×

জাতীয়

এনআইডি সংশোধনে দুর্ভোগের শেষ নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২০, ০৯:৩৪ এএম

এনআইডি সংশোধনে দুর্ভোগের শেষ নেই

প্রতীকী ছবি

বীরাঙ্গনা মোছা. মনোয়ারা, মাধবপাশার সাতগাঁও-শ্রীমঙ্গলের বাসিন্দা। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট প্রকাশিত গেজেটের ১২৬ নম্বরে তার নাম বীরাঙ্গনা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তার এনআইডি কার্ডের সঙ্গে জন্ম সনদে ‘জন্ম তারিখ’ ভুল থাকায় দীর্ঘদিন ধরে তিনি সরকার প্রদত্ত ভাতা পাচ্ছেন না। ২০১৭ সালের ৩ মার্চ জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য প্রথা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে সংশোধনের আবেদন নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেন তিনি। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার জন্ম তারিখ সংশোধন না হওয়ায় তিনি বীরাঙ্গনা হয়েও সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ বিষয়ে মোছা. মনোয়ারা বলেন, ‘আমি এক গেজেটভুক্ত বীরাঙ্গনা, ২০১৭ সালে জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদন জমা দেই।’ তিন বছরে বেশ কয়েকবার নির্বাচনী কর্মকর্তা, ইউএনও থেকে জেলা প্রশাসক সবার কাছে গিয়ে হাতে-পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করলেও তার এনআইডি আজো সংশোধন হয়নি। আবার এনআইডি অণুুবিভাগের ডিজি, পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার আগরগাঁওয়ের অফিসে গেলেও দেখা করার অনুমতি মেলেনি। বীরাঙ্গনা হয়েও কারো কোনো সহযোগিতা তিনি পাচ্ছেন না। সরকারি কোনো সাহায্য সহানুভ‚তিও পান না। আজ স্বাধীনতার এত বছর পরেও রোগে শোকে মরণাপন্ন অবস্থায় রেললাইনের ঝুপড়িতে বাস করছেন তিনি। শুধু তিনিই নন, এনআইডি সংশোধনের বিষয়ে এমনি হাজারো গ্রাহক ভোগান্তিতে আছেন। যশোরের মনিরামপুরের মোহম্মদ নুরুজ্জামান। তার জন্ম ১৯৯৮ সালে, এসএসসি সার্টিফিকেট রয়েছে। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল ক্রমে তা দেখানো হয় ১৯৮৮ সাল। এই সংশোধনীর জন্য নিজ উপজেলায় আবেদন জমা দিয়েছেন ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধনীর জন্য দলিল হিসেবে দিয়েছেন এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট, জন্ম সনদ, পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র, ওয়ারিশ সনদ ও চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র। আবেদন জমা দেয়ার সময় কার্ড দেয়ার সম্ভাব্য তারিখ দেয়া হয় ওই সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। কিন্তু আবেদন জমা দেয়ার তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও তার আবেদনের অবস্থা কী এখনো তিনি জানেন না। কবে এই সংশোধিত কার্ড হাতে পাবেন সেই অপেক্ষায় আছেন তিনি। বিগত ২-৩ বছরে অন্তত শতাধিকবার উপজেলা অফিসে এবং ৫-৬ বার আগরগাঁওয়ে ইসির এনআইডি উইংয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার দপ্তরে ঘুরেও কারো কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি। সম্প্রতি করোনার মধ্যেও বিশেষ প্রয়োজন বিধায় খোঁজ নিতে সুদূর রাজশাহী থেকে ঢাকার আগরগাঁওয়ের অফিসে এসেছেন মোহম্মদ রফিক। নাম ও পিতার নামের সংশোধনীর জন্য কিন্তু দুদিন ঘুরেও কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলেনি বলে প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ জানান তিনি। এ রকম বহু গ্রাহক এনআইডির জন্ম তারিখ, নাম, বাবার, মায়ের নাম বা স্বামীর নাম ভুল বা সংশোধন, ঠিকানা পরিবর্তন ইত্যাদি সংশোধনের এমন ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন। আবার কেউ কেউ অর্থ দিয়ে ভিন্ন পথে এনআইডি সংশোধন করতে সমর্থ হয়েছেন বলেও জানান তিনি। ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, বীরাঙ্গনা মোছা. মনোয়ার ফাইলটি আমার টেবিলে আছে। আমি দেখছি এ বিষয়ে কি করা যায়। কোনো ভুল বা তথ্যে কোন অসংগতি রয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না তেমন কোনো অসংগতি নেই, বীরাঙ্গনার সার্টিফিকেট ও গেজেট আছে। তবে দেখি কি করা যায়। কেন ৩ বছরেও এটা সংশোধন সম্ভব হচ্ছে না তার কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। আবার হাজার হাজার মানুষ এনআইডির বিভিন্ন সংশোধন নিয়ে হয়রানি হচ্ছে, দিনের পর দিন ঘুরছেÑ এমন অভিেেযাগের বিষয়ে তিনি বলেন, নাগরিকরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয়, এ জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তিনি বলেন, আগে এনআইডির কাজ কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় ছিল। কিন্তু এখন নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা অফিস থেকে করা হচ্ছে। সেবাটা মানুষের দ্বারপ্রান্তে নেয়ার চেষ্টা করছি। হারানো আইডি মানুষ অনেক দ্রুত সময়ে পাচ্ছেন। কিন্তু সংশোধনীর বিষয়টি অনেক সংবেদনশীল। এটা প্রধান কার্যালয় থেকে করা হয়। দিনে শত শত আবেদন জমা হয়। সবগুলো খুব নিখুঁতভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। এর আগে এনআইডি নিয়ে অনেকেই অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করেছে। তাই আমরা এই বিষয়ে অনেকটা সতর্ক থাকি। দেখা যায়, আইডি সংশোধনের মাধ্যমে একজনের জমি আর একজন দখল করে নেয়। অনেক ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে। কিন্তু এখানে অর্থ লেনদেন বা যদি হয়রানির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাই তবে অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে ইসির যুগ্ম সচিব ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের পরিচালক (অপারেসন্স) মো. আবদুল বাতেন জানান, বর্তমানে করোনা সংক্রমণের জন্য ইসিতে রোস্টাভিত্তিতে এনআইডি বিভাগের কিছু অস্থায়ী কর্মী কোনো কোনো কর্মকর্তার অধীনে কাজ করছেন। তবে এত বেশি আবেদন যে সব সময়মতো দেখা অসম্ভব। কিছু কাগজপত্রেও অসংগতি থাকে। এর মধ্যেও আমরা যেসব আবেদন সংশোধনযোগ্য তা সংশোধন করছি। সে ফাইলগুলো অনলাইনের মাধ্যমে কর্মীরা সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলা অফিসে পাঠাচ্ছেন। আর যেগুলো জটিল বা ইনকুয়ারি করার প্রয়োজন সেগুলো দেরি হয়। তবে বহু ফাইল এখনো সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App