×

জাতীয়

আর্থিক সংকটে বিদ্যুৎ বিভাগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২০, ০৯:৫১ এএম

আর্থিক সংকটে বিদ্যুৎ বিভাগ

ফাইল ছবি

গ্রাহকদের কাছে কয়েক মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ৩ মাসে মাত্র ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ বিল আদায় হয়েছে। শুধু মার্চ মাস পর্যন্তই ৬ হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া পড়েছে। এরপর থেকে এই সংখ্যা আরো বেড়েছে। একদিকে করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগকালে গ্রাহকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বিল আদায় করতে পারছে না। অন্যদিকে নিজেদের আর্থিক অবস্থাও যথাযথভাবে সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে কোম্পানিগুলোর নিজস্ব হিসাব-নিকাশও বদলে গেছে। সংকট কাটাতে আগস্ট মাস থেকে বকেয়া বিল আদায়ে বিদ্যুৎ বিভাগ কিছুটা কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এসব জানা গেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হাদিম জানান, বিপুল অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে। শুধু মার্চ মাস পর্যন্ত ৬ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল। পরবর্তী ২ মাসে বকেয়া আরো বেড়েছে। এরপর জুন মাসে কিছু বিদ্যুৎ আদায় হয়েছে। কিন্তু তারপরও এই সেক্টরের আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়নি। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুৎ বিভাগকে সরকারের কাছ থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা লোন করতে হতে পারে। এই সেক্টরকে সচল রাখতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আরো ছাড় দেয়া হলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো সংকটে পড়বে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিক সময়েও গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকে। তার মধ্যে শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। অস্বাভাবিক মাত্রায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে বিল পরিশোধের জন্য তাগাদা দেয়া হয়। এরপর মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়। তারপরও বিল পরিশোধ না করলে ওই প্রতিষ্ঠানকে চিঠির মাধ্যমে সময় দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা জানিয়ে দেয়া হয়। কিস্তিতে বিল পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু করোনা দুর্যোগে জরিমানা আদায় তো দূরের কথা, বকেয়া পরিশোধ না করলেও গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে না। সবগুলো কোম্পানি গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, গ্রাহকদের কাছ থেকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় না হলেও কোম্পানিগুলোর খরচ থেমে নেই। বরং খরচ আরোবেড়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন থেমে নেই, খরচও থেমে নেই। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস লাগে। বকেয়া বিল না পাওয়ার গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলোকে গ্যাসের বিল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। গ্রাহকদের দেয়া বিলের টাকা থেকেই গ্যাসের বিল দিতে হয়। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে বিল দিতে না পারলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল না পেলে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাপ্লাই চেইন অচল হতে পারে। একটার সঙ্গে আরেকটা সম্পৃক্ত। গ্যাসের বিল না দিলে বিদ্যুৎ সেক্টরকে সচল রাখা যাবে না। তাই এই সেক্টরকে সচল রাখতে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল দেয়ার জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। একসঙ্গে বিদ্যুৎ বিল না পারলে তা কিস্তির মাধ্যমেও অল্প অল্প করে বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যুৎ ছাড়া গার্মেন্ট সেক্টর একেবারেই অচল। এই গার্মেন্ট সেক্টরেই বিপুল অঙ্কের বকেয়া বিল পড়ে আছে। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি বিল বকেয়া রয়েছে। ৩০ জুলাই পর্যন্ত বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের সারচার্জ মওকুফ করতে বিদ্যুৎ বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কোনো গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে না। ইতোমধ্যেই পণ্য উৎপাদনকারী বিভিন্ন সেক্টরের সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সারচার্জ ছাড়া বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সময় আরো বাড়ানোর আবেদন করেছে। তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ আগামী ২ বছর সময় চেয়ে আবেদন করেছে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ক্ষেত্রে সময় বাড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে বিজিএমইএর আবেদন বিবেচনা করা সম্ভব হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App