×

সারাদেশ

ভাঙনে দিশাহারা নদীপাড়ের মানুষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২০, ১০:২২ এএম

বন্যার পানি কমতে থাকায় গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর ঘোনাপাড়া পয়েন্টে সদ্য নির্মিত বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমলেও ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি আবারো অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। পানি বাড়া-কমার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের বেশ কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। এদিকে পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম। এতে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বসতভিটা। অপরদিকে জামালপুরে যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন উঁচু এলাকার লোকজন। তবে নিম্নাঞ্চলে পানি থাকায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না বানভাসিরা। এছাড়া লালমনিরহাটের তিস্তা, শেরপুরের ব্রহ্মপুত্র, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বানভাসি মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর গাইবান্ধা : বন্যার পানি কমতে থাকায় গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পরিবার ভাঙনকবলিত হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইতোমধ্যে যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনটি। এছাড়া ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে আশপাশের ২ শতাধিক বসতবাড়ি। ফলে ভাঙনকবলিত মানুষ দ্রুত তাদের বাড়িঘর সরিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে চরম হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি বাজার, নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা, ঈদগা মাঠ, একটি বিএস কোয়ার্টার, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ২টি জামে মসজিদ, ৩টি মোবাইল টাওয়ার ও একটি বাজার এখন মারাত্মকভাবে ভাঙনকবলিত। এছাড়া সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাথালিয়া, উত্তর সাথালিয়ার ফ্ল্যাড সেন্টার, গোবিন্দী, হাটবাড়ী, বাঁশহাটা, হাসিলকান্দি মৌজার প্রায় ২০০ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের শিকার এসব পরিবার অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ : পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এতে পদ্মা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের জনপদগুলো প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চলের বহু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। দ্রুত পানি আসার কারণে আমন ধানসহ বহু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এদিকে পদ্মা ভাঙনের কবলে পড়েছে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপাড়, হাইয়ারপাড়, বড়াইল, মূলচর, পাঁচগাঁও ও হাসাইলসহ ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বসতভিটা। সারা বছর পদ্মায় অবৈধ ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন, ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পদ্মা তীরে দ্রুত অবৈধ ড্রেজিং বন্ধ করার পাশাপাশি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করা হলে ভরা বর্ষায় পদ্মায় বিলীন হতে পারে পদ্মা তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রাম। টঙ্গিবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান জগলুল হাওলাদার ভ‚তু বলেন, নতুন করে নদীটা ভাঙনের প্রধান কারণ হলো অবৈধ ড্রেজিং আর পানি বৃদ্ধি। পাশাপাশি বালুভর্তি বাল্কহেড ও ট্রলারের ঢেউয়ের তোড়েও ভাঙছে। ভাঙনরোধে দীঘিরপাড় ও হাইয়ার পার এলাকাবাসী নিজস্ব অর্থায়নে বাঁধ নির্মাণ করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার বলেন, এলাকায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার অভিযান করে ড্রেজারের পাইপ এবং ড্রেজার জব্দ করেছি। অভিযুক্ত ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি কিংবা আরো বড় কেউ হলেও তাকে আমরা ছাড় দেব না। নদীভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমতে শুরু করলেও ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের বেশ কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর বাসস্থানের পাশাপাশি দেখা দিয়ে খাদ্য সংকটও। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, শনিবার বিকাল ৩টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২-৩ দিন এসব নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত থাকলেও আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তার পানি আবারো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে গত ১১ দিন ধরে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক বানভাসি মানুষের জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এসব প্লাবিত এলাকার কিছু কিছু পরিবারের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও অধিকাংশ পরিবারের ঘরবাড়ি এখনো পানির নিচে। এ অবস্থায় তাদের হাতে নেই কাজ, ঘরে নেই খাবার। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত। করোনা আর বন্যায় এই পরিবারগুলো খাদ্য সংকটে পড়েছে। আমি সরকারিভাবে মাত্র ৩০০ প্যাকেট খাদ্য সহায়তা পেয়েছি, যা মাত্র ৩০০ পরিবারকে দেয়া সম্ভব হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বন্যাদুর্গত এলাকায় শিশু ও গবাদিপশুর খাদ্য বিতরণ করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, জেলার বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ২৭টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তবে বাস্তবে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে কোথাও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখা মেলেনি। