খাদ্য মজুদ থাকলেই যথেষ্ট। সেখানে আমাদের রয়েছে ১৩ লাখ টনের চেয়েও বেশি। তাই মনে করি বন্যা মোকাবিলায় সরকারের যথাযথ প্রস্তুতি রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App