×

জাতীয়

স্থবির সংসদীয় কমিটি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২০, ০৯:৪১ এএম

করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ভীতিতে জাতীয় সংসদের ৫০টি স্থায়ী কমিটির বৈঠক গত ৩ মাস ধরে নিয়মিত বসছে না। জাতীয় সংসদে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ৩৯টি এবং বিষয় বা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ১১টি স্থায়ী কমিটি আছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সিডিউল অনুযায়ী প্রতিটি কমিটির ন্যূনতম ১৬-২০টি করে বৈঠক করার কথা থাকলেও অধিকাংশ কমিটি তা করেনি। আবার চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় কমিটিগুলো বৈঠক করা থেকে বিরত থাকে। সংসদীয় কমিটিগুলোর কার্যক্রমের স্থবিরতায় ঝুলে আছে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা। ফলে বাড়ছে দুর্নীতি। বিশেষজ্ঞরা এমন মত দিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় গত বছরের ৩০ জানুয়ারি। শুরুর ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ৫০টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। দ্রæততার সঙ্গে কমিটি গঠিত হলেও কাজের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ কমিটির তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। মাসে একটি বা দুটি বৈঠক করার নিয়ম থাকলেও তা মানেনি বেশির ভাগ কমিটি। বছরে ১০টির অধিক বৈঠক করেছে মাত্র ১২টি কমিটি। আর বাকি ৩৮টি কমিটি ৫-৭টি করে বৈঠক করেছে। আর গত ৩ মাসে বৈঠক করেছে মাত্র ২টি কমিটি। গুরুত্বহীন মনে করে অনেক সময় সদস্যরা উপস্থিত না হওয়ায় কোরাম সংকটে অনেক বৈঠক হয় না। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। কমিটিগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি বন্ধ করা, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মীদের শাস্তির সুপারিশ ও শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং জবাবদিহি নিশ্চিতের গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। সে কারণে নিয়মিতভাবে মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর বিভিন্ন সমস্যা, দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনার আগেও রুটিন অনুযায়ী বৈঠক না করে তারা ঠিক করেনি। করোনাকালেও সব মন্ত্রণালয়ের কাজ চলছে। এ সময় অনেক মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। সে কারণে অনলাইনভিত্তিক বৈঠক করে কমিটিগুলোর দায়িত্ব পালন করা জরুরি ছিল। এটি না করে কমিটিগুলো দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত মাত্র ২টি সংসদীয় কমিটির বৈঠক হয়েছে। গত ২৮ জুন বিল পাসের উদ্দেশ্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক কমিটি তার সর্বশেষ ১১তম বৈঠক করে। তার আগে একই উদ্দেশ্যে এ কমিটির ১০তম বৈঠক বসে ২৪ জুন। তার আগে করোনা সংক্রমণে বিদেশ থেকে প্রবাসীদের আনা ও করণীয় বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির ১২তম বৈঠক হয় গত ১৭ মে। কিন্তু সবচেয়ে জরুরি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় করোনায় করণীয় বিষয়ে ৩ মাসে কোনো বৈঠক করেনি। সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ কমিটি ষষ্ঠ বৈঠক করে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ২৫টি বৈঠক করেছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ১৯টি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ১৩টি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ১৩টি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন ১৩টি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক ১১টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১১টি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১১টি, কৃষি মন্ত্রণালয় ১১টি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ১০টি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১০টি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির ১০টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকি ৩৮টি কমিটির মধ্যে অর্থ ৫টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ৫টি, শিক্ষা ৫টি, স্বাস্থ্য ৬টি, জনপ্রশাসন ৬টি, সড়ক ও সেতু ৬টি, ভ‚মি ৬টি, পরিকল্পনা ৭টি, যুব ও ক্রীড়া ৭টি, প্রতিরক্ষা ৮টি, সরকারি প্রতিষ্ঠান ৮টি ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি ৯টি বৈঠক করেছে। বাকিগুলো ৫-৬টি বৈঠকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ভোরের কাগজকে জানান, আমরা করোনা সংক্রমণের আগে অনেকগুলো বৈঠক করেছি। করোনার কারণে মার্চ মাস থেকে বৈঠক বন্ধ রয়েছে। আমি বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে খবরের পেপার কাটিংগুলো সংগ্রহ করছি। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে আমরা বৈঠক করব। প্রয়োজনে ভার্চুয়াল বৈঠক করব। কেননা, অনেক দুর্নীতি হচ্ছে সেগুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, গত মে মাসেও জরুরিভিত্তিতে আমরা একটা বৈঠক করেছি। তবে করোনার জন্য সবাই কিছুটা ভীত ও ঘরে থাকতে হচ্ছে। জুলাইয়ের ১৫-১৬ তারিখের দিকে আরো একটা বৈঠক করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, কমিটির বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে করোনাকালে আমরা খুব একটা বাইরে যাচ্ছি না। তবে চলতি মাসে একটা বৈঠক করার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে জানান, বর্তমানে করোনার কারণে অনেক কমিটির বৈঠক বন্ধ রয়েছে। তবে তার আগে কমিটিগুলো নিয়মিত বৈঠক করেছে। যদি কোনো কমিটি নিয়মিত বৈঠক না করে তাহলে জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী বলা আছে, স্পিকার কমিটির সচিবকে বৈঠক আহ্বানের নির্দেশ দিতে পারবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App