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে প্রথম পর্যায়ে ৩০২ টন চাল ও ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকার শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে ২০০ টন চাল, ২ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। দুয়েক দিনের মধ্যে বন্যাকবলিত এলাকার শিশু ও গবাদিপশুর খাবারের বরাদ্দ পাওয়া যাবে। নাগরপুর (টাঙ্গাইল) : নাগরপুরে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে শনিবার সকালে উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর ঘোনাপাড়া পয়েন্টে সদ্য নির্মিত বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বারপাখিয়া থেকে ঘোনাপাড়া পর্যন্ত ধলেশ্বরী নদীতে ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন মাস আগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। বেড়িবাঁধটি মূলত ঘোনাপাড়াসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাকে ধলেশ্বরী নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য নির্মাণ করা হয়। গত কয়েক দিনে ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শনিবার সকালে নির্মিত বেড়িবাঁধ ভেঙে বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চলের তিল, পাটসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে নাগরপুরের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি এসব মানুষ অভিযোগের সুরে বলেন, নদীর ভাঙন ও প্লাবন থেকে বাঁচতে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও তা আমাদের কোনো কাজেই এলো না। এদিকে হঠাৎ করে পানি ঢুকে পড়ায় গবাদিপশু ও ফসল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি এসব মানুষ। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে বেড়িবাঁধের নিচের অংশের ব্লকগুলো সরে গিয়ে এবং নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঁধের উপর দিয়ে উঠে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। এছাড়া মাটির তৈরি আরো একটি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমরা আপদকালীন বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশে পাথরের ব্লক ফেলে মেরামত করার উদ্যোগ নিয়েছি। জামালপুর : যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন উঁচু এলাকার লোকজন। তবে নিম্নাঞ্চলে পানি থাকায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না বানভাসিরা। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শনিবার সকালে যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, এ পর্যন্ত যে ত্রাণ বরাদ্দ হয়েছে তা পর্যায়ক্রমে বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এতে বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমেছে বলে জানান তিনি। লালমনিরহাট : পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটর, যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সে.মি.) বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার ভোর থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ৩ ঘণ্টা পরে কিছুটা কমে সকাল ৯টায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি দেখে তিস্তা পাড়ের মানুষ বড় কোনো বন্যার শঙ্কা করলেও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি তিস্তায় বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে হঠাৎ তিস্তায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু-পাখি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম বলেন, এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানিবন্দি পরিবারগুলোর তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে বলা হয়েছে। তালিকা পেলে বরাদ্দ নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানিপ্রবাহ শুক্রবার রাতে থেকে বাড়তে থাকে। শনিবার দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সব জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। তবে ভারতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় শনিবার বিকালের মধ্যে তিস্তার পানিপ্রবাহ কমে যেতে পারে। রাজবাড়ী : জেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ২ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করছে। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বাদাম, তিলসহ বিভিন্ন জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। শেরপুর : শেরপুরে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কুলুরচর-বেপারিপাড়া গ্রামের শতাধিক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এ অবস্থায় প্রায় ৫০টি পরিবারের ২ শতাধিক মানুষ পার্শ্ববর্তী জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ এবং রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। কুলুরচর-বেপারিপাড়া এলাকার ইউপি সদস্য জাফর মিয়া বলেন, গত ১০ দিন ধরে পানি প্রবেশ করায় কুলুরচর-বেপারিপাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। বাড়িঘরে পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকেই বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সেখানে মানবেতর অবস্থায় রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য জরুরি খাদ্য ও ওষুধ সহায়তা দরকার। এদিকে শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, ব্রহ্মপুত্র ও দশআনী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী ৬নং চর, ৭নং চর ও পয়স্তিরচর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক গোলাম মোস্তফা জানান, বন্যা আর উজান থেকে আসা ঢলে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শেরপুর ব্রহ্মপুত্র সেতু পয়েন্টে গত কয়েক দিন ধরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে তা এখন বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন জানান, কুলুরচর-বেপারিপাড়ার নিচু এলাকার কিছু পরিবারের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য কিছু ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ করে তা সুবিধাজনক সময়ে বিতরণ করার জন্য চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App