×

মুক্তচিন্তা

অনলাইনে সম্ভাবনাময় কৃষিবাজার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২০, ০৬:৪০ পিএম

অনলাইনে সম্ভাবনাময় কৃষিবাজার

ফাইল ছবি

করোনার এ মহামারিকালে কৃষি প্রধান বাংলাদেশে জমে উঠেছে অনলাইন কৃষিবাজার। অনলাইন বাজার নতুন কিছু নয়। এমন কোনো নিত্যপণ্য নেই যা নিয়ে এখন অনলাইন বাজার হচ্ছে না। কাপড়-চোপড়, পোশাক-আশাক, শাড়ি-গহনা, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি, খাবার-দাবার ইত্যাদি এমন কোনো আইটেম নেই যা এখন অনলাইন বাজারের পণ্য নয়। এরই মধ্যে আমরা জানি দেশে ধান-চাল, শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ইত্যাদি কৃষিপণ্য প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদন মৌসুমে সারাদেশে লকডাউন অবস্থায় থাকায় সে সময় তা যথাযথ পরিবহনের অভাবে নামেমাত্র মূল্যে উৎপাদনকারী কৃষকরা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

কিন্তু তখনো কৃষিতে অনলাইন বাজার পদ্ধতি অতটা প্রচলন সৃষ্টি হয়নি। সেজন্য কাঁচা, জীবন্ত ও এসব পচনশীল কৃষিপণ্য অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়টি অনেকে ভয়ে করেনি। কিন্তু এবারের করোনাকালে এটি খুব ভালোভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে অনলাইনে পচনশীল, জীবন্ত কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণে তেমন কোনো সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে আমি আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা দিয়ে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় হলেও বর্তমানে আমি চাকরির সূত্রে ময়মনসিংহ শহরে থাকি।

রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ হলো আমের রাজধানী। আমি ফেসবুকে আমের অনলাইন বাজারের বিজ্ঞাপন দেখে ময়মনসিংহে আমার নিজের জন্য, আমার গ্রামের বাড়িতে এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছে সরাসরি রাজশাহীর আম অতি স্বল্প সময়ে ও খরচে পাঠাতে পেরেছি। অন্য সময় এসব মানুষের কাছে নিজে না গেলে হয়তো কখনো আম পাঠানোর কথা চিন্তাও করতাম না। কিন্তু এবারে আমি শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আম পাঠাতে পেরেছি। তেমনিভাবে তরমুজের মৌসুমে বরিশালের একটি তথ্যের ভিত্তিতে একইভাবে সহজেই বাজার করা সম্ভব হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের জন্য এটি আরো অনেক সহজ কাজ।

ঠিক তেমনিভাবে, যে কোনো কৃষিপণ্যই হোক না কেন, সেটি যদি জীবন্ত কিংবা পচনশীলও হয় তবুও তা অনলাইনে তার বাজারজাত করা সহজতর। যেমন- আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, কলা, জাম, জামরুল, পেয়ারা, মাল্টা, কমলাসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদি। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, ভেড়া, মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ ইত্যাদি প্রাণিজ প্রোটিনজাত পণ্য। বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি শাক-সবজি যা একস্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবহনের জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান তা বুকিংয়ের মাধ্যমে সরবরাহ করে থাকে। অর্থাৎ কিছু প্রতিষ্ঠান যারা সরাসরি পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের ব্যবসা পরিচালনা অব্যাহত রাখতে পারছে না সেখানে তারা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা অনলাইনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে সহজেই সে কাজটি করে চলেছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন উৎপাদক পর্যায়ে পণ্যটি পড়ে থাকতে হচ্ছে না। অপরদিকে ভোক্তারাও তাদের চাহিদাকৃত পণ্য সহজেই সরবরাহ পেয়ে যাচ্ছে। মাঝে এসব ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। করোনাকালে অনেক দুঃসময় আমরা অতিক্রম করছি। আর এর কশাঘাত থেকে আমরা নতুন নতুন কিছু বিষয় শিখেও নিচ্ছি, যা পরবর্তী জীবনে আমাদের অনেক কাজে আসবে। আগে যেসব বিষয় শুধু কাগজে-কলমে আলোচনায় ছিল এখন সেগুলোকে বাস্তবে রূপ দেয়ার সময় এসেছে। এগুলোর মাধ্যমে তাই আমরা ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের কঠিন সময় মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সামনের দিনে এগুলো তাই নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিতে পারে।

লেখক : কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App