×

সারাদেশ

পানি কমে বেড়েছে ভাঙন, তীব্র খাদ্যসংকটে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২০, ১০:২০ এএম

পানি কমে বেড়েছে ভাঙন, তীব্র খাদ্যসংকটে

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। তবে এখনো ডুবে থাকা নিজেদের ঘরের ভেতর দেখছে উৎসুক শিশুরা। উলিপুর উপজেলার কাজিয়ার চরের দৃশ্য। গতকালের ছবি ভোরের কাগজ

দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি কমলেও পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে হাজারো পরিবার। এসব মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ না থাকায় খাবার সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। এদিকে সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। এছাড়া ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
কুড়িগ্রাম : জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া মানুষজন ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে দীর্ঘ সময় ধরে পানি থাকায় কর্দমাক্ত ঘরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। এর উপর এলাকায় কাজ না থাকায় খাদ্য সংকটে আছে এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ ত্রাণ সহায়তার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। এবারে বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণের তেমন দেখা যায়নি। উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চর বাগুয়া ও সাহেবের ইউনিয়নের কাজিয়ার চর ঘুরে দেখা গেছে, ডুবে থাকা বাড়িঘরে মানুষ ফিরে এলেও নলক‚পগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। এছাড়াও কৃষিজীবী পরিবারগুলোর মাঝে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট লক্ষ্য করা গেছে। চর বাগুয়ার আসর উদ্দিন জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ তারা পানিবন্দি থেকেও এ পর্যন্ত কোনো সরকারি সাহায্য পাননি। এমন কথা জানান ওই চরের একাব্বর, শাহাবুদ্দিনসহ অনেকে। চরাঞ্চলে পাটের আংশিক ক্ষতি হলেও আউশ ধানসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, মরিচের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি থেকে পুরোপুরি বন্যার পানি নেমে না যাওয়ায় ২ সপ্তাহ ধরে পাকা সড়ক, বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো অনেকই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কুড়িগ্রাম খামারবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ৯ উপজেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন জাতের ফসল ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে পাট ৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর, বীজতলা ৫৩২ হেক্টর, আউশ ধান ১ হাজার ৯৫৫ হেক্টর ও সবজিক্ষেত ৮৬০ হেক্টর সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন শাখা জানায়, ৯ উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৩৭ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। এছাড়া ২০০ টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাওয়া গেছে, যা বিতরণের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জামালপুর : বন্যার পানি কমে বিপদসীমার নিচে থাকলেও জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদর উপজেলার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চলের কমপক্ষে ১৫ ইউনিয়নের হাজারও পরিবার এখনো পানিবন্দি রয়েছে। দীর্ঘ দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থাকা মানুষের খাবার পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ না থাকায় দুই বেলা খাবার সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। বুধবার দুপুরে জামালপুর পৌরসভার নাওভাঙ্গার চর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি কমলেও এখনো সেখানে পানিবন্দি রয়েছে শতাধিক পরিবার। অনেকেই নতুন বাইপাস সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। মো. হাশেম জানান, অনেক দিন ধরে তারা পানিবন্দি রয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো জনপ্রতিনিধি বা সরকারি লোকজন তাদের সহায়তা করেননি। খুব কষ্টে দিন কাটছে তাদের। জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৭৮৪ টন জিআর চাল, ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা জিআর ক্যাশ, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর তা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হয়েছে। এখনো কিছু ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বন্যাকবলিত এলাকায় এসব বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বগুড়া : যমুনা নদীর পানি ৬৭ সেন্টিমিটার থেকে পর্যায়ক্রমে মোট ৮৭ সেন্টিমিটার কমে বর্তমানে বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে বাঙ্গালী নদীর পানি কমতে শুরু করলেও গত ২৪ ঘণ্টায় আবারো ২১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির। সূত্র জানায়, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কাজলা, কামালপুর, রহদহ ও সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। তলিয়ে যায় এসব অঞ্চলের পাট, ধানসহ ফসলি জমি। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন জানান, যমুনা নদীতে বিপদসীমা নির্ধারণ করা হয় ১৬.৭০ মিটার পানির উচ্চতাকে। বুধবার সকাল ৬টার হিসেব অনুযায়ী নদীর পানি ১৬.৪৭ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে বাঙ্গালী নদীতে বিপদসীমা নির্ধারণ করা হয় ১৫.৮৫ মিটার পানির উচ্চতাকে। বর্তমানে এ নদীতে ১৫.৩৫ মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীর পানি কমতে শুরু করে আবারো ২১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। সদরপুর (ফরিদপুর) : সদরপুরে পদ্মা ও আড়িয়ালখাঁর নদের পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগ কমেনি চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষের। বন্যার পানিতে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গত চার দিনে আড়িয়ালখাঁ নদের প্রবল স্রোতের তোড়ে চর মানাইড়, ঢেউখালী, চর নাছিরপুরসহ তিনটি ইউনিয়নে নদীভাঙনে ফসলি জমি, গাছপালাসহ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ভাঙনকবলিত এলাকার পরিবারগুলো গরু-ছাগল ও পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App