×

সারাদেশ

রেলের গাছ চুরি, কর্মকতার্র রহস্যজনক ভূমিকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২০, ০৭:৪১ পিএম

রেলের গাছ চুরি, কর্মকতার্র রহস্যজনক ভূমিকা

এভাবেই কেটে নেয়া হয় গাছ।

কুড়িগ্রামে রেলের জায়গার গাছ চুরি করে কাটা সিন্ডিকেট বাহিনীর সাথে রেল বিভাগের এক প্রকৌশলীর জড়িত থাকার ঘটনা ফাঁস হওয়ায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। অবৈধভাবে গাছ কাটার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে উলিপুর উপজেলা নিবার্হী অফিসার পুলিশের মাধ্যমে চোরাই গাছ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রেখেছে। গত ২২ জুন উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের রেল লাইনে মিনাবাজার নামক স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রুপার খামার গ্রামের জহুরুদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলাম রেলের জায়গায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা মূল্যের দুটি ইউকলিপ্টাস গাছ কর্তন করে। রেলের জমিতে অবৈধভাবে গাছ কর্তনের খবর পেয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. আব্দুল কাদের ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রফিকুল ইসলাম পালিয়ে যায়। পরে পুলিশের এসআই রাসেল ঘটনার সত্যতা পেয়ে গাছের বড়-বড় ১০টি গুড়ি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এদিকে খবর পেয়ে পরের দিন (২৩ জুন) লালমনিরহাট রেলওয়ের ঊর্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ঘটনাস্থল পৌঁছে কর্তনকৃত গাছের গোড়া দেখে এগুলো রেলের জায়গার গাছ বলে রফিকুলের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন।

কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পর রহস্যজনকভাবে তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং গাছগুলো রেললাইন থেকে ২০ ফিট দূরে বলেও স্থানীয় লোকজনকে জানান তিনি। পরে স্থানীয়রা পরিমাপ করে কর্তনকৃত গাছের গোড়া রেল লাইন থেকে একটি ১৫ ফিট ও অপরটি ১৭ ফিট দূরত্ব দেখতে পাওয়ায় ওই প্রকৌশলীর ভূমিকা নিয়ে তাদের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেলের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি জেলার চিলমারী উপজেলায় হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে গাছ খেঁকোদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে। এ সুবাধে তিনি তিস্তা-রমনা রেলের জায়গায় থাকা অসংখ্য গাছ কেটে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। একইভাবে গাছ কর্তনকারী রফিকুল ইসলামকে মামলা থেকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার রফা করেন বলেও জানা গেছে।

এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের সাথে কথা হলে তিনি আবারো দাবি করেন, একটি গাছ রেলের জায়গার ২০ ফিটের সীমানায়, অন্যটি ২০ ফিটের বাহিরে। ঘটনাস্থল থেকে ফিরেই আমি এস্টেট বিভাগকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছি। সম্পদের মালিক যারা, ব্যবস্থা নিবে তারা। এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার যা বলার বলেছি, এখন আপনার যা লেখার লেখেন। পত্রিকায় লিখে আমার নামে মামলা করে দেন’।

উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোয়াজ্জেম হোসেন গাছ কর্তনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ঘটনাস্থল থেকে গাছের গুড়ি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

লালমনিরহাট ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার তাপস বলেন, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজ্জাক এভাবে বলতে পারেন না। এটা এস্টেট ডিপার্টমেন্টের কাজ। মাপামাপি করার পর সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এটা কার সম্পদ।

বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজ্জাক সাহেবকে পাঠিয়েছিলাম। তবে প্রকৃত মাপযোগ ছাড়া রেলের গাছ কাউকে দেয়া ঠিক করেনি।

বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা পূর্ণেন্দু দেব বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাকে কোন পত্র দ্বারা বিষয়টি অবহিত করা হয়নি, আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি অবহিত হলাম। রেলের সম্পদ রক্ষায় অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. আব্দুল কাদের বলেন, সংশ্লিষ্ট রেলের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক কে বিষয়টি অবগত করেছি। পরে এ বিষয় আর খোঁজ নেয়া সম্ভব হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App