×

জাতীয়

ঢাকা উত্তরে জলাবদ্ধপ্রবণ ২৯ এলাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২০, ০৯:৪২ এএম

ঢাকা উত্তরে জলাবদ্ধপ্রবণ ২৯ এলাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা

ফাইল ছবি

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ২৯টি জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকা নিয়ে চিন্তিত। পানি নিষ্কাশনের অধিকাংশ চ্যানেল অকার্যকর হয়ে পড়ায় এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছে ডিএনসিসি। এরই মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

গত ২৭ দিনের খননে আশকোনায় খাল উদ্ধার করেছেন আতিকুল ইসলাম। আশকোনা হজ ক্যাম্পের পাশ থেকে শুরু করে বনরূপা হাউজিং পর্যন্ত ১.৮ কিমি দীর্ঘ খালের বিভিন্ন জায়গায় পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সিভিল অ্যাভিয়েশনের মালিকানাধীন খালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের কারণে সম্পূর্ণ ভরা হয়ে গিয়েছিল। খালটির মালিক সিভিল অ্যাভিয়েশন হলেও সিটি করপোরেশন থেকে সংস্থাটিকে বারবার খালটি খনন করে দিতে বলা হলেও তারা তা করেনি। ফলে সিটি মেয়র নাগরিক দুর্ভোগ দূর করতে নিজেই খালটি উদ্ধারের উদ্যোগ নেন।

ডিএনসিসি জানায়, পানি নিষ্কাশনের বড় বড় সার্ফেস ড্রেনগুলো হচ্ছে ঢাকা ওয়াসার। সেগুলো পরিষ্কার না থাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এতে সাময়িক নিরসন হলেও টেকসই সমাধান মিলবে না। তাই প্রকল্প ছোট কিংবা বড় যাই হোক না কেন বর্ষা শুরুর আগেই এসব কাজ শেষ করা জরুরি।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ গত বছর থেকেই শুরু করেছিলাম। নতুন করে দায়িত্ব নেয়ার পরে এ কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছি। পানি নামার লাইনগুলোর সংস্কারের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আশকোনায় একটি খাল উদ্ধার হয়েছে। তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের যেসব পথ রয়েছে সেগুলো একেক সংস্থার অধীন। এখন অন্য সংস্থাগুলো তাদের মালিকানাধীন খাল বা নালা সচল রাখতে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

ওয়াসার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মেয়র বলেন, ড্রেন পরিষ্কারের দায়িত্ব থাকলেও সেদিকে তাদের নজর নেই। ড্রেন পরিষ্কার করবে না বলেই তারা জানিয়ে দিয়েছে। অন্য সংস্থার খাল এবং ড্রেনও আমাদের পরিষ্কার করতে হচ্ছে। অথচ তারা আমাদের কোনো টাকা দিচ্ছে না। যার ফলে নিজেদের প্রজেক্টের কাজগুলো করতে বিলম্ব হচ্ছে।

ডিএনসিসির জলাবদ্ধতাপ্রবণ ২৯টি এলাকা হচ্ছে আশকোনা, বিমানবন্দর সড়কের আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী ২৭ নম্বর সড়ক পর্যন্ত, মিরপুর সাংবাদিক কলোনি এলাকা, নয়াটোলা শহীদ আবদুল ওয়াহাব রোড, উত্তর বেগুনবাড়ি, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, পূর্ব মনিপুর, দক্ষিণ মনিপুর, আমতলা, পিরেরবাগ, মিরপুর ১০, মিরপুর ১৩, বাংলামোটর বিয়াম ভবনের গলি, মধুবাগ প্রধান সড়ক, শাশাববাড়ি, কারওয়ানবাজার টিসিবি ভবন সংলগ্ন এফডিসি থেকে সার্ক ফোয়ারা, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণি, নিকুঞ্জ-১, নিকুঞ্জ-২, পশ্চিম নাখালপাড়া, পাগলারপুল, পূর্ব রাজাবাজার, পশ্চিম রাজাবাজার, বসুন্ধরা সিটির পেছনে তেজতুরী বাজারের গার্ডেন রোড, গ্রিন রোড এবং উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর।

জানা গেছে, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বিআরটি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের কারণে রাজধানীর অনেকাংশে পানি নিষ্কাশন ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহরূপ ধারণ করতে পারে। মেট্রোরেলের উন্নয়ন কাজের কারণে মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও তালতলা পর্যন্ত ওয়াসার ড্রেনেজ সিস্টেম এর মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়েছে। এগুলোর সংস্কার এখনো শুরু হয়নি। এছাড়া বিজয় সরণির ‘বিমান চত্বর’ থেকে খামারবাড়ি হয়ে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ সিস্টেম অকেজো হয়ে পড়েছে। ওই ড্রেনেজ সংস্কার করে দেয়ার জন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এতে তারা সিটি করপোরেশনকে ৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো পর্যন্ত কোনো টাকা পায়নি উত্তর সিটি।

ডিএনসিসির তথ্যমতে, টিসিবি ভবনসংলগ্ন ওয়াসার ড্রেনেজ ছিল যেখান থেকে পানি হাতিরঝিলে যেত। সে সময়ে কারওয়ান বাজারে কোনো জলাবদ্ধতা হতো না। এখন পানি নিষ্কাশন ড্রেন ঘুরিয়ে দেয়ায় হাতিরঝিলে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এবারের বর্ষার আগে হাতিরঝিল কর্তৃপক্ষ টিসিবি ভবনের সামনের পানি নিষ্কাশন গেটগুলো খুলে না দিলে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। এছাড়া হাতিরঝিলে সরাসরি পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে দেয়ার কারণে মগবাজার নয়াটোলা ও মগবাজার প্রধান সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

তবে এর মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কারণে বিমানবন্দরের সামনে থেকে বনানী ২৭ নম্বর সড়ক পর্যন্ত অংশের পানি নিষ্কাশন নালা নষ্ট হয়ে পড়েছে। নালাটি সচল করার জন্য ডিএনসিসি থেকে সিভিল অ্যাভিয়েশনকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তাদের বরাদ্দ না থাকায় সেই কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি নিজেই। ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রহণ করা প্রকল্পটির কাজ শেষ হতে আরো ২ মাস সময় লাগতে পারে। এছাড়া উত্তরা এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসি শায়েস্তা-খাঁ এভিনিউ থেকে ময়মনসিংহ রোড পর্যন্ত ড্রেনেজ পাইপলাইন নির্মাণ করেছে।

মিরপুর সাংবাদিক কলোনি এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে গত বছর খালটি পরিষ্কার করে ডিএনসিসি। পাশাপাশি খালটির সঙ্গে বাউনিয়া খালের সংযোগ স্থাপন করে সংস্থাটি। বর্তমানে খালটি আবারো ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। ফলে এ বর্ষায়ও আবার পুরনো চিত্র দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প গ্রহণ করেছে ঢাকা ওয়াসা। তবে এখনো কাজ শেষ হয়নি। ফলে এই বর্ষায়ও স্থানীয় এলাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা রোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসাকে কার্যকর ভ‚মিকা পালন করতে ইতোমধ্যে নির্দেশা দেয়া হয়েছে। তাদের কার্যক্রম আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। দুই সিটি করপোরেশনকে দুটো প্রকল্প গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে শহরের দখলদার উচ্ছেদ করে জলাবদ্ধতার টেকসই সমাধান মিলবে বলে আশা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App