×

জাতীয়

সড়ক-মহাসড়কে কৌশলে চলছে চাঁদাবাজি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২০, ০৯:৫১ এএম

সড়ক-মহাসড়কে কৌশলে চলছে চাঁদাবাজি

ফাইল ছবি

দেশের সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি চলছেই। চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ ও পরিবহন সংগঠনগুলোর নানা উদ্যোগ এবং অভিযানের মধ্যেও চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। বিভিন্ন সংগঠনের নামে-বেনামে চাঁদা তোলা হচ্ছে। তবে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদা তোলার পয়েন্টগুলো বদল হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর উত্তরবঙ্গের মহাসড়কের বিভিন্ন নতুন পয়েন্টে এখনো চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে জানা গেছে। চাঁদাবাজির সময় পুলিশ ইতোমধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে সড়ক পরিবহন সংগঠনের নেতারা দাবি করছেন পরিবহন সেক্টরের সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সব সংগঠন একমত হয়ে চাঁদা না তুলতে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছে। জানা গেছে, চাঁদাবাজি বন্ধে গত ২৯ মে আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের সব নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা আইজিপিকে অবৈধ চাঁদা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান। আইজিপি পরিবহনে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথাও পরিবহন নেতাদের জানিয়ে দেন। এরপর পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা আবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ আকারে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হয়। এসব সংগঠনের নেতারা জানান, সড়ক-মহাসড়ক, বাস-ট্রাক টার্মিনাল বা অন্য কোথাও কোনো ধরনের অবৈধ চাঁদা তোলা যাবে না। মালিক-শ্রমিক সংগঠনের সদস্য চাঁদা নিজ নিজ অফিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে। কোনো জেলা বা উপজেলার কোনো শাখা সংগঠনের উপকমিটিও সড়ক ও মহাসড়ক থেকে অর্থ আদায় করতে পারবে না। অন্যদিকে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ গত ১ জুন থেকে অভিযান শুরু করেছে। তবে এরপরও সড়কে চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। দেশের উত্তরবঙ্গের সড়ক-মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। এখনো এই জোনেই পরিবহন সেক্টরে সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে। ঢাকা থেকে রংপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাসকে যাত্রাপথে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ১ হাজার টাকা থেকে ১৮শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হচ্ছে বলে একজন বাসচালক জানিয়েছেন। বগুড়া ও রংপুর জোনের ভেতরে সবচেয়ে বেশি চাঁদা দিতে হয়। দেশের অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কেও চাঁদা তোলা হয়, তবে তা উত্তরবঙ্গের মতো এতটা উন্মুক্তভাবে হয় না। বগুড়া থেকে শুরু করে দিনাজপুর পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে চাঁদা নেয়ার জন্য সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের লোক বসে থাকে। ঢাকা-রংপুর রুটে চলাচলকারী স্বনামধন্য একটি পরিবহন কোম্পানির এক বাসচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুলিশের অভিযান শুরু হওয়ার পর চাঁদাবাজরা চাঁদাবাজির পয়েন্ট পরিবর্তন করেছে। আগের নির্দিষ্ট অবস্থানে না থেকে অন্য স্থানে চাঁদা আদায়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। আগে বাস থামিয়ে টাকা হাতে দিতে হতো। এখন টাকা কাগজে পেঁচিয়ে রাখা হয়। নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রমের সময় ছুঁড়ে মারতে হয়। সিন্ডিকেটের লোকজন সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ে যায়। রাজধানীতে চলাচলকারী প্রতিটি বাস-মিনিবাসকে দৈনিক গড়ে ১২শ থেকে ১৮শ টাকা, আবার কোথাও ২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয় বলে একাধিক চালক অভিযোগ করেছেন। চালকরা বলেন, পরিবহন নেতারা এবং পুলিশ যতই চাঁদা না দেয়ার কথা বলুক, তা আসলে কাগজে-কলমে। বাস্তবে চাঁদা না দিলে রাস্তায় গাড়ি চালানো যাবে না। লেগুনাকেও প্রতিদিন বিভিন্ন খাতে গড়ে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জানিয়েছেন, গত মাসের শেষ দিকে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ সড়ক ও পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধের উদ্যোগ নেন। এই বিষয়টি নিয়ে তিনি সড়ক ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। নেতারাও চাঁদাবাজি বন্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এরপর গত ১ জুন থেকে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ি থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়ের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান শুরু করে। গত ১৮ জুন পর্যন্ত পুলিশের অভিযানে ১১৪ জন গ্রেপ্তার এবং এসব ঘটনায় ৫১টি মামলা হয়েছে। সোহেল রানা আরো জানান, যানবাহনে সব ধরনের চাঁদাবাজি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এবং ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ভোরের কাগজকে বলেন, পরিবহন সেক্টরে অবৈধ চাঁদাবাজি হোক তা আমরাও চাই না। দীর্ঘদিন ধরে আমরা পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধে চেষ্টা চালিয়ে আসছি। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে আমরা নিজেরাও অপপ্রচারের সম্মুখীন হয়েছি। এখন যারা অবেধভাবে পরিবহন সেক্টর থেকে চাঁদা তুলছে তারা আমাদের সংগঠনের কেউ না। তাদের গ্রেপ্তার করা হোক। আমরা পরিবহন সেক্টরকে চাঁদাবাজি মুক্ত রাখার ব্যাপারে আশাবাদী। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জানান, পরিবহন মালিক-শ্রমিক একত্রে বসে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবৈধ চাঁদা না উঠানোর জন্য সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের সংগঠনের কেউ কোথাও চাঁদা তুলছে না। কেউ তুলে থাকলে তার দায় আমরা নেব না। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধের উদ্যোগ আরো আগে নেয়া হলে এই করোনা দুর্যোগের মধ্যে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি বন্ধ হলে কোনো কোম্পানিকেই অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাতায়াতের পরও লোকসান গুনতে হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App