×

জাতীয়

লকডাউনে পিছুটান!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২০, ০৯:১৩ এএম

বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিড রোগী কমেছে বিশ্লেষণ হচ্ছে রাজধানীর তথ্য-উপাত্ত
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের চিন্তা থেকে সরে আসছে সরকার। যদিও ঢাকায় ছোট ছোট স্পট ভাগ করে প্রায় ৮০টি এলাকাকে চিহ্নিত করে ‘রেড জোন’ ঘোষণার জন্য প্রশাসনের কাছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তালিকা দিয়েছে; তবুও পারতপক্ষে সেসব জায়গা ‘অবরুদ্ধ’ করতে সায় দিচ্ছে না সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে গত জুন মাসজুড়ে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের ভীষণ বেগ পেতে হয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই এখন ওয়ারিতে লকডাউন চলছে। নানা ছুতোয় ওয়ারিতে লকডাউন না মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের অনমনীয়তার জন্য ওয়ারিতে এখন অনেকটা জোর খাটিয়েই লকডাউন চলছে। এ অবস্থায় ঢাকার অন্যান্য এলাকায় লকডাউন প্রয়োগ করলে তা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরে যে ৮০টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেই এলাকায় একসঙ্গে লকডাউনে যেতে বিরাট প্রশাসনিক ও স্বাস্থ্যগত প্রস্তুতি দরকার। সেটা আপাতত সংকুলান করা যাচ্ছে না। ফলে একসঙ্গে লকডাউন হবে না এখানে। কারণ একবারে লকডাউন শুরু করার জন্য যে প্রস্তুতি ও যে জনবল দরকার, সেটা জোগাড় করা কঠিন। প্রতিটি এলাকার জন্য একটা করে ডেডিকেটেড অ্যাম্বুলেন্স; যেসব এরিয়ায় হাসপাতাল নেই, সেখান থেকে রোগী নেয়ার ব্যবস্থাপনাটা খুব কঠিন। সেটা ভেবেই লকডাউন থেকে পিছিয়ে আসছে প্রশাসন। এছাড়া গত ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে জীবিকা চালু হওয়ার পর গতকাল পর্যন্ত ১ মাস ৬ দিন পার হয়েছে। এই সময়ে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে কাজ করেছে প্রশাসন। একই সঙ্গে সিএমএইচসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার রোগী কমে যাওয়ার কারণও খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন ভোরের কাগজকে বলেন, লকডাউনের চিন্তা থেকে সরকার সরে আসছে কিনা তা আমি জানি না। এটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি কোনো এলাকাকে লকডাউনের জন্য বলে তখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেই এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করবে। করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সচিব ডা. জহিরুল করিম গতকাল এ প্রসঙ্গে ভোরের কাগজকে বলেন, ঢাকা মহানগরে রেড জোন করার জন্য ছোট ছোট স্পট ভাগ করে প্রায় ৮০টি স্থানকে চিহ্নিত করে তালিকাটি প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মনে হচ্ছে প্রশাসন দ্রুত লকডাউনের চিন্তা থেকে সরে আসছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন লকডাউন দিয়ে এর বাস্তবায়ন করাটা খুব কঠিন হবে। পূর্ব রাজাবাজার এবং ওয়ারিতে আমরা এই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। তাহলে করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার কি করবে জানতে চাইলে শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের তথ্য বিশ্লেষণ হচ্ছে। বিশ্লেষণের কাজ শেষে নতুন কোনো পরিকল্পনা নেয়া হবে। তিনি বলেন, পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউনের আগে কি অবস্থা ছিল, লকডাউন শুরুর ১০ দিন পর কি অবস্থা ছিল এবং এখন কি অবস্থা চলছে এসব তথ্য বিশ্লেষণ হচ্ছে। লকডাউন দেয়ার পর জনগণ যদি সেটি মানতে না চায় তাহলে লকডাউন দিয়েই কি লাভ হবে? অন্য এক প্রসঙ্গে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে দেশে করোনার সংক্রমণ ইউরোপ-আমেরিকার মতো হয়নি। এখন পর্যন্ত সংক্রমণের যে চিত্র তাও আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক দিন ধরে সিএমএইচসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগী কমেছে বলে মৌখিকভাবে তথ্য পেয়েছেন। সিএমএইচে কত রোগী কমল, ঢাকার কোন হাসপাতালে কত রোগী কমেছে তা জানতে অধিদপ্তরের একটি টিম কাজ করছে বলে তিনি জানান। রোগী কমার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরাতো তথ্যটি মৌখিকভাবে পেয়েছি। কাজেই এখনই এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নেয়ার পর এর কারণ জানা যাবে। ঢাকার পর চট্টগ্রামের করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কি করা হচ্ছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, একেক শহরের জন্য একেকরকম পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে সম্ভবত করোনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে। এদিকে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সর্বোচ্চ সংক্রমিত এলাকাগুলোকে এখনো ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। মাত্র ১৯ জেলার ১১৮টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৮০ এলাকা, চট্টগ্রামের ১১ এলাকা এবং বাকিগুলো অন্যান্য জেলায়। কিন্তু লকডাউনের সিদ্ধান্তের ১ মাস ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অধিকাংশ এলাকায় লকডাউন শুরু হয়নি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে উত্তর সিটি পূূর্ব রাজাবাজারে লকডাউন শেষ হয়েছে। গত শনিবার থেকে দক্ষিণ সিটি ওয়ারিতে শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের একটি এলাকায় লকডাউন হয়েছে। প্রথম দফায় ঘোষণা দেয়া ৩ জেলার মধ্যে গাজীপুরের ১৯ রেড জোনের তিনটি, নরসিংদীর ১৪ রেড জোন এলাকার মধ্যে মাত্র চারটি এবং নারায়ণগঞ্জের ২৭টি ওয়ার্ড এবং আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলার মধ্যে মাত্র একটি ইউনিয়নে লকডাউন হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ঘোষণা দেয়া ১৫ জেলার ৩৮টি রেড জোন এলাকার মধ্যে অল্প সংখ্যক এলাকায় লকডাউন হয়েছে। এমনকি এসব এলাকার মধ্যে পূর্ব রাজাবাজার, মৌলভীবাজার, মানিকগঞ্জসহ হাতেগোনা কয়েকটি এলাকা ছাড়া বাকিগুলোতে লকডাউন অতটা কার্যকর করা যায়নি বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, বিচ্ছিন্নভাবে লকডাউন দেয়ায় এবং ঠিকমতো স্বাস্থ্যগত ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকাগুলোতে সংক্রমণের হার ওঠানামা করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App