×

জাতীয়

অনলাইন ক্লাসের উপকারিতা নিয়ে সন্দিহান অভিভাবকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২০, ১০:৩২ এএম

অনলাইন ক্লাসের উপকারিতা নিয়ে সন্দিহান অভিভাবকরা

ফাইল ছবি

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কবে আবার স্কুল খুলবে সেবিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ কারো ধারণায় আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধের পরপরই অনলাইন ক্লাস চালু করেছে নামিদামি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তাতে শিক্ষার্থীর খুব একটা উপকৃত হচ্ছে বলে মনে করছেন না অভিভাবকরা। একদিকে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দেয়া নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা, অন্যদিকে অনলাইন ক্লাসের জন্য ইন্টারনেট খরচ বাড়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন অনেকেই। তবে শুধু যে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের ইন্টারনেট খরচ বেড়েছে, তা নয়। ইন্টারনেটে খরচ বেড়েছে শিক্ষকদেরও। সুভাষ দেব নামে এক কলেজশিক্ষক হিসাব করে জানান, অনলাইনে তাকে দিনে ৩টা ক্লাস নিতে হয়। এজন্য প্রতিদিন প্রায় এক জিবি ডাটা প্রয়োজন হয়। আগে ৫৯৯ টাকায় ১৫ জিবি আর ৩০০ মিনিটের প্যাকেজ পেতেন। বাজেট ঘোষণার পর একই টাকায় পাচ্ছেন ১০ জিবি আর ৩০০ মিনিট। ফলে তাকে মাসে দুবার ওই প্যাকেজ কিনতে হচ্ছে। অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়া এবং বেশি ইন্টারনেট কেনার কথা জানালে সংশ্লিষ্ট স্কুল থেকে সন্তানের প্রতি ‘বৈষম্য’ করা হবে, এমন শঙ্কা থেকে বহু অভিভাবক নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে চাননি। তারা বলছেন, অনলাইনে ক্লাস নেয়ার মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের থেকে বেতন আদায় করা। যে কারণে ‘নামেমাত্র’ ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়ে বেতন পরিশোধ করতে তাড়া দেয়া হয়। কিন্তু অনলাইন ক্লাসে অংশ নিলে যে অভিভাবকের খরচ বেড়ে যায়, সেবিষয়ে কেউ কথা বলেন না। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া রেজওয়ান বলেন, আমরা এপ্রিল থেকেই অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছি। ইউটিউব, ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে লেকচারগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের শিক্ষকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষকরা যেভাবে তাদের লেকচার দিচ্ছেন তাতে মনে হয় না আমার বাচ্চার বড় কোনো উপকার হবে। মাঝখান থেকে ইন্টারনেটে আমার অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। আইডিয়াল স্কুল বনশ্রী শাখার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, মে মাসের মাঝামাঝিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে। তারা স্কুলের নামে ফেসবুকে একটি আইডি খুলে দিনে ৩০ মিনিটের একটি ক্লাস নিয়ে থাকে। কিন্তু স্বল্প সময়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ পায় না। এমনকি তারা যে ক্যামেরা দিয়ে ক্লাস নেয় সেটিও স্পষ্ট না। শিক্ষকরা তাড়াহুড়ো করে কোনো একটা বিষয় পড়িয়ে চলে যায়। কোনো ছাত্র বুঝতে পারল কি, পারল না তা তারা দেখে না। ছাত্ররা এতে বেনিফিটেড হচ্ছে না। অনলাইনে ক্লাস নেয়ার পেছনে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মূল কারণ নয় মন্তব্য করে ওই অভিভাবক বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে বেতন আদায় করা। সেটাই তারা করছে। তবে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, আমাদের শিক্ষকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন যেন সবচেয়ে ভালো ক্লাসটা তারা দিতে পারেন। আমরা রুটিন করে দিয়েছি, সেই অনুসারে তারা প্রস্তুতি নিয়ে অনলাইনে ক্লাস করে যাচ্ছেন। এই সংকটকালে আমাদের জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের যতটুকু উপকারে আসে সেই কাজটাই করে যাচ্ছি। সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে শিক্ষার্থীর অভিভাবকের হোয়াটসঅ্যাপ আইডিতে ক্লাস রেকর্ড করে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারা একইভাবে প্রশ্ন পাঠিয়ে পরীক্ষাও নেয়। এই প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে একটা রেকর্ড পাঠায়, তারা বলছে এটা অনলাইন ক্লাস। এই ক্লাসে শিক্ষার্থী পড়াটা বুঝল কিনা তারা আর খবর নেয় না। কারণ শিক্ষার্থী কোনো ফিডব্যাক দিতে পারে না। এখন পরীক্ষা চলছে, সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তারা পরীক্ষার দিন রাত ৮টায় হোয়াটসঅ্যাপে দেয়, ৪০ মিনিট পর উত্তরপত্রের ছবি তুলে আবার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে হয়। এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হামিদা আলী বলেন, আমরা অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি, পড়া দিচ্ছি। আবার পরীক্ষাও নিচ্ছি। আমাদের শিক্ষকরা রুটিনমাফিক এসব ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছেন। যতটুকু সাধ্য আছে সেই অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। রাজধানীর আরেকটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিপুর হাইস্কুল এন্ড কলেজ বেসরকারি মোহনা টিভির মাধ্যমে প্রতিদিন সরাসরি ৩টি ক্লাস করে থাকে। এতে শিক্ষার্থীরা ততটা উপকৃত হচ্ছে না বলে অভিভাবকদের থেকে মন্তব্য এলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। মিরপুরের জামাল উদ্দিন নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, টেলিভিশনে ক্লাস দেয়া হচ্ছে ঠিকই কিন্তু এতে সন্তান মনোযোগী হয় না। গড়পড়তা ক্লাস নিয়ে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থী কতটা উপকৃত হবে সেটা একটা প্রশ্ন। কিন্তু ঠিকই বেতন পরিশোধের জন্য স্কুল থেকে ফোন করা হয়। মাসে মাসে বেতন পরিশোধ করছি। এদিকে অনলাইনে শিক্ষায় খরচ বেড়ে যাওয়ায় সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস চালু করা হয়েছিল। এটিও খুব একটা কাজে আসছে না। এ নিয়ে কয়েকদিন আগে একটি আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, ইতোমধ্যে একটি টোল ফ্রি লাইন (৩৩৩৬) চালুর কাজ শেষের দিকে, শিগগিরই সেটা চালু করা হবে। এই হটলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে কথা বলে কোথায় সমস্যা আছে, কোথায় বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে, তা নিয়ে কথা বলতে পারবে। তিনি বলেন, কমিউনিটি রেডিও ব্যবহারের বিষয়েও কাজ চলছে। একই সঙ্গে আমাদের প্রতিটি স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্যসেবা কেন্দ্র আছে, সেগুলোকে আমরা কাজে লাগাতে পারি। দীপু মনি বলেন, অনলাইন এডুকেশনের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা মাইন্ডসেট। এই মাইন্ডসেট বাধাকে দূর করতে হবে। সবাই এক রকম দক্ষ না হলেও চেষ্টা করলে সেই দক্ষতা অর্জন খুবই কষ্টসাধ্য বা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার নয়। মাধ্যমিকে ১০ লাখ শিক্ষার্থী টিভির ক্লাস দেখতে পারছে না এ তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, যাদের কাছে আমরা কোনোভাবে পৌঁছাতে পারছি না, তাদের ব্যাপারেও আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। কোনো একটা ডিজিটাল ডিভাইসে তাদের ইনপুট দেয় যায় কিনা সেই চেষ্টা চলছে। ফ্রি ইন্টারনেট পেলে অনলাইন ক্লাস চালু হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে : অনলাইন ক্লাস চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে ফ্রি ইন্টারনেট চেয়েছেন দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। উপাচার্যদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ইউজিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, সেশনজট থেকে বাঁচতে হলে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসই হতে পারে সবচেয়ে বড় আশা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আমরা যে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছি তাতে তারা ক্লাস চালু করতে বিনামূল্যে ইন্টারনেট চেয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App