×

সারাদেশ

করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২০, ০৯:২৫ এএম

* সরকারিতে নমুনা জট * বেসরকারি খরচ বেশি

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : করোনা শনাক্তে সরকারি ল্যাবগুলোতে নমুনা জটের কারণে ফল পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই সপ্তাহ। ফলে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। কিন্তু খরচ বেশি হওয়ায় সেখানেও নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না স্বল্প আয়ের মানুষ। এতে বেশিরভাগ মানুষই নমুনা পরীক্ষার আওতার বাইরে থাকছেন। পরীক্ষা কম হওয়ায় চট্টগ্রামের করোনা সংক্রমণের প্রকৃত পরিস্থিতি উঠে আসছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে সরকারির ল্যাবগুলোতে নমুনা জট কমানোর উদ্যোগ, বেসরকারি ল্যাবে ফি কমানো ও সরকারি-বেসরকারি ল্যাব আরো বাড়ানো জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা। এদিকে, করোনার নমুনা পরীক্ষার ফি বাতিল করে নাগরিকদের চিকিৎিসাসেবা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা মহামারিতে মানুষ আয় রোজগার হারিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হিমসিম খাচ্ছে। সেখানে করোনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ সাধারণ রোগীদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এটা শুধু অমানবিক নয়, অগ্রহণযোগ্য ও কল্যাণকামী রাষ্ট্রের কাছে আশা করা যায় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালীন পরিস্থিতিতে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা কমে গেছে। সরকারি ল্যাবগুলোতে অনেকটা বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষা করার সুযোগ থাকলেও ফলাফল পেতে দেরি হওয়ায় করোনা উপসর্গ থাকা অসুস্থ মানুষ সরকারি ল্যাবে নমুনা দিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অন্যদিকে বেসরকারি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার ফি সাড়ে তিন হাজার টাকা। বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষার জন্য পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ফলে মানুষ সেখানেও নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না। বেসরকারি খাতের নমুনা পরীক্ষার ফি কমানোর দাবি জানান তারা। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চট্টগ্রামে বেসরকারিভাবে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় গত ১১ জুন। আর শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা শুরু হয় ২৪ জুন। ১১ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামের চারটি সরকারি, দুটি বেসরকারি এবং কক্সবাজারের একটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৯ হাজার ২৩০টি। এর মধ্যে বেসরকারি ল্যাব দুটিতে পরীক্ষা হয়েছে তিন হাজার নমুনা। অর্থাৎ ১১ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত মোট পরীক্ষার প্রায় ১৬ শতাংশ বেসরকারি দুটি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। নগরীর জিইসি মোড়ের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করছে শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি। সেখানে বেপারিপাড়া এলাকার মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে পরীক্ষা করাতে গেলে নমুনা দিতেও যেমন নানা ঝামেলা, তেমনি ফলাফল পেতে দুই সপ্তাহ লাগছে। এতে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকছে। সেজন্য টাকা বেশি খরচ হলেও এখানে টেস্ট করাতে এসেছি। এদিকে, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করতে আসা জামালখান এলাকার বাসিন্দা মোমিনুল হক জানান, সরকারি ল্যাবগুলোতে চেষ্টা করেছিলাম। সেখানে ব্যবস্থাপনার নানা সংকট রয়েছে, জটিলতাও বিভিন্ন ধরনের। ফলাফল পেতে দেরি হয়। সেজন্য আমার স্ত্রীর নমুনা পরীক্ষার জন্য বেসকারি ল্যাবে দিলাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি ল্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া ফি নিয়ে সাধারণ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফলাফল দেয়ারও চেষ্টা করছি। অনেকে যারা আসতে পারছেন না তাদের নমুনা পরীক্ষার জন্য আমরা বাড়িতে গিয়েও নমুনা সংগ্রহ করে তাদের ফলাফল জানাচ্ছি। তবে ক্রমেই আমাদের এখানে করোনা পরীক্ষার চাপ বাড়ছে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সেখ মো. ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে সরকারি ল্যাবগুলোতে কিছুটা নমুনা জট রয়েছে। আমরা জট কমানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যে সরকারি ল্যাবে নমুনা জট কমবে। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ল্যাবসহ অন্যান্য ল্যাবে লোকবল সমস্যা সমাধান হলে নমুনা পরীক্ষা আরো বাড়ানো সম্ভব হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App