×

জাতীয়

নমুনা জট পাঁচ কারণে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২০, ০৯:১৬ এএম

* পর্যাপ্ত ল্যাব নেই, তবুও কিছু থাকছে বন্ধ * জনবলের অভাব * কারিগরি সমস্যা * সক্ষমতার চেয়ে বেশি নমুনা সংগ্রহ * কাক্সিক্ষত নমুনা সংগৃহীত না হলে পরীক্ষা করে না বেসরকারি ল্যাবগুলো
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার জন্য প্রতিনিয়তই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ল্যাব। এই কাজের জন্য দেশে এখন পর্যন্ত ৭৩টি ল্যাব চালু হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টিই ঢাকার ভেতরে। বাকিগুলো বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু বেশিরভাগ জেলায় করোনা পরীক্ষার ল্যাব না থাকায় ওইসব জেলা থেকে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠাতে হয় বিভাগীয় শহর বা আশপাশের জেলায়। ফলে চাপ বাড়ছে ওই পিসিআর ল্যাবেগুলোতে। ভোগান্তি কমাতে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য দাবি জানিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করে আসছে বিভিন্ন জেলার মানুষ। ঝালকাঠির নমুনা পরীক্ষা করা হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নীলফামারীর নমুনা প্রথম দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হতো। এখন দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের নমুনা দিনাজপুরে, মাগুরার নমুনা খুলনা ও যশোরে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। তবে আশার কথা হলো, এক মাসের মধ্যে সব জেলায় করোনা পরীক্ষার ল্যাব চালু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য অনুযায়ী, পাঁচ কারণে বাড়ছে নমুনা জট। এতে একদিকে পরীক্ষার ফল জানতে যেমন দেরি হচ্ছে তেমনি বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও। তারা বলছেন, আগে সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলে এটি একটি চাপ। সব জেলায় ল্যাব না থাকায় এক এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে অন্য এলাকার ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে পরীক্ষার জন্য। আবার কিছু জেলায় ল্যাব থাকলেও সেখানে নমুনার চাপ এত বেশি, কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের সংকটতো আছেই। তাছাড়া কোনো ল্যাবের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট করোনায় আক্রান্ত হলে সেই ল্যাবের কাজ বন্ধ রাখতে হয়। অনেক সময় যান্ত্রিক সমস্যার কারণেও কোনো কোনো ল্যাবে পরীক্ষার কাজ বন্ধ থাকে। কাক্সিক্ষত মাত্রায় নমুনা সংগৃহীত না হওয়া পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয় না বেসরকারি ল্যাবগুলোতে। এসব সমস্যার কারণে পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট হাতে পেতে তিন থেকে ১৫ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। আর নমুনার জট তৈরি হচ্ছে। রিপোর্ট পেতেও দেরি হচ্ছে। চট্টগ্রামে ল্যাব থাকার পরও সেখানে নমুনা জট অনেক বেশি। এ প্রসঙ্গে জেলার সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি জানান, সেখানে নমুনা সংগ্রহের হার অত্যন্ত বেশি। সেই অনুযায়ী পরীক্ষার সুযোগ কম। আছে জনবল সংকটও। জট নিরসনে ঢাকাতে সংগৃহীত নমুনা পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে জানান, এরই মধ্যে আরো কয়েকটি স্থানে ল্যাব চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ প্রক্রিয়া শেষ করে পর্যায়ক্রমে আরো কিছু ল্যাব চালু করা যাবে। তবুও বন্ধ থাকছে কিছু ল্যাব : গত তিন দিনে নতুন তিনটি ল্যাব যুক্ত হয়েছে। কিন্তু ওই তিন দিন পাঁচ থেকে আটটি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়নি। প্রতিদিন করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য জানাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে কতটি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয় তার তথ্য জানানো হয়। গতকাল রবিবার জানানো হয় নতুন দুটি ল্যাব যুক্ত হলেও কাজ বন্ধ ছিল পাঁটি ল্যাবে। বন্ধ ল্যাবগুলো হলো প্রাভা হেলথ বাংলাদেশ লিমিটেড, চট্টগ্রামের ইমপেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেড, সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ৪ জুলাই শনিবার সাত ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়নি। সেগুলো হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব এন্ড ডায়াগনস্টিক, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গাজীপুরের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ৩ জুলাই শুক্রবার নতুন যুক্ত হওয়া একটি ল্যাবসহ দেশে ল্যাবের সংখ্যা মোট ৭১টি বলে জানানো হয়। নতুন যুক্ত হওয়া ল্যাবটি হলো ডা. ফরিদা হক মেমোরিয়াল ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ল্যাব, চন্দ্রা, গাজীপুর। তবে ৬৩টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। ওই দিন যে আট ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়নি সেগুলো হলো শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব এন্ড ডায়াগনস্টিক, ডিএনএ সল্যুশন লিমিটেড, সি এস বি এফ হেলথ সেন্টার, ডা. লাল প্যাথ ল্যাবস বাংলাদেশ লি., আইচি হাসপাতাল লিমিটেড, এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা এবং গাজীপুরের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বিদ্যুতের পুনঃসংযোগ স্থাপন, পিসিআর মেশিনের সঠিকতা পুনঃযাচাই এবং ল্যাব জীবাণুমুক্ত করার জন্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইকবাল কবীর জাহিদ। নমুনা জটের কারণ এবং এর মধ্যেও ল্যাবগুলো কেন বন্ধ থাকছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগী অধ্যাপক ও কোভিড-১৯ বিষয়ক সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সদস্য সচিব ডা. রিজওয়ানুল করিম ভোরের কাগজকে বলেন, এখানে কয়েকটি বিষয় আছে। ল্যাবের সুবিধা এখনো সমানভাবে সব এলাকায় পৌঁছানো যায়নি। ল্যাবে কিছু কারিগরি সমস্যাও হয়। বন্যাকবলিত এলাকায় নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। বেসরকারি ল্যাবগুলোতে কাক্সিক্ষত মাত্রায় নমুনা সংগৃহীত না হওয়া পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয় না। তারা কয়েক দিনের নমুনা একত্রে করে পরীক্ষা করে। এতে নমুনার জট তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, আগে অনেক বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে গেছে। ল্যাবগুলোতে জনবলের সংকট রয়েছে। এ কারণে ‘ব্যাকলক’ (পরীক্ষার জন্য নমুনা জড়ো হওয়া) হয়েছে। তবে এই জট নিরসনে ঢাকায় এনে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় নমুনা পরীক্ষা বন্ধে আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করে দিয়েছি। সেখানে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় ওই ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার দরকার আছে কিনা। আশা করছি আগামীতে এই সমস্যা থাকবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App