×

জাতীয়

করোনার র‌্যাপিড টেস্ট নিয়ে ধূম্রজাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২০, ১০:০৫ এএম

করোনার র‌্যাপিড টেস্ট নিয়ে ধূম্রজাল

প্রতীকী ছবি

মহামারি করোনা ভাইরাস শনাক্তে শিগগিরই র‌্যাপিড টেস্ট শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেনের অনুমোদনের একটি প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই বা মতামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এর কার্যক্রম শুরু হবে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিব বলেছেন, কোনো প্রস্তাবনা পায়নি মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, গত রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন সম্পর্কিত নীতিমালার খসড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেলেই ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সে অনুযায়ী অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেন কিট কেনার জন্য স্পেসিফিকেশন দেবে। এ বিষয়ে গত সোমবার করোনা প্রতিরোধ কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সচিব ডা. জহিরুল করিম ভোরের কাগজকে বলেন, ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে করোনা ভাইরাস শনাক্তের জন্য র‌্যাপিড টেস্ট শুরু করতে চায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এজন্য একটি প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে র‌্যাপিড টেস্ট শুরু হবে। তবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান ভোরের কাগজকে বলেছেন, র‌্যাপিড টেস্ট শুরু হচ্ছে না এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাবনাও আসেনি। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও বলেছেন, অধিদপ্তর থেকে যে ফাইল পাঠানো হয়েছে, সেটা আমার কাছে আসেনি এবং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কারো সঙ্গে আলাপও হয়নি। তারা কী পাঠিয়েছে এবং তা কোন পর্যায়ে রয়েছে তা বলতে পারব না। র‌্যাপিড টেস্ট হলে তো সেটা ন্যাশনাল পলিসি। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তারা যদি পাঠিয়ে থাকে, তাহলে আমাদের সেটা আরো উপরে পাঠাতে হবে। এর জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, কোভিডের নতুন এ প্রেক্ষাপটে কী কী করা উচিত, কী কী টেস্ট অ্যাভেইলেবল তার একটা প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আমরা অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি সরকারিভাবে জেলা পর্যায়ে এমনকি, যেসব পরীক্ষা উপজেলা পর্যায়েও করা যায় এই ধরনের প্রস্তাবসহ নীতিমালার একটা খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই অধিদপ্তর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে। এর আগে গত ৩ জুন করোনা শনাক্তে র‌্যাপিড টেস্টের জন্য সুপারিশ করে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এছাড়া করোনা শনাক্তে এতদিন ধরে চলা আরটি পিসিআর পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার পক্ষেও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে একটি কমিউনিটিতে কত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে কতজনের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এবং যে কারণে তাদের পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় শূন্য- সেটা নির্ণয় করা যাবে। রোগীর উপকার এবং এপিডেমিওক্যাল গবেষণাএই দুই ক্ষেত্রেই র‌্যাপিড টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে। একইসঙ্গে লকডাউন লিফটিং, পোশাক কারখানাসহ নানা অফিস আদালত খুলে দেয়ার জন্য, স্বাস্থ্যকর্মীদের কী অবস্থা সেটা বোঝার জন্য, এমনকি ভ্যাকসিন টেস্ট করার জন্যও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা তা জানতে র‌্যাপিড টেস্টের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ন্যাজাল সোয়াবের মাধ্যমে করা অ্যান্টিজেন টেস্টে আর্লি পজিটিভ বা আর্লি ডিটেকশন করা যায়। তাই পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা থাকলে রোগী শনাক্ত করা সহজ হয়। তিনি জানান, পিসিআর পরীক্ষায় যেসব ‘ডিফিকাল্টিজ’ রয়েছে, অ্যান্টিজেনে সেসব নেই। এই পরীক্ষা যেমন সহজে করা যায়, তেমনই মেশিনের দরকার হয়। আলাদা ল্যাবরেটরি বা যে কোথাও করা যায়, এর জন্য বায়োসেফটির দরকার নেই। প্রয়োজন হয় না তেমন দক্ষ নমুনা সংগ্রহকারীরও। দেশের ৪৯১টি উপজেলায় এ পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ ?মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা শুরু থেকেই একথা বলে এসেছি, এতোদিন পরে এসেও সেটা করা হচ্ছে-এটা ভালো খবর। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এখন যে লাল-সবুজ কার্যক্রম চলছে, তাতে করে খুব দ্রুত অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি টেস্ট করা দরকার। কারণ এটা দিয়ে ঘরে ঘরে টেস্ট করা যায়। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে সেখানেই তার পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু আরটি পিসিআর পরীক্ষা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আর সহজে যদি রোগী শনাক্ত করা যায়, তাহলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো যায়, তার কন্টাক্ট প্রেসিং দ্রুত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যায়। এতগুলো সুবিধা রয়েছে র‌্যাপিড টেস্টে। একই সঙ্গে পিসিআরের তুলনায় খরচও খুব কম। সব মিলিয়ে খুব দ্রুত র‌্যাপিড টেস্ট চালু করা দরকার ছিল। তাদের মতে, এটা যদি আগে করা যেত তাহলে অনেক নেগেটিভ কেস যেগুলো আসলে করোনা আক্রান্ত ছিল, সেগুলো পজিটিভ পেতে পারতাম। আর এটা না পাওয়ার ফলে পজিটিভ হলেও নেগেটিভ রিপোর্ট পাবার কারণে, তারা ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যকে সংক্রমিত করেছে এবং কেউ কেউ যথাসময়ে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে মারাও গেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App