×

সারাদেশ

মেঘনা-ডাকাতিয়ার পানি বিপদসীমার উপরে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২০, ১০:২২ এএম

চাঁদপুরে মেঘনা-ডাকাতিয়ার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। জামালপুরে বন্যার পানি কমলেও দুর্ভোগ বাড়ছে দুর্গতদের। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে নদীভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী পাড়ের মানুষ রয়েছেন আতঙ্কে। এদিকে নদীভাঙনে রাজবাড়ীতে পদ্মার পেটে বিলীন হচ্ছে রিং বাঁধ। টাঙ্গাইলে বন্যায় রাস্তা ভেঙে মির্জাপুর ও বাসাইল উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নিচে এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট
চাঁদপুর : চাঁদপুরে মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিন নদীর মোহনায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর আগে সোমবার ৩৯ সেন্টিমিটার, রবিবার ৩৫ সেন্টিমিটার ও শনিবার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হয়। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে কয়েক দিন ধরে অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জামালপুর : জামালপুরে বন্যার পানি কমলেও যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের পানি সরে না যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে দুর্গত এলাকার লাখো মানুষ। এসব এলাকার মানুষ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থেকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণসামগ্রী পাননি বলে অভিযোগ তাদের। বন্যাকবলিত এলাকায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। কাজ না থাকায় দুবেলা খাবার সংগ্রহ করতে পারছেন না তারা। দুর্গত এলাকায় দরিদ্র এসব মানুষের খাবারের পাশাপাশি চারণভ‚মি পানিতে তলিয়ে থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যেরও। কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) : বন্যার পানি কমতে থাকায় কাজিপুরে নদীভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজিপুর উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের খুদবান্দি গ্রামে কাঁটাতলায় (নৌকা ঘাট) নদীভাঙন বেড়েছে। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গত ২-৩ দিনে ৮-১০টি পরিবারের বাড়িঘর ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। স্থানীয় মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে বকুল সরকার ও মৃত আবদুল খালেকের ছেলে শামীম জানান, ২-৩ দিনের ব্যবধানে এখানকার বসতবাড়িসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ৮-১০টি পরিবার ইতোমধ্যে ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। আমরা কোনো মতে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এমতাবস্থায় আশপাশের অনেক বাড়িঘর ও জমিজমা রক্ষার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) : অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানির প্রবল চাপে রাস্তা ভেঙে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এবং বাসাইল উপজেলার সঙ্গে গত ৫ দিন ধরে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুই উপজেলাবাসীকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ভাঙনকবলিত এলাকায় চলাচলের জন্য বিকল্প কোনো বেইলি ব্রিজ নির্মাণ এবং রাস্তা তৈরি না করায় এলাকাবাসীকে ২৫-৩০ মাইল ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজবাড়ী : পদ্মা নদীর রিং বাঁধের পাশে ফসলি জমিসহ স্কুল, মসজিদ, বাজার, কবরস্থানসহ ছিল কয়েকশত পরিবারের বসবাস। রাস্তাটি দিয়ে আনা-নেয়া করা হতো ফসলসহ বিভিন্ন পণ্য। মূল বেড়িবাঁধের সাপোর্ট হিসেবেও কাজ করত এ রাস্তাটি। কিন্তু গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়েছে রিং বাঁধের প্রায় ১ কিলোমিটার। নদীগর্ভে গেছে রাস্তা, স্কুল, কবরস্থান, বাজারসহ কয়েকশত বসতবাড়ি। এমনকি রাস্তাটিও মানুষের চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বহু বছর আগে বেড়িবাঁধের সাপোর্ট হিসেবে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুরের বেনীনগর থেকে চরজৌকুড়ী হালিম বিশ্বাসের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা নদীর তীরঘেঁষে তৈরি করা হয় মাটির রাস্তা। তখন নদী রাস্তা থেকে অনেক দূরে ছিল এবং এলাকাবাসী রিং বাঁধ হিসেবে রাস্তাটিকে চিনতেন। রাস্তার একপাশে নিচু ফসলি জমি, স্কুল, মসজিদ আর আরেক পাশে ছিল স্কুল, মসজিদ, কবরস্থান, বাজারসহ প্রায় ৭ শতাধিক পরিবারের বসবাস। গত কয়েক বছরে রাস্তাটি ভেঙে স্কুল, বাজার, কবরস্থানসহ শত শত বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে সরাসরি বাঁধে গিয়ে লাগছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছর জরুরি প্রতিরোধমূলক কিছু বালুর বস্তা ফেলার কাজ করলেও তা কোনো কাজে আসেনি। বরং এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন মহাদেবপুর রিং বাঁধের মধ্যে থাকা প্রায় প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের ৪ হাজারের বেশি মানুষ। রিং বাঁধের ভেতরে থাকা এলাকাবাসী জানান, রামচন্দ্রপুর বেনীনগর চরজৌকুরী পর্যন্ত মহাদেবপুর রিং বাঁধ। একসময় এ রাস্তাটি দিয়ে অনেক মানুষ চলাফেরা করতেন। ফসলসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হতো। কিন্তু নদী ভাঙতে ভাঙতে স্কুল, বসতবাড়ি, বাগান, কবরস্থানসহ রাস্তার অর্ধেকের বেশি নদীতে চলে গেছে। এখনো ভাঙছে, কিন্তু কেউ এদিকে নজর দিচ্ছে না। তারা জানান, যেটুকু জমি আছে সেটুকুও এখন নদীতে যেতে বসেছে, কিন্তু ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না। ভাঙন থেকে বাঁচতে শুধু এ এলাকাটা বেঁধে দেয়ার দাবি তাদের। করোনা ভাইরাসের কারণে তিন মাস কোনো কাজ নেই। এখন যদি বাড়িও ভেঙে যায় তাহলে তারা কোথায় যাবেন। কিছু বালুর বস্তা ফেললেও থাকতে পারতেন। কিন্তু সেটাও ফেলা হচ্ছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচতে নদীভাঙন রোধে এখনই সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ২০০৩ সালে তিনি রাস্তাটি একবার সংস্কার করেছিলেন। তারপর আর কোনো কাজ হয়নি। এখন যেটুকু রাস্তা আছে সেটুকুও ভাঙছে। দ্রুত ভাঙনরোধ না করা গেলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এছাড়া নদীর পানি বাড়লে এখন সরাসরি বাঁধে গিয়ে লাগছে। এতে মূল বাঁধও হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানান তিনি। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, এটা রিং বাঁধ না, এটি একটি রাস্তা। নদীর পানির বিপদসীমার যে লেভেল তা থেকে এটি নিচু। তারপরও ভাঙনরোধে মহাদেবপুর এলাকায় দুয়েকটি স্থানে কাজ করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App