×

রাজধানী

ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে যাত্রীদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২০, ০৯:১৯ পিএম

ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে যাত্রীদের

সিএনজি সহ আটক ছিনতাইকারীরা। ছবি: ভোরের কাগজ।

কুড়িল বিশ্বরোড উড়ালসড়ক এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা গুলশান বিভাগের একটি দলের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নান্নু ও মোশাররফ নামের দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শফিক ও তার সহযোগী সিদ্দিককে আটক করা হয়েছে। রবিবার (৫ জুলাই) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ডিবি পুলিশ বলছে, চক্রটির ৪ সদস্যই সিএনজিতে নিয়মিত যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর মহাখালী, বনানী, চেয়ারম্যান বাড়ি, আমতলী ও সৈনিক ক্লাব থেকে একক যাত্রীও তুলতেন। পরে সুযোগ বুঝেই অন্ডকোষ চেপে ধরে তার চোখে মুখে মরিচের গুঁড়া সম্বলিত মলম দিয়ে দিতেন। পরে যাত্রীর কাছে থাকা টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিয়ে তাকে রাস্তায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হতো। তবে কোনো যাত্রী প্রতিরোধ করতে গেলে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার পর মরদেহ পূর্বাচলগামী ৩০০ ফিট রাস্তা, তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ি, ও বেড়িবাধ এলাকায় ফেলে দিত তারা।

গত ১৭ জুন হারুন নামে এক ব্যবসায়ী প্রতিরোধ করতে গেলে তার গলায় গামছা পেচিয়ে বন্দুকযুদ্ধে নান্নু ও মোশাররফ তাকে হত্যা করে। পড়ে কুড়িল উড়ালসড়ক হয়ে ৩০০ ফিট দিয়ে যাওয়ার পথে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কাছাকাছি ঘাসের উপর ধাক্কা দিয়ে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। সোমবার ভোরের কাগজকে এসব তথ্য জানান ডিএমপি গোয়েন্দা শাখার গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, মহাখালী থেকে খিলখেত থানাধীন কুড়িল বিশ্বরোড উড়াল সড়কের আশেপাশের এলাকা, নিচে ও পূর্বাচলগামী ৩০০ ফিট রাস্তায় অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি এবং সিএনজি অটোরিক্সা, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে থাকা যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা মাঝে মাঝেই ছিনতাই, ডাকাতি ও অপহরণের মতো অপরাধ করে আসছিল। তবে সম্প্রতি এলাকাগুলোতে এ চক্রের উৎপাত কিছুটা বেড়ে গেলে। ডিবি গুলশানের একাধিক টিম গত রবিবার রাত ১১টা থেকে ৩০০ফিট পূর্বাচলগামী রাস্তাসহ খিলখেতের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। পরে রাত আড়াইটার দিকে একটি সিএনজি অটোরিক্সা শেওরা বাস স্ট্যান্ড দিয়ে খুব জোরে খিলখেত উড়াল সড়কের দিকে যেতে থাকে। ডিবি পুলিশের একটি টিম গাড়িটিকে থামতে বললে সিগনাল উপেক্ষা করে উড়ালসড়ক দিয়ে যেতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, উড়ালসড়কের পূর্ব মাথায় অবস্থানরত অন্য দলকে সিএনজিটি সম্পর্কে মেসেজ দিলে তারা সেখানে পুলিশের মাইক্রোবাসে আড়াআড়ি করে চেকপোস্ট করে। শেওড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ডিবি পুলিশের অপর দলটি সিএনজি অটোরিক্সাটিকে পিছন থেকে ধাওয়া করতে থাকে। কুড়িল বিশ্বরোড উড়ালসড়কের নিচে ময়লার ডিপো পূর্বদিকে এসে সিএনজি অটোরিকশাটি হার্ড ব্রেক করলে দুইজন দুর্বৃত্ত সিএনজি থেকে লাফিয়ে পাশের ডোবার দিকে যেতে-যেতে পুলিশের দিকে গুলি করে। এতে পুলিশের একটি মাইক্রোবাসের বামপাশের কাচের জানালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির এক পর্যায়ে সম্প্রসারিত রাস্তার কাঁচা অংশে ডোবার ধারে দুই ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে খিলক্ষেত থানা পুলিশের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। গোলাগুলি থেমে গেলে পুলিশ সিএনজিটিকে ঘেরাও করলে সেখানে চালকের সিটে থাকা শফিকুল ইসলাম ও তার পাশে অবস্থানকারীর সিদ্দিককে আটক করা হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে গোয়েন্দা পুলিশ একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড গুলি, কাদামাখা একটি চাপাতি, একটি চাকু, সিএনজির সিটের নিচ থেকে এক কৌটা মলম, একটি পেঁচানো গামছা, দুইটি মোবাইল ও একটি সিএনজি অটোরিক্সা উদ্ধার করে। অভিযানকালে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে ও গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হয় পুলিশের দুই সদস্য। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয় তারা।

তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তাররকৃত শফিক ও তার সহযোগী সিদ্দিক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় নিহত ব্যক্তিদের একজনের নাম নান্নু অপর জনের নাম মোশাররফ। নান্নু একসময় হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব চালাতো। ট্যাক্সিক্যাবের যাত্রীকে হত্যার দায়ে ইতোপূর্বে তিনি ৬ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। নিহত মোশাররফ ও একাধিক মামলায় সাজা ভোগ ও হাজতবাস করেছিল। গ্রেফতারকৃত ড্রাইভার শফিক ও সহযোগী সিদ্দিক ইয়াবা এবং ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হয়ে সাজা ভোগ এবং হাজতবাস করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App