×

আন্তর্জাতিক

বিশ্বে সংক্রমণ ফের বাড়ছে যে কারণে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২০, ০৯:৫৩ এএম

বিশ্বে সংক্রমণ ফের বাড়ছে যে কারণে

প্রতীকী ছবি।

করোনা ভাইরাস বিপর্যয়ের প্রাথমিক ধাক্কা শেষ হওয়ার পর হঠাৎ বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফের আক্রান্তের হার বাড়ার খবর মিলছে বিশে^র বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। প্রায় আড়াইশ দিনে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি আক্রান্তের মধ্যে সর্বশেষ ১২ লাখ রোগী বেড়েছে মাত্র ৭ দিনে। এই হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার জন্য মূলত অর্থনৈতিক স্থবিরতা সামাল দিতে লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্তকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। মহামারি শুরুর পরপরই তা সামাল দিতে লকডাউনের আওতায় আনা হয় প্রায় গোটা বিশ^কে। গড়ে ২-৩ মাস কঠোর লকডাউন জারি থাকে সবগুলো মহাদেশের প্রায় প্রতিটি দেশে। এর ফলে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করে। বিগত সময়ে ইউরোপে সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রকট রূপ নিলেও সম্প্রতি আক্রান্ত বাড়ার হার কিছুটা কমে আসে। পক্ষান্তরে করোনা সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে। সর্বশেষ করোনা সংক্রমণ বাড়ছে লকডাউনের প্রশ্নে প্রথম থেকেই শৈথিল্য দেখিয়ে আসা ব্রাজিলে। সেখানে সংক্রমণের সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। তৃতীয় বিশ্বের দেশ ব্রাজিলের অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো এমনিতেই দুর্বল। তাছাড়া সে দেশে ব্যাপক জনগণ শ্রমনির্ভর থাকায় সেখানে লকডাউন কার্যকর করাও দুষ্কর। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখলে সাধারণ মানুষের জীবিকা নির্বাহের বিকল্প পথ সীমিত হবে। ফলে বিশ্বে যেখানে স্বল্পমাত্রায় হলেও সংক্রমণ কমছে, সেখানে ব্রাজিলে সংক্রমণ উপর্যুপরি বেড়েই চলেছে। প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ট্রাম্প প্রশাসন বরাবরই লকডাউন তুলে দেয়ার পক্ষে সক্রিয়। কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েও জারি করতে হয় লকডাউন। এর ওপর গত মে মাসের শেষ দিকে সে দেশে পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক নিহত হওয়ার জেরে ব্যাপক আকারে বিক্ষোভ শুরু হয় ও তা ছড়িয়ে যায় সারাদেশে। ফলে সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ লঙ্ঘিত হয় ব্যাপক হারে। তৈরি হয়ে যায় সংক্রমণের পরিস্থিতি। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপর্যুপরি সতর্কতার পরও মাত্র কিছুদিন আগে লকডাউন শিথিল করা হয় ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। ফলে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে থাকে এসব দেশে। এমনকি চীনেও লকডাউন শিথিল করার পর নতুন সংক্রমণ শুরু হলে পুনরায় লকডাউন জারি করা হয় বেইজিংসহ বিভিন্ন এলাকায়। অস্ট্রেলিয়াতে একটি রাজ্যে মাত্র ৭৫ জন নতুন শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে আবারো লকডাউন জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। লকডাউন কার্যকর করার প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ এশিয়ায় তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা নেপালেও লকডাউন শিথিল করার পর অন্তত একজনের মৃত্যুর সংবাদ মিলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের বিপদকাল বিশ্ব থেকে বিলীন হয়ে যায়নি এখনো। প্রতিষেধক আবিষ্কারে ব্যাপক গবেষণা শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের নিশ্চয়তা মেলেনি। খুব দ্রুত যে সেই ভ্যাকসিন মিলে যাবে, তেমন কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি এখনই। পাশাপাশি ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই এখন পর্যন্ত সংক্রমণ প্রতিরোধের একমাত্র কার্যকর পন্থা হিসেবে দাবি করছেন বিশ্বের বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App