×

সারাদেশ

পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কমেনি বানভাসিদের দুর্ভোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২০, ১০:৩৬ এএম

পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কমেনি বানভাসিদের দুর্ভোগ

জামালপুরে বন্যার পানি কমলেও জেলার মেলান্দহ-মাহমুদপুর-মাদারগঞ্জ সড়কে এখনো হাঁটু পানি থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এই সড়কপথে যাতায়াতকারীরা -ভোরের কাগজ

দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগে রয়েছেন বানভাসিরা। জামালপুরে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কমায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। তবে অনেক পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘ ১২ দিন ধরে পানিবন্দি থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ সহায়তা পায়নি তারা। এদিকে কুড়িগ্রামে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়ায় প্রকট খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। নওগাঁর আত্রাইয়ে অবিরাম বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে আত্রাই নদীর পানি আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নাজুক অবস্থায় রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
জামালপুর : জেলায় পানি কমলেও বাড়ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ। যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কমায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। অপরদিকে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার কমপক্ষে দেড় শতাধিক গ্রাম এখনো দুই থেকে তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এতে প্রায় ৩ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছেন। অনেক পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘ ১২ দিন ধরে পানিবন্দি থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ সহায়তা পায়নি তারা। তবে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক জানান, জেলার বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ৪৩৪ টন চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা হাজার বানভাসি মানুষের জন্য খুবই অপ্রতুল। এদিকে বন্যার পানির তোড়ে বিভিন্ন সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আমিনুল ইসলাম জানান, জেলায় প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট ও সবজির পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বন্যায় যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়ায় লোকালয়, চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শিশুখাদ্য ও গবাদিপশু খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, চিলমারী ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কমেছে তিস্তা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও। এদিকে ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ কমেনি বানভাসিদের। ত্রাণ বিতরণে বিলম্বের কারণে এসব এলাকায় খাদ্য সংকট বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকা পরিবারগুলো পাকা সড়ক, বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব পরিবারের ঘরবাড়ি থেকে বন্যার পানি সরে না যাওয়ায় তারাও ঘরে ফিরতে পারছেন না। কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঝুনকার চরের বাসিন্দা আমির হামজা জানান, বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও কাজ জুটছে না। আবার নদীতে তেমন মাছও পাওয়া যাচ্ছে না। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিক মণ্ডল জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে শুরু করায় চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। কিছু ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও এখনো ৭০ ভাগ ঘরবাড়িতে পানি রয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যাকবলিতদের জন্য সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ অব্যাহত রয়েছে। আত্রাই (নওগাঁ) : অবিরাম বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির তোড়ে আত্রাই নদীর পানি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে আমন বীজতলা ডুবে গেছে। এতে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে হঠাৎ করে আত্রাই নদীর পানি আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। সোমবার এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই অবস্থা। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নাজুক পরিস্থিতি রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের। এদিকে নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার রায়পুর, উদনপৈ, জাতোপাড়া, মিরাপুর, ফুলবাড়ী, জাতআমরুল জিয়ানীপাড়াসহ প্রায় ২৫টি গ্রামের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সাহাগোলা ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ মল্লিক বলেন, ২০১৪ সালে উপজেলার ফুলবাড়ীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেলেও তা আজও সংস্কার করা হয়নি। এটি এখন এলাকাবাসীর জন্য মরণ ফাঁদ হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছানাউল ইসলাম বলেন, আত্রাইয়ের বন্যা পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সব জনপ্রতিনিধিদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। কোনো জায়গায় যেন বাঁধ ভেঙে জনগণের জানমালের ক্ষতি না হয় এ জন্য আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App