×

জাতীয়

প্রবেশ ও বের হতে নানা অজুহাত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২০, ১০:০৬ এএম

প্রবেশ ও বের হতে নানা অজুহাত

লকডাউন। ফাইল ছবি

টানা ২১ দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড বা ওয়ারীর একটি অংশে। গতকাল শনিবার ভোর ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হয়। ফার্মেসি ও সুপার শপ ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। প্রায় প্রতিটি বাড়ির প্রধান ফটকও ছিল বন্ধ। শুধু কাঁচা সবজি বিক্রির জন্য দেখা গেছে ভ্যান সার্ভিস। এছাড়া লকডাউন এলাকার ভেতরে দেখা গেছে একেবারেই সুনশান নীরবতা। তবে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে দেখা গেছে অব্যবস্থাপনা ও সাধারণ মানুষের ভিড়। নানা অজুহাতে লকডাউন এলাকায় প্রবেশ ও বের হতে দেখা গেছে কিছু মানুষকে। তারা মানতে চান না নিয়ম-কানুন। কেউ কেউ স্বেচ্ছাসেবক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছেন। সিটি করপোরেশন বলছে, তাদের কোনো অব্যবস্থাপনা নেই। প্রথম দিন সামান্য কিছু ত্রু টি-বিচ্যুতি থাকলেও পরবর্তী সময় সেগুলোও থাকবে না। সরেজমিন ওয়ারীর সুমিজ হট কেকের সামনের রাস্তায় দেখা যায়, দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এলাকার জনসাধারণকে লকডাউন মানাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কারণে অকারণে এলাকাবাসী লকডাউন এলাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের লকডাউন মানানোর চেষ্টা করেন। এর মধ্যেও অনেকেই নানা অজুহাত দেখিয়ে এলাকায় প্রবেশ করেন। কেউ কেউ নানা তর্কেও জড়ান। বলছেন, বের হতে না পারলে আমরা খাব কী? কেননা, ওয়ারীতে পরিজন নিয়ে থাকলেও, কাজের সন্ধানে তাদের বাইরেই যেতে হয়। আবার কেউ কেউ সুস্থ মানুষের জন্য পাসের ব্যবস্থা করারও দাবি তুলেন। কেউ কেউ আবার স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ করারও অভিযোগ করেছেন। দক্ষিণ মোহসুন্দির বাসিন্দা রাব্বানী জানান, তার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে তাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। কিন্তু এখন বের হতে না পারলে তো সমস্যা। গতকাল তিনি বাসা থেকে বের হলে টিপু সুলতান রোডে স্বেচ্ছাবেকরা তাকে বাধা দেয়। তাদের সমস্যার কথা খুলে বললেও তারা শুনতে চান না। উল্টো উগ্র আচরণ করেন। সুমন নামের এক ব্যক্তি জানান, নিউমার্কেট এলাকায় তার ব্যবসা আছে। এটা দিয়েই তাকে চলতে হয়। এমনিতেই ৪ মাস ধরে ব্যবসা নেই। এখন কিছুটা চললেও ওয়ারী লকডাউন হওয়ায় বাসা থেকে তিনি বের হতে পারছেন না। এই ব্যক্তির চাওয়া যারা সুস্থ আছেন, একেবারেই বের না হলেই চলে না এ রকম ব্যক্তিদের পরীক্ষা করে তাদের জন্য আলাদা পাসের ব্যবস্থা করা হোক। যাতে তারা চলাফেরা করতে পারেন। ওয়ারীর সুমিজ হট কেকের সামনের প্রবেশপথে গিয়ে দেখা গেছে, কারণে-অকারণেই সাধারণ মানুষ এলাকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন। তারা বলছেন, এই এলাকায় তাদের অনেকেরই ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এজন্য তারা লকডাউন চান না। এদিকে বেলা সোয়া ১১টায় লকডাউন এলাকা পরিদর্শনে আসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক। এ সময় তিনি প্রথমে ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থিত কন্ট্রোল রুমে গিয়ে লকডাউন ব্যবস্থাপনার সার্বিক চিত্র দেখেন। পরে এলাকার অধিকাংশ সড়ক ঘুরে ঘুরে দেখেন। কথা বলেন স্থানীয় বাড়ির মালিক, ওষুধের দোকানি ও ভ্যান সার্ভিসের মাধ্যমে সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গেও। এ সময় এলাকার প্রতিটি সড়কে নীরবতা দেখা গেছে। পরিদর্শন শেষে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বলেন, আমাদের কোথাও কোনো গ্যাপ নেই। এলাকায় ই-কমার্স রয়েছে, ভ্যান সার্ভিস রয়েছে, তারা বিভিন্ন খাবার নিয়ে ভেতরে অবস্থান করছে। ওষুধের ফার্মেসিগুলো খোলা রয়েছে। আমাদের ২০০ স্বেচ্ছাসেবী ৩ শিফটে কাজ করছে। এলাকায় করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখানে ২ জন ডাক্তার রয়েছেন। তারা করোনায় আক্রান্ত ৪৬ জন রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করছেন। তাদের চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছেন। ওয়ারীর র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিটে অবস্থিত ওয়ারী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে করোনার নমুনা সংগ্রহ বুথ। সেখানে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রাখা হয়েছে ২টি অ্যাম্বুলেন্সও। এছাড়া কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় রয়েছেন ২ জন ডাক্তারও। তারা রোগীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি। স্থানীয় লোকজন লকডাউন অমান্য করার চেষ্টা করছেন এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কী ব্যবস্থা রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে এমদাদুল হক বলেন, ‘লকডাউন হবে কি হবে না এটা আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নয়, সরকার এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমরা শুধু সেটা বাস্তবায়ন করছি। স্থানীয় লোকজন যদি মনে করেন লকডাউন করা ঠিক হয়নি, এটা আমাদের বিষয় নয় এটা তাদের বিষয়। সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেটা অমান্য করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App